কমিউনিটি নিউজ

শেফিল্ডে জমকালো ঈদ উৎসব অনুষ্ঠিত

।।শামসুল ইসলাম।। উঁচু উঁচু টিলার বুক চিরে সবুজ পত্র-পল্লব-শোভিত গাছের আদুরে ছায়া আর পায়ের তলায় মাটির বুক আগলে থাকা সবুজ সতেজ দুর্বা ঘাস – এমন এক মোহনীয় প্রাকৃতিক মায়াবী গ্রাউন্ড “শেফিল্ড নরফল্ক হ্যারিটেজ পার্ক”। ইংল্যাণ্ডের সাউথ ইয়র্ক শায়ারের অন্যতম বৃহৎ এ পার্কে গত রবিবার (৭ মে) অনুষ্টিত হল “ঈদ ফাস্টিভ্যাল বা ঈদ উৎসব ২০২৩। মুসলিম ওয়েল ফেয়ার হাউস এবং ফেমিলিস রিলিফের যৌথ উদ্যোগে এই ঈদ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। আগের দিন শনিবার দিনভর ভারী বর্ষণ হলেও রবিবার ভোরের আকাশ হেসে উঠে সোনালী রোদে। আকাশের এই হাসি বেলা বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে চওড়া হতে থাকে। আগের দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি থেকে একলাফে এদিন সকালেই তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রীতে পৌঁছে যা এবছর এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। বলা যায় উৎসবের জন্য প্রকৃতি মঞ্চ প্রস্তুত করে রেখেছে। এবারে ঈদ উৎসব শুরুর নির্ধারিত সময় ছিল দুপুর ১২ যা বিকেল ৬ টা পর্যন্ত একটানা চলবে। কিন্তু এমন মনু হরি আবহাওয়ায় সকাল থেকেই জমে উঠে নরফল্ক পার্ক। শিশুদের আনন্দ দিতে ইতোমধ্যেই বসানো হয় নানা ধরনের রাইড। সারি সারি অস্থায়ী খাবারের দোকান পশরা সাজিয়ে বসে পড়ে সকালেই। যুক্ত হয় মহিলাদের বাহারি পোশাক নিয়ে নানা ধরনের ষ্টল। দুপুর বারোটায় দেখা যায় নরফল্ক পার্কের সবুজ মাঠটি কানায় কানায় ভরে উঠে। ঈদ উৎসবে মাতুয়ারা শিশু কিশোর, তরুণ-তরুণী আর নানা বয়সের মানুষের পদচারনায় মুখরিত উৎসব প্রাঙ্গন। মূলত এটি ঈদ উৎসব হলেও ধর্ম ,বর্ণ ,জাতি নির্বিশেষে নানা শ্রেণী পেশার মানুষের অংশগ্রহণে এটি রূপ নেয় এক নান্দনিক সার্বজনীন উৎসবে।

কয়েক বছর থেকে নিয়মিতভাবে এই পার্কে ঈদ উৎসব চলে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের আয়োজন আরো বিস্তৃত পরিসরে আয়োজন করা হয়। শেফিল্ডের আরব, বাংলাদেশ, পাকিস্তানি কমিউনিটিসহ সকল মুসলমানদের মিলন মেলায় পরিনত হয় এই উৎসব। উৎসবের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল শাফি আদাম ও খালিল মোহাম্মদের ইসলামিক সংগীত পরিবেশন। দুপুর ২ টায় শাফি আদামের জনপ্রিয় সব গানের তালে দুল খেতে থাকেন তরুন তরুণীরা। তাদের পরিবেশনা চলে বিকেল পর্যন্ত। শেফিল্ডে থাকা হাজার দশেক বাংলাদেশীদের জন্যেও এটি সারা বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় আনন্দ উৎসব। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মা বাবার হাত ধরে শিশু কিশোররা আনন্দ উপভোগ করে। উৎসবে তিন সন্তানকে নিয়ে এসেছেন দেলোয়ার হুসেন। তিনি বলেন, আগের দিন থেকেই ছেলেমেয়েদের তর সইছে না, কখন আসবে মেলায়। এখনে এসে বিভিন্ন রাইড চড়তে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েও তাদের কোন ক্লান্তি নাই।

ঈদ উৎসবে প্রতি স্টলের জন্য গড়ে ৪শ পাউন্ড ভাড়া গুনতে হয়েছে স্টল মালিকদের। তবে প্রতিটি স্টলে সকাল থেকেই উপচে পড়া ভীড়! দুপুর গড়ার সাথে সাথে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ বিরিয়ানি, চটপটি, সমুচাসহ নানা ধরনের খাবার কিনছেন। অনেক স্টলে খাবার ফুরিয়ে আসে। মোহাম্মদ সায়েম, পেশায় ডাক্তার – গেল বারের মতো এবারও বন্ধুদের নিয়ে খাবারের স্টল দিয়েছেন। তার স্টলের সামনেও লম্বা লাইন তবে চাহিদার তুলনায় তার জুগান শেষ হয়ে গেছে জানালেন। এভাবেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে ঈদ ফেস্টিভ্যাল। একরাশ আনন্দ আর মুখে চওড়া হাসি নিয়ে ছেলে মেয়েদের নিয়ে বিকালে বাসায় ফিরেন উৎসবে আগত হাজার ত্রিশেক মানুষ।

Sheikhsbay

সম্পরকিত প্রবন্ধ

Back to top button
Close
Close