ফিচার

কাউন্সিল নির্বাচনে শিরিন ও নাজের বিজয়ে আমরা গর্বিত

।। শেখ ছুরত মিয়া আছাব ।।

অনেক আগেই বৃটেনের পার্লামেন্টে একে একে চার ব্রিটিশ-বাংলাদেশীর পদার্পন ঘটেছে। এতে করে ব্রিটিশ রাজনীতিতে ব্রিটিশ-বাঙালির দীর্ঘদিনের স্বপ্ন যেমন পূর্ণ হয়েছে তেমনি প্রত্যাশাও বেড়েছে। বাঙালি কমিউনিটি এখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর স্থানটি কখনো পূর্ণ হবে। কিন্তু এতদ্বসত্ত্বেও স্থানীয় সরকারের অনেক জায়গায় ব্রিটিশবাঙালি প্রতিনিধিত্ব অপ্রতুল এমনকি অনেক জায়গায় স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিত্বেরও অভাব এখনো পূরণ হয়নি। তম্মধ্যে লিভারপুল ও চেস্টার অন্যতম। এবার এই দুই এলাকায় প্রথমবারের মতো দুইজন স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি তথা কাউন্সিলার নির্বাচিত হয়ে সেই অভাবটুকু পূরণে সক্ষম হয়েছেন এবং এর মধ্যদিয়ে স্থানীয় বাংলাদেশী কমিউনিটিকেও করেছেন গর্বিত। আর সেই সফল দুই ব্রিটিশ-বাংলাদেশী হচ্ছেন শিরিক আক্তার ও নাজমুল হোসেন পাটওয়ারী। স্থানীয় বাঙালিদের মুখ উজ্জ্বলকারী নির্বাচিত এই দুই জনপ্রতিনিধিকে তাই অন্তরের অন্তস্থল থেকে শুভেচ্ছা। একই সাথে আশাবাদী হতে চাই, তারা যেন তাদের কর্মের মাধ্যমে বাঙালি কমিউনিটিসহ পুরো ব্রিটিশ সমাজের জন্য ভরসার পাত্র হতে পারেন।

শিরিন আক্তার, তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি। যুক্তরাজ্যের চেস্টার সিটির স্থানীয় নির্বাচনে বলা যায় তিনি ইতিহাস গড়েছেন। কারণ, বাংলাদেশী প্রথম নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। লেবার পার্টি থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী শিরিন চেস্টার সিটির আপটন এলাকা কাউন্সিলার নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত শিরিন আক্তার সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার উত্তর ধর্মদা গ্রামের শাহ হুশিয়ার উল্লাহ ও পারভীন আক্তার দম্পতির দ্বিতীয় মেয়ে। খুঁজ নিয়ে জানা গেছে, জন্ম যুক্তরাজ্যে হলেও ছোটবেলায় শিরিন বিশ্বনাথের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই বছর লেখাপড়া করেন। পরবর্তীতে বাবা-মায়ের সাথে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান এবং সেখানে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।বর্তমানে তিনি সমাজিক বিভিন্ন কাজকর্মের সাথে জড়িত রয়েছেন। শিরিন আক্তারের নির্বাচনী প্রচারণায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি রেজওয়ানা সিদ্দিক টিউলিপসহ বাঙালি কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেছিলেন। একইভাবে প্রথমবারের মতো ব্রিটিশ-বাংলাদেশী কাউন্সিলার নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েছেন।

কাউন্সিলার নাজমুল হোসেন পাটওয়ারী। নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে তিনি লিভারপুলের স্থানীয় বাংলাদেশী কমিউনিটির মুখ উজ্জ্বল করেছেন। গত ৫ মে যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন তিনি। নাজমুল হোসেন পাটোয়ারী লিভারপুল লেবার ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর বাবা মুক্তিযোদ্ধা এস এম আবুল হাসেম পাটোয়ারীর নোয়াখালীর ছাগলনাইয়ার মহামায়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও মা নূরজাহান হাসেম। পাঁচ ভাই বোনের মধ্য চতুর্থ নাজমুল হোসেন পাটোয়ারী ১৯৯৬ সালে ফেনী চাঁদগাজী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে এস এস সি পাশ করে যুক্তরাজ্যে আসেন।এবং সুইন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে ইনফরমেশন টেকনোলজিতে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। নাজমুলের বিজয়ে লিভার পুলের বাঙালি কমিউনিটিতে সবাই উচ্ছ্বসিত। লিভার পুলে বাঙালিদের দীর্ঘ ইতিহাস থাকলেও স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করার ঘটনা এই প্রথম।

ইতিহাস সৃষ্টিকারী এই দুই ব্রিটিশ-বাংলাদেশীর সাফল্যে আমরা লিভারপুলবাসী বাংলাদেশীদের পক্ষ আমরা তাদের অভিনন্দিত করতে চাই। একই সাথে তাদের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনার পাশাপাশি আরো আশাবাদী হতে চাই যে, আগামীতে আমাদের কমিউনিটির জন্য তারা আরো সাফল্য নিয়ে আসতে সক্ষম হবেন। আশাকরি, তাদের মাধ্যমে ব্রিটিশ সমাজ ও রাষ্ট্রে ব্রিটিশ-বাংলাদেশীদের অবস্থান আরো সুদৃঢ় হবে।

পরিশেষে বলতে চাই, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে লিভারপুলে বসবাস করার কল্যাণে সেখানকার সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। দীর্ঘ দিনের একটা স্বপ্ন ছিল অন্তত বাঙালি একজন কাউন্সিলর যেন আমরা নির্বাচিত করতে পারি। অবশেষে বহুদিনের সেই স্বপ্ন পুরণ হয়েছে, এরচে খুশির খবর আর কী হতে পারে? আমরা যেন আমাদের এই সাফল্য নিয়ে বহুদূর এগোতে পারি— এমনটিই সর্বান্তকরণে প্রত্যাশা।
জয় হোক বিশ্ব বাঙালির!

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close