মুক্তচিন্তা

রাষ্ট্রপতি পদে বেআইনী নিয়োগ: শাহাবুদ্দিন চুপ্পু’র নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন

 ।। আরিক শামস ।।
লণ্ডন, ১৩ ফেব্রুয়ারী : রাষ্ট্রপতি পদে শাহাবুদ্দিন চুপ্পু’র নিয়োগ আইনগতভাবে বৈধ নয়। প্রচলিত ও বহুল আলোচিত “দুর্নীতি দমন আইন ২০০৪”এর ৯নম্বর ধারা লঙ্ঘন করে শাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে মনোনয়ন দিয়েছে দ্বিতীবারের মতো অনির্বাচিত আওয়ামীলীগ সরকার।

এই ধারায় কমিশনারগণের নিয়োগের শর্ত উল্লেখ করে বলা হয়েছে  “ধারা- ৯৷ কর্মাবসানের পর কোন কমিশনার প্রজাতন্ত্রের কার্যে কোন লাভজনক পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হইবেন না”৷ আইন লংঘন করে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ রাষ্ট্রের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। কারণ আগামী পাঁচ বছর দেশের সকল আইন, আদেশ-নির্দেশ, এমনকি বাজেট, অর্থবিল সবকিছুই রাষ্ট্রপতির নাম ও পদবিতেই করা হবে৷ সেখানে রাষ্ট্রপতি পদের মনোনয়ন অবৈধ বা আইনগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হলে তার নামে যা কিছু হবে, সেটার বৈধতা নিয়েও প্রতিমুহুর্তে প্রশ্ন উত্থাপিত হতে থাকবে। তাছাড়া একটা ‘আধুনিক রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান — নৈতিক ভিত্তি’ সমূলে ধ্বংস হবে।

“দুর্নীতি দমন আইন ২০০৪”এর ৯নম্বর ধারা

আইনগত বৈধতার প্রশ্ন ছাড়াও সাপ্তাহিক সুরমার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে আরও অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। শেখ হাসিনা অনালোচিত একজনের নাম ঘোষণা করে যেই বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছেন, তার চেয়ে অনেক বেশী চাঞ্চল্যকর তার অতীত। ১৯৭২ সালের গণটোকাটুকির সময়ে বিএসসি পাস এবং ১৯৮৩ সালে এরশাদের ১০০ নম্বরের টিক মার্ক বিসিএস এর মাধ্যমে উপজেলা মুনসেফ পদে ৩৫ বছরে নিয়োগ প্রাপ্ত  শাহাবুদ্দিন চুপ্পু কর্মজীবনে আওয়ামী লীগের সেবা দাস (চপ্পল) হিসেবেই কাজ করে গেছেন। বিচারিক জীবনে উপজেলা মুন্সেফ ও জজ হিসেবে তার বিচারের মান এতই নিম্ন ছিল যে ১৯৯৬ তে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও তাকে বিচারপতি করা দূরে থাক জেলা জজ হিসেবেও কোন জেলায় পদায়ন করেনি। অবশ্য জেলা জজের পদমর্যাদায় দুই একটি চাকরি তিনি করেছেন এবং অবশেষে ২০০৬ সালে প্রথম দিকে বিএনপি সরকারের উদারতায় চাকরি বহাল রেখে সম্মান নিয়ে অবসরে যেতে সক্ষম হন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন অন্যতম কমিশনার করে এবং সে পদে অত্যন্ত আস্থার সাথে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির বিষয়ে চুপ থেকে তার চুপ্পু নামের সার্থকতা প্রমাণ করেন। পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলা থেকে প্রধানমন্ত্রী পরিবার ও তার ঘনিষ্ঠ দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী ও আমলাদের দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে দায়বদ্ধ করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি দেখে সেখান থেকে অবসরে গিয়ে নিজেই নেমে পড়েন ব্যাংক দখলে। রাতারাতি চট্টগ্রামের একটি অজ্ঞাত অখ্যাত জিএমসি বিল্ডার্স কোম্পানির পরিচালক সেজে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদে ঢুকে পড়েন।

ক্ষমতার তাপ তাকে এমনই পেয়ে বসেছিল যে ডেইলি স্টারের প্রতিবেদকের সাথে কথা বলার সময় তিনি নিজেই স্বীকার করেন যে জেএমসি বিল্ডার্স নামে কোন কোম্পানিকে তিনি চেনেন না তবে তাদের পরিচালক হিসেবে ইসলামী ব্যাংকের বোর্ডে গেলেও তাদের সম্পর্কে জানার কোন আগ্রহ তার নেই।

