নিউজ

দরগাহ মাদ্রাসার মুহতামিম গাছবাড়ী হুজুরের ইন্তেকাল

লণ্ডন, ১৭ মে : সিলেট শাহজালাল দরগাহ মাদ্রাসার মুহতামিম, শায়খুল হাদিস মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল হক ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। বুধবার বাদ মাগরিব তিনি দরগাহ মাদরাসায় তাঁর নিজ বিশ্রাম কক্ষে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি গাছবাড়ি হুজুর নামে পরিচিত ছিলেন। মরহুমের জানাজার নামাজ ১৮ মে, বৃহস্পতিবার  বেলা আড়াইটায় ঐতিহাসিক শাহী ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হবে। গাছবাড়ীর হুজুরের মৃত্যুতে সারাদেশব্যাপী তার হাজার হাজার ছাত্ররা শোকে ভেঙ্গে পড়েন।

শায়খুলহাদিস আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী হুজুরের জন্ম ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৬ ডিসেম্বও বৃহস্পতিবার সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার ঝিঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের গোয়ালজুর গ্রামে। তাঁর পিতা ছিলেন তৎকালিন সুনামধন্য আলেম হযরত মাওলানা ইসহাক (র.)। শিক্ষাজীবনের সূচনা নিজ এলাকায়। ছাফেলা আউয়াল (ক্লাস সিক্স) থেকে আলেম প্রথম বর্ষ (ইন্টার প্রথম বর্ষ) পর্যন্ত পড়েন গাছবাড়ি মাযাহারুল উলূম আকুনি মাদরাসায়। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে ভর্তি হন কানাইঘাটের বিখ্যাত মাদরাসা দারুল উলূমে। এই সময় তিনি বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা মুশাহিদ বায়েমপুরী (র.)-এর শিষ্যত্ব লাভ করেন। এরপর ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে ভর্তি হন ঢাকাউত্তর রানাপিং জামেয়া আরবিয়া হোসাইনিয়া মাদাসায়। এখানে তিনি যুগশ্রেষ্ট আলেম শায়খুল হাদিস আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (র.)-এর বিশেষ ছাত্র আল্লামা রিয়াছত আলী চৌঘরি (র.)-এর সহবত লাভ করেন। এখানে ছয় মাস লেখাপড়া করে তিনি চলে যান দারুল উলূম হাটহাজারী মাদাসায়। সেখানে ৪ বছর লেখাপড়া করে উলূমে আরাবিয়ার বিভিন্ন শাস্ত্রে বুৎপত্তি অর্জন করার পাশাপাশি ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে তাকমিল ফিল হাদিস পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। হাটহাজারী মাদাসায় বিষয় বিত্তিক প্রাপ্য মোট ৫০ নম্বারের মধ্যে তিনি সহিহ বোখারীতে-৪৮, সহিহ মুসলিমে-৫১, জামে তিরমিযিতে-৫০, সুনানে আবু দাউদে-৫২, মুআত্তা মালিকে-৫১, মুআত্তা মুহাম্মদে-৪৮ নম্বার অর্জন করে তখন নজিরবিহীন কৃতিত্বের স্বাক্ষর বহন করে বাংলাদেশের কওমী মাদরাসাসমূহের মধ্যে সিলেটের নাম উজ্জল করেছিলেন।

আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী হুজুরের কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের দরগাহপুর মাদাসায় শিক্ষকতার মধ্যদিয়ে। সেখানে তিনি ৪ বছর দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে হাদিস শাস্ত্রের বিভিন্ন কিতাবাদির পড়ান। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি দরগার ইমাম সাহেবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগাহে হযরত শাহজালাল (র.)-তে শিক্ষকতা শুরু করেন। এই ৪৮ বছরে তিনি সাধারণ শিক্ষক থেকে তিনি একদিকে মুহাদ্দিস, মুফতি, শায়খুল হাদিসের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আদায় করছেন, অন্যদিকে হোস্টেলের দায়িত্ব থেকে ইফতার দায়িত্ব এবং শেষ পর্যন্ত মুহতামীমের দায়িত্ব আদায় করছেন। ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে দরগাহ মাদরাসার মুহতামীম মুফতি আবুল কালাম জাকারিয়া (র.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি মুহতামীমের দায়িত্ব লাভ করেন। মুহতামীম হিসাবেও তিনি সফল বলে ইতোমধ্যে প্রমাণিত।

দরগাহ মাদরাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি শায়খুল হাদিস মুহিব্বুল হক সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড আজাদ দ্বীনি এদারার বিভিন্ন দায়িত্ব আদায় করতে আমরা তাঁকে দেখেছি। তিনি যখন এদারার নাযিমে তা’মির (নির্মাণ বিভাগীয় প্রধান) ছিলেন তখন ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে সোবহানিঘাটস্থ ছয়তলা বিশিষ্ট এদারাভবন নির্মিত হয়, যা ছিলো তাঁর মুর্শিদ কায়দে উলামা হাফেজ মাওলানা আব্দুল করিম শায়খে কৌড়িয়া (র.)-এর স্বপ্ন। তিনি বর্তমানে আযাদ দ্বীনী এদারার সিনিয়র সহসভাপতি এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। এছাড়া তিনি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড আল হাইআতুল উলয়ার সহ-সভাপতি ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটির সদস্য, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সিলেট জেলার সভাপতি, সিলেট জেলা উলামা কমিটির  চেয়ারম্যান, খাদিমুল কুরআন পরিষদের সভাপতি, সিলেট জেলা ফতোয়াবোর্ডের চেয়ারম্যান। তা ছাড়াও আছে, বৃহত্তর সিলেটের অসংখ্য দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মজলিসে শূরার সভাপতি কিংবা উপদেষ্টা।

Sheikhsbay

সম্পরকিত প্রবন্ধ

Back to top button
Close
Close