কমিউনিটি নিউজ

বিলেতে উচ্চ শিক্ষারত বাংলাদেশি ছাত্রীদের নিয়ে ‘চ্যানেল এস’ এ মানহানিকর সংবাদ প্রকাশ, কমিউনিটিতে নিন্দার ঝড়!

  • প্রতিবেদনটিতে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ দিতে পারেন নাই
  • অনলাইন প্লাটফর্মগুলো থেকে ভিডিও প্রত্যাহার করেন নাই
  • প্রতিবেদনটির জন্য চ্যানেল এস কর্তৃপক্ষ দু:খ প্রকাশ করেন নাই

সুরমা প্রতিবেদন: গত ৪ জানুয়ারি ‘চ্যানেল এস’ এ প্রচারিত ‘বাংলাদেশ থেকে আসা অনেক শিক্ষার্থী খরচ সামলাতে বেছে নিচ্ছেন পতিতাবৃত্তির মত পেশাকে’ শিরোনামের সংবাদটি ঘিরে কমিউনিটিতে তোলপাড় চলছে। পূর্ব লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেল, পাতাল রেল স্টেশনের পাশে অফ লাইসেন্স শপের প্রবেশ পথে কাঁচের দেয়ালে ম্যাসাজ সার্ভিসের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে ‘চ্যানেল এস’ এর কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর তানভীর আহমেদের করা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে- যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক মন্দায় বাংলাদেশ থেকে আসা অনেক শিক্ষার্থী খরচ সামলাতে বেছে নিচ্ছেন পতিতাবৃত্তির মত পেশাকে। পুরো প্রতিবেদনটি দেখে সচেতন মানুষ স্তম্ভিত হয়ে গেছেন এ কারণে যে- প্রতিবেদনটির  কোথাও এ নিয়ে কোন ‘সুনির্দিষ্ট’কোন  তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। কেবলমাত্র অনুমানের ওপর ভিত্তি করে নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি ইঙ্গিত করে এরকম একটি স্পর্শকাতর শিরোনাম দিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করায় কমিউনিটির বাসিন্দারা ফুঁসে উঠেছেন। অভিজ্ঞ সাংবাদিকরা বলছেন, প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণভাবে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার নীতিমালা চরম লংঘন করেছে, সুস্পষ্ট ভাবে অপসাংবাদিকতার ন্যাক্কারজনক নজির স্থাপন করেছে। এটি ‘পতিতাবৃত্তি’র মত স্পর্শকাতর শব্দের প্রায়োগিক গুরুত্ব বুঝতে অক্ষম অপেশাদার ও আনাড়ী সাংবাদিকের কাজ। পতিতাবৃত্তির অপর নাম হলো গণিকাবৃত্তি বা যৌনবৃত্তি। জর্জ স্কট তার ‘পতিতা বৃত্তির ইতিহাস’ নামক বইয়ে পতিতাবৃত্তির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন-‘পতিতারা হলো সেই সম্প্রদায়ভূক্ত নারী যারা পুরুষকে যৌন সুখ ভোগ করাতে নিজেদের দেহ দিয়ে জীবিকা অর্জন করেন।’ অপরদিকে ম্যাসাজ সার্ভিসে, একজন প্রশিক্ষিত ম্যাসাজ থেরাপিস্ট শরীরের ব্যথা ও শরীরের জয়েন্টগুলোর সাময়িক উত্তেজনা কমাতে হাত দিয়ে শরীরের পেশী এবং জয়েন্টগুলিতে মৃদু বা শক্তিশালী চাপ প্রয়োগ করেন।  