হাসিনার সাথে দেখা হলেই বিনয়ে বিগলিত হয়ে ‘আমি আপনার পায়ের চপ্পল হতে পারলেই নিজের জীবনকে সার্থক মনে করব’  বলে নিজেকে নিবেদন করা চুপচাপ সাহেব অবশেষে পুরস্কার হিসেবে বঙ্গভবনে পাঁচ বছরের ‘নির্বাসিত’ জীবন যাপনের জন্য মনোনীত হয়েছেন। তাকে নির্বাচিত করেছেন তারই এক সময়কার বস সাবেক আইন সচিব বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল। অর্থনৈতিক সেক্টরের অন্যতম প্রধান কেলেঙ্কারি ইসলামী ব্যাংক দখলের অন্যতম নেপথ্য কুশীলব এই শাহাবুদ্দিন চুপ্পু।দখলের অভিযান- ব্যাঙ্ক থেকে বঙ্গভবন।দখলদার এই ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে সুরমা পাঠকদের আগ্রহ মেটাতে আমরা ২০১৭ সালে ডেইলি স্টারে প্রকাশিত ইসলামী ব্যাংক দখল সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনের চুম্বক অংশ নিচে তুলে ধরা হলো।
(সূত্র: ডেইলি স্টার, বুধবার ১৪ জুন, ২০১৭ ; প্রতিবেদক: জেবুন নেছা আলো)

চট্টগ্রাম সংযোগের চমকপ্রদ ঘটনা:

চট্টগ্রাম-ভিত্তিক আরেকটি স্বল্প পরিচিত কোম্পানি জেএমসি বিল্ডার্স লিমিটেড বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদে একটি ডাইরেক্টর এর পদ বাগিয়ে নিয়েছে। এ বছরের (২০১৭ সালের) জানুয়ারিতে হঠাৎ করে ইসলামী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন গুরুত্বপূর্ণ পদ সমূহে বড় ধরনের পরিবর্তন অনেকেরই মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল।

ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান নিশ্চিত করেছেন যে কোম্পানিটি (জেএমসি বিল্ডার্স লিমিটেড) সম্প্রতি স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বাজার মূল্যে ইসলামী ব্যাংকের ২ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনেছে এবং সেই সাথে বোর্ডে একজন প্রতিনিধি মনোনীত করেছে। সাবেক সচিব আরাস্তু খান নিজেও চট্টগ্রাম-ভিত্তিক একটি কোম্পানি আরমাদা স্পিনিং মিলস লিমিটেডের প্রতিনিধি সেজে ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডে জায়গা পেয়েছিলেন।

জেএমসি বিল্ডার্স ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডে একটি আসন পেতে শেয়ার মার্কেট থেকে ব্যাংকের ৩০ টাকার প্রচলিত বাজার মূল্যে ৩ কোটির বেশি শেয়ার কিনতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে জেএমসি বিল্ডার্সের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। গত ৩১ মে ২০১৭ বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত সপ্তাহে (অর্থাৎ এক সপ্তাহের মধ্যেই দ্রুততম সময়ে) মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পেয়েছে ইসলামী ব্যাংক।

ইতিপূর্বে  ২৩ মে পদ থেকে অপসারিত সৈয়দ আহসানুল আলমের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে সাহাবুদ্দিনকে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেয় বোর্ড।
এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগের দিন বার্ষিক সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে ব্যাংকে দুজনের পরিবর্তে একজন ভাইস-চেয়ারম্যান থাকবেন।একজন বিদেশী শেয়ারহোল্ডার-পরিচালক ইউসিফ আবদুল্লাহ আল-রাজি অপর ভাইস-চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলমকে অপসারণের অনেক আগে থেকেই ভাইস-চেয়ারম্যানের দ্বিতীয় পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

সাহাবুদ্দিনের নিয়োগের মধ্য দিয়ে এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে বোর্ড তার আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে।

