বেঙ্গলি ইন্টারন্যাশনাল চ্যারিটি‘র সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অর্থ লোপাটের অভিযোগে সংবাদ সন্মেলন
লণ্ডন, যুক্তরাজ্য: যুক্তরাজ্যের অন্যতম প্রাচীনতম চ্যারিটি সংস্থা বেঙ্গলি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক চেয়ারম্যান মিসেস খাদিজা সুলতানা আলীর বিরুদ্ধে সংগঠনের এগারো হাজার সাত শত একাত্তর পাউন্ড লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটির লেইটনের ২৪২ ফ্রান্সিস রোডে একটি নিজস্ব ভবন রয়েছে। যার নিচ তলায় ৮০ জন লোকের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন অডিটোরিয়াম এবং দোতলায় ৩ রুমের ফ্লাট আছে।
জানা গেছে, এ অভিযোগ ধামাচাপা দিতে একটি রাজনৈতিক মহলের ছত্রছায়ায় মেয়াদ উত্তীর্ণের আগেই সংগঠনের নতুন কমিটি গঠনের পথে হাটছে একটি মহল। এ দিকে অর্থনৈতিক অনিয়মের চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য চ্যারিটি কমিশনকে জানালে তাদের নির্দেশে মেট্রোপলিটন পুলিশ দপ্তরে ২৪ জুলাই ২০২৩ একটি মামলা দায়ের করা হয়। দায়েরকৃত মামলা নাম্বার ৪৯১৫০৪৬/২৩।
গত ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বেঙ্গলি ইন্টারন্যাশনালের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ শওকত আলী তালুকদার। সংবাদ সম্মেলনে বেঙ্গলি ইন্টারন্যাশনাল চ্যারিটি সংস্থার পক্ষ থেকে আরো উপস্থিত ছিলেন জেনি আনসার ও হালিদা তাহমিনা।
সংবাদ সম্মেলনে দেয়া লিখিত বক্তব্য ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ শওকত আলী তালুকদার বলেন, আমি মোঃ শওকত আলী তালুকদার, ২০১৯ সালের মার্চ মাস থেকে বেঙ্গলি ইন্টারন্যাশনাল চ্যারিটি সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্বরত। লেইটনের ২৪২ ফ্রান্সিস রোডে এই সংস্থাটির একটি নিজস্ব ভবন আছে। যার নিচ তলায় ৮০ জন লোকের অডিটোরিয়াম এবং দোতলায় ৩ রুমের ফ্লাট আছে। প্রতি মাসে যেখান থেকে ১২০০ পাউন্ড ভাড়া আসে। এই মুহূর্তে এই সংস্থাটি চরম আর্থিক এবং বাবস্হাপনা সংকটে পতিত। আমি এবং আমার মিসেস হালিদা তাহমিনা ২০১০ সালে সাধারণ সদস্য হিসাবে এই সংস্থায় যোগদান করি। আমার মিসেস বাংলা শিক্ষক এবং আমি ভাষা গবেষক হিসাবে কাজ করি। সংস্থাটি পরিচালনার জন্য ১১-১৪ সদস্যের একটি কমিটি আছে। এই কমিটির মধ্যে প্রধান ৩ জনকে ট্রাস্টি বলা হয়। যারা চেয়ারম্যান, ভাইস- চেয়ারম্যান এবং কোষাধ্যক্ষ হিসাবে পরিচিত। প্রতি ২ বছর পরপর সদস্যদের বুঝাপড়া ও এজিএম’র মাধ্যমে পরিচালনা পরিষদ নির্বাচিত হয়। আমার মিসেস ২০১৭ সালে