সম্পূর্ণ ভিন্ন দু‘টি বিষয়কে তিনি এক করে ফেলেছেন। তারচেয়েও বড় কথা এই ম্যাসাজ সার্ভিসের সাথে যে বাংলাদেশ থেকে পড়তে আসা নারী শিক্ষার্থীরা জড়িত আছেন, প্রতিবেদক তার সেই অশ্লীল ও কুরচিপূর্ণ প্রতিবেদনটিতে সেই তথ্য প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। মানুষ প্রশ্ন করছেন, শুধুমাত্র আন্দাজের ওপর ভিত্তি করে কোন প্রতিবেদক কি বাংলাদেশ থেকে আসা নারী শিক্ষার্থীদেরকে ‘পতিতা’ বানিয়ে দিতে পারেন? প্রতিবেদক ও টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ কি বিষয়টি একটুও বিবেচনায় নেয়ার দরকার মনে করেন নি? যে সকল মেধাবী শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য বিলেতে আসেন, তাদেরকে এভাবে সামাজিকভাবে অপদস্থ করার অধিকার প্রতিবেদক বা চ্যানেল এস কর্তৃপক্ষ কোথায় পেলেন? কেবলমাত্র অনুমানের ওপর ভিত্তি করে, ধারণার বশবর্তী হয়ে,  ‘অফ লাইসেন্স’ দোকানে লাগানো বাংলায় ম্যাসাজের বিজ্ঞাপন কিম্বা ‘অনলি ফ্যানস’এর দেয়ালচিত্র দেখে ‘বাংলাদেশ থেকে আসা অনেক শিক্ষার্থী’ পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন বলাটা গুরুতর অন্যায়। প্রতিবেদনটিতে শুধুমাত্র বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদেরকেই যে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে তা নয়, পুরো কমিউনিটির ভাবমূর্তিই মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে।  এরকম একটি  সংবাদ কোনভাবেই দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার পরিচয় বহন করে না।

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই এই প্রতিবেদনটি শেয়ার করেছেন। কারণ এই ধরনের সংবাদের ভিউ বেশি হয়। যত বেশি ভিউ ততবেশি ইনকাম। Reduan Husen Sagor (https://www.facebook.com/reduan.hosen) নামে একজনের ওয়ালে ভিডিওটি ৩৪ হাজার ভিউ হয়েছে, ৮ হাজার শেয়ার হয়েছে, ২ হাজার কমেন্টস হয়েছে। অনেকেই বিরুপ/তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। Md Omor Faruk নামে এক ভাই মন্তব্য করেছেন, ‘This is absolutely wrong information. Please don’t listen and follow them.’ Zul Afros নামে একজন লিখেছেন, ‘এই তানভীরের আত্মীয়রা এই ব্যবসা করেন। না হয় এমন নিউজ করবে কেন?’ Akter Amin ‘নামে একজন মন্তব্য করেছেন, অসভ্য মার্কা সংবাদ। এভাবে বাংলাদেশি নারী সমাজকে অপমানিত করার কোন অধিকার কারো নাই। এখানে অনেক নারী শিক্ষার্থী সততার সহিত উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’ Aman Ullah Aman নামে একজন মন্তব্য করেছেন, এটা বাংলাদেশীদের ছোট করার ঘৃণ্যতম মাধ্যম, এতোটা খারাপ না ব্রিটেনের অর্থনীতি।’ MD Tariqur Rahman একজন মন্তব্য করেছেন, ‘এই ধরনের সংবাদ ভূল তথ্য দিচ্ছে এবং ঐখানে যারা পড়তেছে তাদের কে অশোভন ভাবে উপস্থাপন করছে। এইরকম সংবাদ পরিবেশনা বন্ধ করা উচিত।’ Md Juned Khan নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘ইয়া বগার নিউজ নি গাইরা ফুয়াইন।’ Muradil Mursalin নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘সামান্য ভিউ আর লাইকের জন্য এই সব কুলাঙ্গারদের এই রকম ভিডিও দেখে যারা দেশে বসে জাজ করে বসলেন তাদের বলার কিছু নাই। লন্ডনে আছি পাচঁ মাস হতে চললো আজ পর্যন্ত এই রকম কিছুই দেখিনি। ফেইসবুকে শুধু দেখি লন্ডনের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না দেখে মানুষ পার্কে থাকছে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে বাট আমরা যারা লন্ডনে আছি কেউ তো পার্কে থাকছি না মাস শেষে লক্ষ টাকা দেশে দিচ্ছি সেটা আমি না প্রত্যেক লন্ডনে আসা স্টুডেন্টরা দিচ্ছে। আর মেয়েদেরকে নিয়ে যে নিউজটা করা হয়েছে সেটা সম্পূর্ন বানায়োট যদিও কেউ এই রকম কাজে লিপ্ত থাকে সেটা নিউজ রিপোর্টারের মা বোন বা আত্নীয় স্বজন হবে।’   