কাশ্মীরে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হচ্ছে, জম্মুতে প্রত্যাহার
ভারতের জম্মুতে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে কাশ্মীরে জনসাধারণের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা কাল বৃহস্পতিবার ভারতের স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনের পর থেকে শিথিল করা হবে। এ সময়ে কাশ্মীরে টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্নই থাকবে। জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন এ তথ্য জানিয়েছে বলে আজ বুধবার বার্তা সংস্থা এএফপি এবং হিন্দুস্থান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে।
এএফপি জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাশ্মীরের গভর্নর সত্যপাল মালিক সাধারণের চলাচল শিথিল করা হবে বলে জানান। তবে টেলিযোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্নই থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা শত্রুর হাতে এ যন্ত্র তুলে দিতে পারি না। এক সপ্তাহ বা ১০ দিনে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে এবং ক্রমান্বয়ে আমরা সংযোগ চালু করে দেব।’
হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, আজ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এআইজি) মুনির খান বলেছেন, জম্মুর ওপর থেকে বিধিনিষেধ সম্পূর্ণ তুলে নেওয়া হয়েছে। আর কাশ্মীরের বিধিনিষেধ ধীরে ধীরে তুলে নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরে পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কারও গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। রাবার বুলেটে অল্প কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এর আগে গতকাল জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন জানিয়েছিল, জম্মু ও কাশ্মীরের বিধিনিষেধ ধাপে ধাপে তুলে নেওয়া হবে।
৪ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ করার ঘোষণা দেয় বিজেপি সরকার। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে দ্বিখণ্ডিত করা হয়। জম্মু, কাশ্মীর এবং লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করা হয়।
কাশ্মীরের মর্যাদা বাতিলের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভের আশঙ্কায় সরকার টেলিযোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে এবং কারফিউ জারি করে। প্রধান শহর শ্রীনগর ও এর আশপাশের শহর ও গ্রামে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়। তবে কারফিউ থাকলেও সেখানে বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে চলেছে। কাশ্মীরের বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে, গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর আট হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। তবে গতকাল ভারতীয় সরকার প্রথমবারের মতো সংঘর্ষের কথা স্বীকার করে এর জন্য ‘দুর্বৃত্তদের’ দায়ী করে।
এদিকে কাশ্মীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে কেন্দ্রীয় সরকারকে সময় দিতে বলেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। কাশ্মীর নিয়ে তাড়াহুড়ো না করার পরামর্শ দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। বিচারপতি অরুণ মিশ্রের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের একটি বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে আগামী দুই সপ্তাহের জন্য এই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন আদালত।
কাশ্মীরের ১৪৪ ধারা তুলে নিতে ও জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন একজন সমাজকর্মী। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সর্বোচ্চ আদালত বলেন, প্রাণের মূল্যে জোর করে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানোর চেষ্টা করা যাবে না। আমরা সবাই চাই কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। কিন্তু রাতারাতি কিছু হওয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সরকারকে সময় দিতে হবে।’