ঢাকায় গুঞ্জন-গুজব-আশঙ্কা- আতঙ্ক!
- সাইফার মেসেজ ফাঁস নিয়ে তুলকালাম কান্ড
- পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. মোমেন ও পররাষ্ট্র সচিবের মোবাইল জব্দ
- সেনাপ্রধান শফির সাথে সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তার সাথে বৈঠক
- সচিবালয়ে পরিবর্তনের হাওয়া,অস্থিরতার সুযোগ নিচ্ছে সুবিধাভোগীরা
- প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বৈঠক
।। সুরমা ডেস্ক ।।
লণ্ডন, ২ জুন: শেখ হাসিনার অনৈতিক সরকারের মেয়াদ যতই ফুরিয়ে আসছে ঢাকায় ততই গুঞ্জন, গুজব, আশঙ্কা ও আতঙ্কের ডালপালা ছড়াচ্ছে। একটি সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ মে পররাষ্ট্র সচিবকে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের পাঠানো গোপনীয় সাইফার ম্যাসেজটি ফাঁস হওয়ায় সরকার বেকায়দায় পড়েছে। এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ে চরম তোলপাড় চলছে। সাইফার এই বার্তাটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিব ও পররাষ্ট্র সচিব বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। সাইফার গোপনীয় মেসেজ যেটি সাধারনত কোডে আসে, শুধুমাত্র ডিকোড হওয়ার পরেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই কেবল দেখতে পারেন। এর বাইরে আর কোনো কর্মকর্তার দেখার কোন সুযোগ থাকে না। যে মেসেজ পিএস/পিএরাও দেখতে পারেন না। সেটি কিভাবে ফাঁস হলো- এ নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা মন্ত্রণালয় উলটপালট করে ফেলেছেন। ফরেনসিক বিশ্লেষণ করার জন্য সন্দেহভাজন হিসাবে গোয়েন্দারা পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার ও পররাষ্ট্র সচিবের মোবাইল ফোন অল্প সময়ের জন্য জব্দ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় পররাষ্ট্র সচিবের দপ্তর স্কানিংয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ফোন জব্দ করে এনএসআই’র কাছে পাঠাচ্ছেন। ঢালাওভাবে ফোন বাজেয়াপ্ত করায় গোটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালেয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রলীগের প্রাক্তন সভাপতি ৩৫ বিসিএসের কর্মকর্তা পররাষ্ট্র সচিবের দপ্তরের সিনিয়র সহকারী সচিব শোয়াইব-উল-ইসলাম তরফদার টার্গেট করে কর্মকর্তাদের ফোন জমা নিচ্ছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা চরমভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। কর্মকর্তাদের ভাষ্য মতে, সাইফার মেসেজটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিব এই তিন জনের কাছে ছিল, কাজেই ফাঁস হলে হয় এই তিন জনের কারো কাছ থেকে অথবা সাইফার রুম থেকে। এদের মধ্যে ফরেন মিনিস্টার মোমেন তার নিকটস্থ কিছু লোক এবং সহকর্মী ও গোয়েন্দা সংস্থার সাথে শেয়ার করে থাকতে পারেন। অথচ হেনস্তা হচ্ছে সাধারণ অফিসাররা। এভাবে নিজেদের মধ্যে আস্থার সংকট যেমন তীব্র হচ্ছে, তেমনি মন্ত্রণালয় প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। ফলে সচিবালয়ে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। এতদিনের সুবিধাভোগিরা নানান উছিলায় সরে যাচ্ছেন। এমনকি বিদেশে যারা আছেন, অনেকেই লিয়েন নিয়ে দূরে চলে যাচ্ছেন। একটি অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. মোমেন ও পররাষ্ট্র সচিব আমেরিকায় অবস্থানকালে তাঁরা দু’জন মার্কিন প্রশাসনের বিশেষ কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। ওই বৈঠক সম্পর্কে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে অন্ধকারে রাখেন। ওই বৈঠকের তথ্য উদঘাটনের জন্যই তাদের মোবাইল জব্দ করা হয় বলে জানা গেছে। আরেকটি অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ গতকাল কয়েকজন সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তার সাথে বৈঠক করেছেন। এ খবর সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়লে সচিবালয়সহ সরকারের সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতীয় হাইকমিশনার জরুরী ভিত্তিতে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও ডিনারের আমন্ত্রণ জানান। গভীর রাত পর্যন্ত ওই বৈঠক চলে। গত রাতে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে বারিধারাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তবে সরকারের সূত্রগুলো কোনো তথ্যই নিশ্চিত করছে না। একারণে ঢাকায় গুঞ্জন, গুজব, আশঙ্কা ও আতঙ্ক আরও বেশি ডালপালা ছড়াচ্ছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। বৃহস্পতিবার সকালে তেজগাঁওস্থ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ওই বৈঠক হয়। তবে বৈঠকে সুনির্দিষ্টভাবে কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তাৎক্ষণিক তা জানা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্মকর্তার সঙ্গে মার্কিন দূতের বৈঠককে সঙ্গত কারণেই তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছে ওয়াকিবহাল সূত্র। আমাদের ঢাকা অফিস জানিয়েছে, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে জাপান। দেশটির রাষ্ট্রদূত উইয়ামা কিমিনোরি বৃহস্পতিবার (১ জুন) সকালে আগারগাঁওয়ে কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ আগ্রহ ব্যক্ত করেন। এদিন সিইসির সঙ্গে কমিশন ভবনে বৈঠক করেন জাপানের রাষ্ট্রদূত।