পরিচালনা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়। ২০১৯ সালে আমি পরিচালনা পরিষদের সদস্য এবং ভাইস- চেয়ারম্যান(ট্রাস্টি) নির্বাচিত হই। সংবিধান অনুযায়ী ৩জন ট্রাস্টির যৌথ স্বাক্ষরে ব্যাংক হিসাব খোলা হবে এবং যে কোন ২জনের স্বাক্ষরে অর্থ লেনদেন হবে। ২০২০ সালের মার্চ মাসের এজিএমএ প্রশ্ন ওঠে ”কেন গত এক বছরের মধ্যে আমাকে ব্যাংকের স্বাক্ষরকারী হিসাবে নেওয়া হয়নি এবং কেন শুধু ২জন (চেয়ার ও কোষাদক্ষরের) মাধ্যমে লেনদেন হচ্ছে।
২০২০ সালের মার্চ মাসেরএজিএম’র পর থেকে কোভিড- ১৯ শুরু হলে সংস্থাটির সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। লকডাউনে লন্ডনের প্রায় সংস্থা আর্থিক অনুদান পেলেও আবেদন করা সত্ত্বেও বিআই কোনো অনুদান পায়নি। ফলে সংস্থাটি বড় ধরণের আর্থিক সংকটে পড়ে। ২০২০ সালের আগস্ট মাসে সংস্থার চেয়ারম্যান মিসেস খাদিজা সুলতানা আলী আমাকে টেলিফোনে জানালেন যে, ব্যাংকে জমানো সব অর্থ নিঃশেষ হয়ে গেছে পরবর্তী মাসের ইউটিলিটি বিল পরিশোধের জন্য কোনো অর্থ তার হাতে বা ব্যাংকে নাই। তাই, অর্থ সংস্থানের জন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে আমাকে নির্দেশনা দিলেন। মিসেস সুলতানা আলীর স্বামী জনাব মোহাম্মদ আলী আমাকে জানালেন যে, পূর্ববর্তী চেয়ারম্যানের আমলে বিআই ভবনের দোতলা ফ্লাট কনভার্সন করে ভাড়া দেওয়ার উদ্দোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনভার্সনের জন্য প্রয়োজনীয় ২০/২৫ হাজার পাউন্ড জোগাড় করতে না পারায় কাজটি হয়নি। এখন অর্থ জোগাড় করতে পারলে, দোতলাটি কনভার্সন করে ভাড়া দিলে আর্থিক সংকট অচিরেই সুরাহা হবে। অর্থ সংস্থানের জন্য লোকডাউন উপেক্ষা করে প্রায় সমস্ত পরিচালনা পরিষদের উপস্থিতিতে সেপ্টেম্বর ২০২০এ একটি সভার আয়োজন করেছিলাম। সভায় সর্ব সাকুল্যে ২০০০ ( দুই হাজার পাউন্ডের শর্তবিহীন ঋণ পাওয়ার নিশ্চয়তা পাই) এবং সর্বনিম্ম ১২,৯৯০ (বার হাজার নয়শত নব্বই) এবং ১৩,০০০ (তেরো হাজার পাউন্ডে) ফ্লাট কনভার্সনের দুটি দরপত্র পাই। ফ্লাট কর্ভাসনের জন্য প্রয়োজনীয় বাকী অর্থ আমি ঋণ হিসাবে দিবো এই নিশ্চয়ওতায় সর্বনিন্ম দরদাতা হাসান ব্রাদার্সকে ফ্লাট কনভার্সনের নির্দেশ দেওয়া হয়। হাসান ব্রাদার্স নির্মাণ কার শুরু করার পর আলাদা গ্যাস বয়লার লাগানোর জন্য আরো ২০০০ ( দুই হাজার পাউন্ড যোগ করা হয়) সর্ব মোট ১৪,৯৯০ পাউন্ডের বিনিময় হাসান ব্রাদার্স নির্মাণ কাজ শেষ করে ডিসেম্বর ২০২০এ ফ্লাট হস্তান্তর করেন।