মজার ব্যাপার হল যোগাযোগ করা হলে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু জানিয়েছেন তিনি চট্টগ্রামের ওই জেএমসি বিল্ডার্স সম্পর্কে কিছুই জানেন না যদিও তিনি কোম্পানিরই প্রতিনিধিত্ব করছেন। ইসলামী ব্যাংকের নতুন পরিচালক সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, “আমি কোনো বিল্ডার্স কোম্পানির (নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের) সঙ্গে সম্পর্কিত নই।” তবে তাকে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন বলে জানান তবে এ বিষয়ে তিনি কোনো কাগজপত্র এখনো হাতে পাননি। “আমি বিল্ডার্স কোম্পানিটি সম্পর্কে শুনেছি কিন্তু আমি এটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে কোন আগ্রহ বোধ করছি না,” তিনি বলেন।

জেএমসি বিল্ডার্স ২০১১ সালে রেজিস্ট্রার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মের অফিসে নিবন্ধিত হয় এবং এর প্রধান অফিস চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে অবস্থিত। তবে বিল্ডার্স কোম্পানি হলেও এই কোম্পানিটি আবাসন শিল্প সম্পর্কিত লবিয়িস্ট গ্রুপ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (REHAB) এর   সদস্য নয় । জনৈক জামাল মোস্তফা চৌধুরী, রোকিয়া ইয়াসমিন এবং মোহাম্মদ হাসেম এই তিন ব্যাক্তি কোম্পানিটির (জেএমসি বিল্ডার্স) প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এর সাথে জড়িত ছিলেন তবে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ও ফার্মের নিবন্ধক সূত্রে জানা গেছে ইয়াসমিন ও হাসেম সম্প্রতি কোম্পানি ছেড়ে চলে গেছেন।

চট্টগ্রামভিত্তিক আরও ছয়টি কোম্পানির ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডে প্রতিনিধি রয়েছে। সেগুলো হল: প্যারাডাইস ইন্টারন্যাশনাল, প্লাটিনাম এন্ডেভার্স, ব্লু ইন্টারন্যাশনাল, এবিসি ভেঞ্চারস, গ্র্যান্ড বিজনেস এবং এক্সেল ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং। ছয়টি কোম্পানির একত্রে ব্যাংকটিতে ১২ মোট শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

এদিকে বিদেশী পৃষ্ঠপোষক কুয়েত ফাইন্যান্স হাউস যাদের ইসলামী ব্যাংকে ১৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে বর্তমানে তাদের প্রতিনিধিকে ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বর্তমানে বোর্ডে তিনজন বিদেশী পরিচালক রয়েছেন – দুজন আল-রাজি কোম্পানির এবং একজন ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)।  “আমরা কুয়েত ফাইন্যান্স হাউস থেকে বিদেশী এবং স্থানীয় পরিচালকদের সংখ্যার ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য আরও একজন পরিচালককে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি,” বলেছেন ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান আরাস্তু খান। এর আগে গত ২৫ মে দুই স্বতন্ত্র পরিচালক সৈয়দ আহসানুল আলম ও আবদুল মাবুদ বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেন, কারণ তাদের দুজনকেই এজিএমের পর তাদের নির্বাহী পদ থেকে অপসারণ করা হয়। মাবুদ ইসলামী ব্যাংকের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।”

আওয়ামীলীগ কেন চুপ্পুকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করলো:

রাষ্ট্র পরিচালনায় আওয়ামী লীগের সার্থকতা হচ্ছে তারা কখন কি করবে সেটা বিরোধী পক্ষের কারো পক্ষে আগাম ধারণা করতে না পারা। এবার তারা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পূর্বে মাঠে এমন কিছু নাম ছেড়ে দিয়েছে যেটা নিয়ে সবাই ব্যস্ত ছিল। ডক্টর মশিউর বেচারা রাষ্ট্রপতি হিসেবে অনেক খোয়াব দেখেছিল। কিন্তু সে কি কখনো হাসিনার পায়ের চপ্পল হতে পারবে? চুপ্পুকে দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানোই হয়েছিল পদ্মা সেতু দুর্নীতির মামলায় প্রধানমন্ত্রীর পরিবার, দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী আবুল হোসেন ও সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সহ দুর্নীতিবাজদের দায়মুক্তি দিয়ে রিপোর্ট প্রণয়নের জন্য ।রিপোর্ট প্রণয়নের ক্ষেত্রে তিনি কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং বিচারিক দায়মুক্তি প্রদান করে কানাডার আদালতে পাঠিয়েছিলেন। তারই পুরস্কার হয়তো এই পদায়ন। পক্ষান্তরে স্পিকার শারমিন শিরিন চৌধুরী আলোচিত হলেও রাজনীতির মাঠে কোন পরীক্ষিত মাঠকর্মী নন বরং রাজনীতির ময়দানে তিনি এখনো নাবালিকা মাত্র। অন্যদিকে মৌখিকভাবে সারাক্ষণ নতজানু অবস্থান প্রদর্শন ও তেল মারতে অভ্যস্ত হলেও সিএসপি আমলা ডঃ মশিউর রহমানের পক্ষে বয়স জনিত কারণে হলেও হাসিনাকে পা ছুয়ে কদমবুচি করা সম্ভব নয় যেটা চুপ্পুর পক্ষে অতি সহজ। চুপ্পুর হয়তো আরেকটা ব্যাপার কাজ করেছে সেটা হল বিসিএস প্রশাসনিক ক্যাডারের সেই তিরাশির টিকমার্ক বিসিএস এর অপর সারথি প্রশাসনিক ক্যাডারের রবিউল আলম মুক্তাদিরের সাথে তার বিদুষী স্মার্ট স্ত্রীর বিশেষ সখ্যতার বিষয়টি। আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এমন একজন স্মার্ট ফার্স্ট লেডি দরকার সেটা আওয়ামী মহলের নীতি নির্ধারকদের ভাবনায় নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ঠাঁই পেয়েছিল। স্ত্রী প্রশাসনিক ক্যাডারের হওয়ায় (সেই তিরাশির টিক মার্ক বিসিএস!) আওয়ামী লীগ একসাথে অনেক পক্ষকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছে। আগামী নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসন এবং বিচার ক্যাডার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এখন বঙ্গভবনে বিচার ক্যাডার ও প্রশাসন ক্যাডারের দুজন অবস্থান করলে ‘ব্যারাক ওকাকা’র (ব্যারাক ওবামা নন, ইনি হচ্ছেন ব্যারাকের ভেতরে গিয়ে সত্য বলে দেওয়া ওবায়দুল কাদের) ‘খেলা হবে’ ফর্মুলা অনেক সহজ হয়ে যাবে।

রাতের বঙ্গভবন: রাষ্ট্রপতি পদে বেআইনী নিয়োগ বঙ্গভবনের নৈতিক অবস্থানকে এভাবেই অন্ধকারে ডুবিয়ে দিবে

তবে চুপ্পু কেমন রাষ্ট্রপতি হবেন তার প্রমাণ মনোনয়ন দখলের দিনে তিনি দিয়ে রেখেছেন। গতকাল ব্যারাক ও’কাকা যখন মনোনয়নপত্র দাখিল করতে নির্বাচন কমিশনে যান, তখন অত্যন্ত নির্লজ্জের মত তিনি নিজেও নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিলেন। অথচ এর আগে তিনি ছিলেন গণভবনে শেখ হাসিনার সাথে যেখানে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুল দিয়ে মনোনয়ন এর বিষয় নিশ্চিত করা হয় ও অভিনন্দন জানানো হয়। যখন তার মনোনয়ন নিশ্চিত হল তখন তার উচিত ছিল নিজের বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নেওয়া। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বদলে যায় কিনা এই ভয়ে তিনি ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গী হয়ে নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়েছিলেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে যেহেতু কোন সাধারণ লোকদের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই এবং কেবলমাত্র এমপিরাই এই মনোনয়ন প্রস্তাবক ও সমর্থক হিসেবে কাজ করতে পারেন সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন ভবনে চুপ্পুর যাবার কোন দরকার ছিল না। কিন্তু তিনি সেখানে মান মর্যাদা খুইয়ে গিয়েছেন। কারণ তার দেখানো এবং প্রমাণ করার দরকার ছিল যে তিনি এখনো পায়ের চপ্পলই আছেন, রাষ্ট্রপতির জন্য মনোনয়ন লাভের পরও স্বভাব বদলায়নি। তিনি প্রমাণ করেছেন যে বর্তমান বিদায়ী ভাড় রাষ্ট্রপতির মতোই বঙ্গভবনের ঐতিহাসিক মর্যাদা ভুলে গিয়ে তিনি সেখানে রঙ্গভবন হিসেবেই কাজ চালিয়ে নেবেন। রঙ্গভবনে স্বাগত মি চুপ্পু, আগামী দিনে বর্তমান স্বৈরশাসকরা দূর হলে তাদেরকে পেটাতে জনগণের যে চপ্পল দরকার হবে সেটার পরিবর্তে জনগণ আপনাকেই ব্যবহার করতে পারবে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close