খেলার পাতা

কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়া

ক্রীড়া ডেস্ক: ‘চরম নাটকীয়তা’ শেষে কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়া। নেদারল্যান্ডসকে পেনাল্টি শুট আউটে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। অন্যদিকে ব্রাজিলকে
পেনাল্টি শুট আউটে হারিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। আগামী ১৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সেমিফাইনালে একে অপরের মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়া।

নেদারল্যান্ডস-আর্জেন্টিনা ম্যাচের শুরু থেকে আর্জেন্টিনার আধিপত্যই ছিল বেশি। পুরো প্রথমার্ধে এবং দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি পর্যন্ত আর্জেন্টাইন ফুটবলাররা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রেখেছিল কিন্তু মেসির পেনাল্টি গোলে ২-০ গোলের লিড নেওয়ার পর হঠাৎই রক্ষণাত্মক ধাঁচে নিজেদের মুড়ে ফেলে আর্জেন্টিনা। অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক ফুটবলেরই খেসারত দিতে হল নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ শেষ করতে না পেরে। ম্যাচের ৩৫ মিনিটে লিড নেয় নীল সাদা জার্সিধারীরা। মেসি বলটা ধরে সামান্য মাথা উঁচু করে দেখে নিলেন ফুলব্যাক মলিনা বক্সে ঢুকে পড়েছেন। দুই ডাচ ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে বা পায়ের থ্রু বাড়ালেন ম্যাজিশিয়ান। মলিনা ফিনিশ করতে ভুল করেননি। দ্বিতীয়ার্ধেও আর্জেন্টিনার পায়ে বলছিল বেশি। ৬২ মিনিটে মেসির একটি ফ্রি কিক অল্পের জন্য বাইরে চলে যায়। ব্লিন্দের পরিবর্তে স্ট্রাইকার ডি ইয়ংকে নিয়ে আসে নেদারল্যান্ডস। ৬৫ মিনিটে ডে পলকে তুলে নিয়ে পারেদেসকে নিয়ে আসে আর্জেন্টিনা। ৭৩ মিনিটে আর্জেন্টিনার লেফট ব্যাক মার্কোস আকুনাকে বক্সের মধ্যে ফেলে দেন দামফ্রিজ। পেনাল্টি দেন রেফারি। বল জালে জড়াতে ভুল করেনি মেসি। এই নিয়ে বিশ্বকাপের আসরে ১০ গোল হয়ে গেল মেসির। স্পর্শ করে ফেললেন গাবরিয়েল বাতিস্তুটাকে। এরপর নেদারল্যান্ডস লড়াই চালাল বটে, কিন্তু সেটা কমব্যাক করার জন্য যথেষ্ট ছিল না। মোটামুটি বিনা চ্যালেঞ্জে সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল মারাদোনার দেশ। ক্রোয়েশিয়ার চ্যালেঞ্জের জন্য এবার প্রস্তুত হবেন স্কালোনির ছেলেরা। শেষ ১০ মিনিটে অবশ্য চাপ বাড়াল ডাচ দল। ওয়েজহর্ট হেডে একটি গোল শোধ করলেন। পরপর আক্রমণ করছিল নেদারল্যান্ডস। শেষদিকে মাথা গরম করে মারামারি হল। ১০ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হল। একেবারে শেষ লগ্নে গোল করে দিল নেদারল্যান্ডস। সেই ওয়েজহরস্ট। ফ্রিকিক দেওয়ালের নীচ দিয়ে গলে যেতেই বুদ্ধি করে প্লেস করলেন।অতিরিক্ত সময় আর্জেন্টিনার সুযোগ বেশি তৈরি করেও গোল করতে পারেনি। কিন্তু আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানও মার্টিনেজ আবার রক্ষা করতে হয়ে উঠলেন টাইব্রেকারে। প্রথম দুটি শট সেভ করে আর্জেন্টিনাকে অ্যাডভান্টেজ এনে দিলেন। এরপর আর্জেন্টিনা শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করল ৪-৩ ব্যবধানে। লুসাইল স্টেডিয়ামে নাটক জমিয়ে মার্টিনেজের কাধে চড়ে পৌঁছে গেল সেমিতে।