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে কোষাধ্যক্ষের সুপারিশে এবং চেয়ারম্যানের নির্দেশে আইডিয়াল হোম লিমিটেড এর কাছে প্রতি মাসে ১১০০ পাউন্ডএ ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেই এবং প্রথম মাসের ভাড়া হিসাবে ১১০০ পাউন্ড গ্রহণ করি। চেয়ারম্যান সুলতানা আলীর সংগে আমার কথাছিলো ফ্লাট কনভার্সনের জন্য ঋণ দেওয়া ১৫,০০০/ পাউন্ড পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত ভাড়ার অর্থ আমি গ্রহণ করবো। অতঃপর বিআই ভাড়ার অর্থ গ্রহণ করবে। কিন্তু ফেব্রুয়ারী মাসে ফ্ল্যাটের ভাড়া চাইতে গেলে আইডিয়াল হোম লিমিটেড এর মালিক মিঃ হোসাইন আমাকে জানান যে, চেয়ারম্যান সুলতানা আলী প্রতি মাসের ভাড়া তার কাছে দিতে বলেছেন। আমি বিষয়টিকে খুব ব্যথিত হয়েছিলাম, কিন্তু কিছূই বলিনি। মার্চ মাসে সুলতানা আলী আমাকে ৯০০ পাউন্ড দিয়েছেন। মিসেস সুলতানা আলীর সংগে আলোচনাক্রমে মে মাস থেকে ব্যবহার করবে এবং মাসে ১০০০ পাউন্ড ভাড়া দিবে এমন একটি সাময়িক মৌখিক চুক্তিতে একজনকে নিচতলা ভাড়া দিয়ে এপ্রিল মাসের ২৭ তারিখে ১০০০ পাউন্ড অগ্রিম গ্রহণ করি। ঐদিন সন্ধ্যায় মিসেস আলী আমাকে বাসায় ডেকে নিয়ে টাকা গ্রহণের বিষয়টি তার একটি খাতায় আমার হাত দিয়ে লিখিয়ে রাখেন। অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই ভাড়া থেকে আমি ৬০০০ (ছয় হাজার) পাউন্ড ভাড়া হিসাবে গ্রহণ করি। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত আমি ১২,০০০ পাউন্ড (বারো হাজার পাউন্ড) পেয়েছি। এই ঋণের ৩০০০/ পাউন্ড এখনো আমি পাওনা আছি। বিআই’র ব্যাংক একাউন্ট না থাকায় বিভিন্ন সময় আমি আমার একাউন্ট থেকে প্রায় ৭হাজার পাউন্ড উটিলিটি বিল পরিশোধ করি, যেমনঃ বিজিনেস রেট, ইন্সুরেন্স প্রিমিয়াম, গ্যাস লাইন নির্মাণ ইত্যাদি। এই খাতে আমার ১০২৯/(এক হাজার উনত্রিশ) পাউন্ড পাওনা আছি।
গত দুই বছরে বেশ কয়েকবার আমি সুলতানা আলীকে হিসাবগুলি আপটুডেট করতে বলি এবং এই বছরের এপ্রিল মাসে তার বাসায় তার কিছু নিকটস্থ আত্মীয় বিআই’র ২জন মেম্বারের উপস্থিতিতে শালিস বসাই। শালিসদের সামনে মিসেস আলী অনতিবিলম্বে আমার পাওনা পরিশোধ, কোভিড – ১৯র কারণে ২০২১ সালের এজিএম না করা কার্যকরী কমিটি নবায়ন করা এবং বিআই’র হিসাব আপটুডেট করার আশ্বাস দেন। