সম্পাদকীয়

ভারতের চাপে সেনাবাহিনী!

সম্প্রতি দিল্লীর  ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ পত্রিকায় “পোল-বাউন্ড বাংলাদেশ ইজ অ্যাট ইনফ্লেকশন পয়েন্ট” শিরোনামে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ-এর সহযোগী অধ্যাপক ‘অভিনাষ পালিওয়াল’ এর একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে নির্বাচন অভিমুখী বাংলাদেশে ঠিক কী পরিস্থিতি ঘটলে সেনাপ্রধান এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ হস্তক্ষেপ করার কথা বিবেচনা করতে পারেন- এই প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে তিনি কিছু অপ্রিয় সত্য উচ্চারণ করেছেন। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে যে বিষয়টি খুব ভালোভাবে জানা নেই তা হলো সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে গিয়েছিল ভারতের চাপে। ২০০৯ সালে যখন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন উদ্দিন আহমেদকে তার অধীনস্থ কর্মকর্তারা বিডিআর বিদ্রোহ দমনে গুলি চালানোর নির্দেশ দিতে চাপ দিচ্ছিলেন, ভারত তখন সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি দিয়েছিল। নয়া দিল্লি তখন হাসিনার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিল এবং মঈনের নেপোলিয়ানসম উচ্চাবিলাস নিয়ে অনিশ্চিত ছিল। আর ভারতের হুমকি কেবল নিছক হুমকি ছিল না’! তিনি আরও লিখেছেন, ‘ভারতের কারণে হাসিনা রাজনৈতিকভাবে তখন পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছিলেন এবং সামরিক বাহিনীর চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পেরেছিলেন। এরপর থেকে তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি’।

সেদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং রেপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বিডিআর সদর দপ্তরের আশপাশে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছিলো। রাস্তায় ট্যাংকগুলো নামিয়ে সেনাবাহিনী চূড়ান্ত হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। প্যারাট্রুপস ও কমান্ডো প্রস্তুত ছিল। তবে ভারতের সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকির কারণে তাঁরা অভিযান করতে পারেননি। যাক, দেরিতে হলেও প্রকৃত সত্যটা জানা গেলো। পিলখানায় সেদিনের এত বড় একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা যে গুটিকয়েক এডিএ, জেসিও, নায়েক কিংবা হাবিলদারের নেতৃত্বে কিছৃতেই সংঘটিত করা সম্ভব ছিল না, এই সত্যটা সামনে এলো। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ২৫ ফেব্রুয়ারির এ পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছিলো। খুব চতুরতার সঙ্গে পিলখানার ঘটনাটি তারা সংঘটিত করেছিলো।

এখন প্রশ্ন হলো একমাত্র হাসিনার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হওয়া ছাড়া ভারতের সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকির পেছনে নয়া দিল্লির আর কী কী স্বার্থ ছিলো? খুনিদের রক্ষা করাই কী তাদের উদ্দেশ্য ছিলো?

নাকি বিশেষ কিছু উদ্দেশ্য নিয়ে, প্রতিশোধস্পৃহা থেকে এটা করেছিলো? তারা কি রৌমারী, পাদুকা সীমান্তে নির্মম পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিলো? প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিডিআরকে তারা  ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল? বিডিআর সদর দপ্তরের সেই পৈশাচিক ঘটনা শুধু বাংলাদেশের মানুষের বিবেককেই নাড়া দেয়নি, বিশ্ববাসীর বিবেককেও প্রচণ্ডভাবে নাড়া দিয়েছিল। একক কোনো ঘটনায় এত সামরিক কর্মকর্তা হত্যা এর আগে পৃথিবীর আর কোথাও ঘটেনি। সেদিনের সেই ঘটনা শুধু হত্যাকাণ্ডেই সীমাবদ্ধ ছিল না; হত্যাকাণ্ডের পর কর্মকর্তাদের মৃতদেহকে চরম অপমানিত করা হয়েছিলো। বিকৃত করা হয়েছিলো তাঁদের মৃতদেহ। সেনা কর্মকর্তাদের মৃতদেহের সঙ্গে যে অসম্মান ও পৈশাচিকতা দেখানো হয়েছিলো, দেশের কোনো সাধারণ জোয়ানের পক্ষে এ ধরনের কাজ করা সম্ভব ছিল না।

স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশকে অস্থিতিশীল করতে দিল্লীর ষড়যন্ত্রকারীরা যে ধারাবাহিক অশুভ পরিকল্পনা করে আসছে, ২৫ ফেব্রুয়ারির পিলখানা হত্যাকাণ্ড সে পরিকল্পনারই একটি অংশ মাত্র।

শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ঘটে যাওয়া এ ঘটনার পেছনে দিল্লীর আর কী কী অভিসন্ধি কাজ করেছিল তা আজও আমাদের অজানা রয়ে গেছে। ভবিষ্যতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সে জন্য এই হত্যাকাণ্ডের অনুঘটকদের চিহ্নিত করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে।

Sheikhsbay

সম্পরকিত প্রবন্ধ

এছাড়াও চেক করুন
Close
Back to top button
Close
Close