Hena Begum নামে এক বোন মন্তব্য করেছেন, ‘That’s not true. সম্পুর্ণ মিথ্যা ভিত্তিহীন একটা সংবাদ।’ Fazlul Chowdhury লিখেছেন, ‘This is bloody bullshit news done by journalist. I have never seen any Bangladeshi students are doing this . I strongly condemn against this news.’ MD Fojlur Rahman নামে একজন লিখেছেন, ‘মিথ্যা ও বানোয়াট নিউজ। তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তানভীরকে ভিত্তিহীন নিউজের জন্য বাংগালী কমিউনিটির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।’ Md Sami Talukdar নামে এক ভাই মন্তব্য করেছেন, ‘Fake news ever. Without proof how can they talk like that. Fucking TRP baraiya poysha banaitay Kori andu blame kne deray why????’  Arafat Rubel লিখেছেন, ‘টোটালি ফেইক নিউজ। এটা একশ্রেণীর লন্ডনী আছে যারা শাড়ির ভিসায় ইউকে গেছে তারাই এ ধরণের গুজব ছড়াচ্ছে।’  Sharmin Zafar নামে এক বোন মন্তব্য করেছেন, ‘Ae dhoroner stupid marka faltu banano news kora bondho koren…. Jachai bachai na kore students der mittha blame korchen. Ganja khorder moto kotha boltecen Apnara. Shop er mathay jodi kono msg likha thake sheta ki vhabe bujlen eta Bangladesh student? Beadop der moto faltu news na baniye ghore boshe thaken. Apnader moto kichu faltu news presenter der jonno desher bodname hobe…Ja iccha Tae news banaiye felen kichu na jachai kore. News er kono aga matha ache? Kisher shate ki boltecen. Ae dhoroner news channel gula bondho kora uchit… jara mittha news banay. H.M. Touhid নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেই সাংবাদিক হওয়া যায় না,সাংঘাতিক হওয়া যায়। সাংবাদিক হতে হলে পড়াশুনার পাশাপাশি, বিবেক,সততা থাকতে হয়। মেয়েদেরকে ঢালাওভাবে অপমাণ করবার কোন মানে হয়না। সাংবাদিক মনে হয় কোন জায়গায় ধরা খাইছে।’ Mahe Alam নামে একজন লিখেছেন, ‘অন্তত বাংলাদেশি মেয়ে যারা স্টুডেন্ট ভিসায় আসছে! তাদের জন্য এই সংবাদ প্রযোজ্য নয়! এইখানে দেখানো হয়েছে কাজের অভাবে এইসব কাজ করা হয়! কথাটা একদম সত্য না! এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডে কাজের অভাব নাই!’ Md Johirul Islam নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘তোমরা মিথ্যা কথা বলে ভুল খবর দিচ্ছ জনগণকে। এটা একটা ভুল মেসেজ যারা উচ্চশিক্ষা নিতে চায় তাদের বিরুদ্ধে। এটা একটা ষড়যন্ত্রমূলক অপসংস্কৃতির রাজনীতি।’ শাগর তালুকদার নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘এটা কোন সংবাদ? আমাদের দেশের মেয়েদের কে অপমাণ করো হল। সংবাদ ভাইরাল করার জন্য এখন সংবাদকর্মীরাও টিকটকার হয়ে যাচ্ছে।’ Ahmed Ish একজন মন্তব্য করেছেন, ‘একটা প্রিন্টেড পোস্টার দেখিয়ে পুরো গল্প বানালো। ফেইক নিউজ। বানোয়াট এবং মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানো। এরা কিছু পাবলিসিটির আশায় স্টোরি বানায় আর ফেসবুক থেকে লক্ষ টাকা উঠিয়ে নেয়।’ Ruhul Amin Musa মন্তব্য করেছেন, ‘ফেইক নিউজ করার আর জায়গা পাইছ না হালাই।’ Md K Zaman নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘Faltu Akta news. Student der ke insult korar odikar ke dise?’ Shahnur Howlader মন্তব্য করেছেন, ‘একটা ফালতু নিউজ। এরা এই চ্যানেলের বারোটা বাজাইয়া ছারবে।মনেহয় ধানধাবাজ,চিটার।’ Naimur Rahman লিখেছেন,  ‘Bricklane late night porjonto adda dei but akdin o deklam nah . Reporter was maybe drunk.’ Usha Marium নামে আরেক বোন মন্তব্য করেছেন, ‘Meyera bolte ki sob meyerai agula kore!!! Nonsense. Mane apnara je ato faltu news korben kono family agula dakhe meyedr abroad giye allow korbe na seta bujhen!! Murkho sangbadik.’ সাংবাদিক বাতিরুল হক সরদার মন্তব্য করেছেন, ‘এই খবরের সত্যতা এবং কোন ভিত্তি নেই, অনুমান করে নিউজ করা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু হলে হতে পারে। তবে অনুমানের উপর ভিত্তি করে এই জাতীয় সংবাদ প্রচার করা মোটেই ঠিক নয়। যারা দেশ থেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য এসেছে তাদের পরিবারের অবস্থা কি হবে?’ সাংবাদিক হাসনাত চৌধুরী মন্তব্য করেছেন, ‘ফালতু সংবাদ।’  এরকম আরও অনেক মন্তব্য আছে। এর বাইরেও কিছু মন্তব্য আছে, যেখানে কেউ কেউ এই নিউজ দেখার পরে লন্ডনে পড়তে আসা বাঙালি ছাত্রীদের বিয়ে করবে না বলে জানিয়েছেন, নানাজন নানাভাবে যুক্তরাজ্য প্রবাসী নারীদের ক্রিটিসাইজ করেছেন। Ahmed Rukon লিখেছেন, ‘কইরে হালাইন লন্ডনি মাইয়া বিয়া করতাইনি।’ AhmeD MusA লিখেছেন, ‘জাউগো মাই ওকল। লন্ডন টাকা আর টাকা। তারাতারি ভিসা লাগাইয়া যাও।’ Karim Abdul লিখেছেন, ‘দয়া করে স্টুডেন্ট ভিসা বন্ধ করা হউক।’ Masum Parvej লিখেছেন,’আর যাইওনারে ফুড়িন।’ Ridoy Raj লিখেছেন, ‘Kortay ni r londoni furin biya.’ H Aklak Husain লিখেছেন, ‘লন্ডনী ফুরিনরে বাংলাদেশের ফয়াইনতে বিয়া করার লাগি যে পাগল যাও কর গিয়া।’ ASHRAF SUHAG লিখেছেন,’আর বিয়া খরতায়নি লন্ডনে।’ Md Shajahan Shajahan লিখেছেন,’নারীর আবার উচ্চ শিক্ষা।’ এমনকি কেউ কেউ ছাত্রীদেরকে বিদেশে পড়তে পাঠানোর জন্য তাদের মা-বাবাদেরকেও গালিগালাজ করেছেন। এই যে উচ্চ শিক্ষা নিতে আসা বাংলাদেশি ছাত্রীদের ইমেজের এত বড় ক্ষতি হয়ে গেলো, এর দায় কে নিবেন? প্রতিবেদক নিবেন নাকি চ্যানেল এস কর্তৃপক্ষ নিবেন?

‘চ্যানেল এস’ এর হেড অব নিউজ কামাল মেহেদী সম্পূর্ণ মনগড়া ও ভিত্তিহীন এই সংবাদকে যথাযথ তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রচারিত এবং প্রকাশিত দাবি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচকদের নিন্দা করেছেন এবং কারও অভিযোগ থাকলে অফকম বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আকারে দিতে পরামর্শ দিয়েছেন।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close