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরের ৪ঠা জুন, বিআই সেন্টারে বর্তমান কালের ১২জন সদস্যের মধ্যে ১১জন উপস্থিত হন এবং জনাব আব্দুল হালিম চৌধুরীর প্রস্তাবনায় ও মিসেস জেনি আনসারীর প্রস্তাব গ্রহণে মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমান কমিটিকে ২০২৫ সনের মার্চ পর্যন্ত বলবৎ করা হয়। ঐ মিটিংএ সুলতানা আলী স্বাস্থগত কারণে পদত্যাগের প্রস্তাব দেয় এবং আমাকে দায়িত্ব প্রদান করেন। অতঃপর,সুলতানা আলী গত দুই বছরের হাতে লেখা হিসাব দাখিল করেন। ঐ হিসাবপত্রে সর্বমোট ৪১,০০০ (একচল্লিশ হাজার পাউন্ড আয়) এবং ৪১,৬৮৬ (একচল্লিশ হাজার ছয়শত ছিয়াশি) পাউন্ড খরচ দেখানো হয়। এর মধ্যে, মিসেস আলীর নামে ৬,২৬১ এবং তার হাসব্যান্ড মোহাম্মদ আলীর নামে ৪,৫১০, সর্বমোট ১১,৭৭১ (এগারো হাজার সাতশত একাত্তর) পাউন্ড নিয়ম বহিৰ্ভূত খরচ দেখানো হয়েছে। হিসাবটি কমিটি কর্তৃক গৃহীত না হওয়ায়, সংশোধিত হিসাব পুনরায় দাখিল করতে বলা হয়।
গত ১৮/০৬/২০২৩ তারিখে তিনি একটি সংশোধিত হিসাব পত্র দাখিল করেন, যেখানে তিনি এবং তার স্বামীর নামে ১১,০০০ (এগারো হাজার পাউন্ড) অগ্রহণযোগ্য খরচ দেখান। ইতিমধ্যে ১২ই জুন তিনি লিখিতভাবে কমিটির কাছে পদত্যাগ পত্র দাখিল করেন। কিন্তু তার ১৮ তারিখের হিসাবটিও কমিটি কর্তৃক গৃহীত না হওয়ায় তিনি ১৯সে জুন তার পদত্যাগ পত্রটি প্রত্যাহার করেন এবং কমিটি সদস্যদের একটি অংশকে সংগঠিত করে (আর্থিক দায়মুক্তি পাওয়ার আশ্বাসে আমাকে বাদ দিয়ে জনাব জামাল খানের ছত্রছায়ায় জনাব লুৎফর রহমান সায়েদ এর বাসায় ১৬ই জুলাই ২০২৩, একটি নুতন কমিটি গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করেন। অথচ বিআই’র সংবিধানের আর্টিকেল নং ৪.১২.১ (c) বলা হয়েছে – কমিটি মেম্বারের পদ খালি হয়ে যাবে লিখিতভাবে পদত্যাগ করলে, সেখানে পদত্যাগ গ্রহণ করা বা না করা অথবা প্রত্যাহার করার কোনো সুযোগ নেই। এই ধারার ৪.১২.১ (f) বলা হয়েছে – কোনো আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়ালে মেম্বারের পদ খালি হয়ে যাবে। এই অবস্থায় সুলতানা আলী চেয়ারম্যানের পদ দখলে রেখে নুতন কমিটি গঠন করার এখতিয়ার নাই। তার আর্থিক কেলেঙ্কারির দায় মুক্তি দেওয়ার অধিকার কোনো সদস্যদের নেই।
গত ১৪ই অক্টোবর ২০২৩ ইং তারিখে মিসেস সুলতানা আলীর স্বাক্ষরে নুতন কমিটি ঘঠন করার লক্ষ্যে আগামী ২৯শে অক্টোবর বেলা ৩টায় বিআই সেন্টারে AGM এর আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে, বিদ্যুৎ নেই, ছাদ থেকে পানি পড়ে এবং পাবলিক লিয়াবিলিটি ইন্সুরেন্স নাই। এমন অবস্থায় আহ্ববানকৃত AGM স্থগিত করে মিসেস সুলতানা আলীর কাছ থেকে অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গকে বিশেষ অনুরোধ করছি। এবং আমার পাওনা ৪০২৯ পাউন্ড পরিষদ করার জন্য কোষাধ্যক্ষকে অনুরোধ করছি। প্রেস বিজ্ঞপ্তি