বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের রুখতে হবে

এ সপ্তাহের সম্পাদকীয় ।। ইস্যু ২২৮৩
উৎসবের মাধ্যমে শুরু হওয়া বাংলাদেশে নতুন ধারার শিক্ষা কার্যক্রম শুরুতেই সমালোচনার মুখে পড়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে নানা ধরনের ভুল ও অসংগতি নিয়ে শিক্ষাবিদ ও সুধীদের পক্ষ থেকে সমালোচনার ঝড় ওঠেছে। সমালোচনার মুখে কয়েকটি ভুলের সংশোধনীও দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এ অবস্থায় ভুল ও অসংগতি চিহ্নিত করে তা সংশোধন এবং এতে পাঠ্যবই প্রণয়নে জড়িত ব্যক্তিদের কারও কোনো গাফিলতি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে পৃথক দুটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারের শিক্ষা বিভাগ। বই নিয়ে এনসিটিবির কোনো কোনো কর্মকর্তার গাফিলতির ইঙ্গিত করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দুজন (শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী) মিলে যেসব ছবি বাদ দিয়েছিলাম, সেসব ছবিও কোথাও কোথাও থেকে গেছে। এটি গাফিলতির কারণে নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
শিক্ষামন্ত্রীর কথায় মনে হয় পাঠ্যপুস্তকে কিছু ভুল ছবি দেয়ার কারণে এর বিরুদ্ধে সমালোচনা হচ্ছে। ব্যাপারটা মোটেই তা নয় এবং তা এ রকম হালকা বিষয় নয়। বইয়ে প্রকাশিত ভুল তথ্য, তথ্যচুরি ও মিথ্যাচার বাংলাদেশের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের উপর আঘাত হেনেছে। ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে নানা রকম ভুলের ছড়াছড়ি। দীর্ঘদিন প্রামাণ্যভাবে ইতিহাসের কোনো ঘটনা প্রতিষ্ঠিত থাকলে তাকে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীবিশেষ তথ্য-প্রমাণ ছাড়া উল্টে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন না। তা হয়ে পড়ে ইতিহাস বিকৃতি ও তথ্য বিভ্রাটের নামান্তর। আর এনসিটিবি কর্তৃক প্রকাশিত ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইয়ে তেমনই ভয়ংকর স্বেচ্ছাচারিতা করা হয়েছে। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা বিষয়ক কোনো কোনো জায়গায় ভয়ানক তথ্যবিভ্রাট রয়েছে। এর চেয়ে মারাত্মক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বইয়ের অন্য কয়েকটি অধ্যায়ে। সেখানে রয়েছে তথ্যচুরি এবং ইতিহাস বিকৃতির ভয়ানক ছড়াছড়ি। চমকে যাওয়ার মতো কয়েকটি ইতিহাস বিকৃতি সেখানে রয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্পর্কেও অনেক তথ্যবিভ্রাট রয়েছে। এ সকল বই স্কুলে পড়ানো হলে দেশের ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের ভুল তথ্য ও বিকৃত ইতিহাস পড়ানো হবে। এ রকম বই শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা আইনত অপরাধ বলে আমরা মনে করি। ইতোমধ্যে শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় এ সকল বই সংশোধন করার উপায় নেই। তাই এ সকল বই প্রত্যাহারের দাবি ওঠেছে।
প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত থেকে আমরা নিশ্চিত যে একটি বিশেষ গোষ্ঠী বিশেষ অভিসন্ধি নিয়ে এমন কাজটি করেছে। তারা বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে ভয়ংকর খেলা শুরু করেছে। তারা মোদী সরকারের কায়দায় বাংলাদেশের ইতিহাসকে নতুন করে লেখতে চায়। এ অপরাধে জাতীয় শিক্ষাকার্যক্রমের প্রধান পৃষ্ঠপোষক শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি কর্তৃপক্ষকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত বলে আমরা মনে করি। আমরা মাধ্যমিক স্তরের জন্য সদ্যপ্রকাশিত সকল পাঠ্যবই অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। সাথে সাথে আমরা বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করছে বা ছেলেখেলা খেলছে তাদের চিহ্নিত করে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জোর দাবি জানাচ্ছি।