অন্যদিকে কাতারে বিশ্বকাপের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে ট্রাইবেকারে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। ২০০২ সালের ফাইনালে জার্মানিকে পরাজিত করার পর থেকে নকআউট ম্যাচে ইউরোপীয় দলের বিপক্ষে ব্রাজিল কখনো জিততে পারিনি। নির্ধারিত সময়ে কোনও গোল হয়নি দু’দল। অতিরিক্ত সময়ে ব্রাজিলের নেইমার গোল করলেও শেষ দিকে সমতা ফেরান ব্রুনো পেটকোভিচ। টাইব্রেকারে ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার ডোমিনিক লিভাকোভিচ বাঁচিয়ে দেন রদ্রিগোর শট। চতুর্থ শটে মার্কুইনোস পোস্টে মারেন। ক্রোয়েশিয়া চারটিতেই গোল করেছে। প্রথম থেকে ব্রাজিলকে চাপে রাখার চেষ্টা করতে থাকে ক্রোয়েশিয়া। ব্রাজিলকে খেলার জন্য একটুও খোলা জায়গা দিচ্ছিল না তারা। বলের নিয়ন্ত্রণ বেশি ছিল ক্রোয়েশিয়ার পায়ে। মূলত প্রতি আক্রমণে গোলের চেষ্টা করছিল ক্রোয়েশিয়া। ১৩ মিনিটের মাথায় ডান দিক থেকে ক্রস করেছিলেন মদ্রিচ। কিন্তু সেই ক্রসে পা ঠেকাতে পারেননি পেরিসিচ। ম্যাচের ২২ মিনিটে পর পর দু’টি আক্রমণ করে ব্রাজিল। প্রথমে ভিনিসিয়াস, তার পর নেমার। কিন্তু দু’টি প্রয়াসই ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণ আটকে দেয়। ক্রোয়েশিয়াকে বেশি মনোযোগ দিতে দেখা যায় নেমারকে আটকানোর দিকে। তাকে ফাউল করা হতে থাকে বার বার। বাঁ দিকে ভিনিসিয়াসও গোলের মুখ খুলতে পারেননি। ৪২ মিনিটের মাথায় ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে বক্সের সামান্য বাইরে ফ্রিকিক করা হয়। নেমারের পাস বিপক্ষ ফুটবলারের গায়ে লেগে হালকা ঘুরে গেলেও জমা পড়ে গোলকিপারের হাতে। বিরতিতে আর কোনও গোল হয়নি। বিরতি থেকে ফিরে আক্রমণের ঝাঁজ বাড়িয়ে দেয় ব্রাজিল। ম্যাচ শুরু হওয়ার দু’মিনিট পরেই জোড়া আক্রমণ বাঁচিয়ে দেয় ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণ ভাগ। নেমারের শট গাভারদিয়লের পায়ে লেগে নিজের গোলেই ঢুকে যাচ্ছিল। ঝাঁপিয়ে বাঁচান ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার লিভাকোভিচ। তার পরে ক্রোয়েশিয়ার এক ফুটবলারের হাতে বল লাগলেও রেফারি ভিআরের সঙ্গে পরামর্শ করে পেনাল্টি না দেওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেন। ৫৭ মিনিটে রাফিনহাকে তুলে অ্যান্টনিকে নামান তিতে। ডান দিক থেকে আক্রমণ বাড়াতে চাইছিলেন তিনি। নেমেই ডান দিকে পাস বাড়িয়েছিলেন অ্যান্টনি। অল্পের জন্য গোল হয়নি। ম্যাচের ৮০ মিনিটের মাথায় অ্যান্টনির ক্রস পেয়েছিলেন রদ্রিগো। তার থেকে পাস পেয়েছিলেন পাকুয়েতা। তার শট আবার আটকে দেন সেই লিভাকোভিচ। অতিরিক্ত সময়ের শুরু থেকেই গোল করার মরিয়া চেষ্টা করতে থাকে ব্রাজিল। কিছুতেই একটাও আক্রমণ দানা বাঁধছিল না। বার বার ক্রোয়েশিয়ার বক্সে গিয়ে প্রতিহত হচ্ছিল তাদের আক্রমণ। এর মাঝেই দুর্দান্ত সুযোগ পেয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। বক্সের মধ্যে ভাল বল পেলেও বারের উপর দিয়ে উড়িয়ে দেন ব্রোজোভিচ। সহজ সুযোগ নষ্ট করে ক্রোয়েশিয়া। অপেক্ষার মুহূর্ত শেষ হয় ১০৫ মিনিট। নেইমারের অসাধারণ গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। মাঝমাঠ থেকে মুভ শুরু করেছিলেন নেমারই। প্রথমে পাস খেলেন পেদ্রোর সঙ্গে। সেখান থেকে নেমার বল পেয়ে দেন পাকুয়েতাকে। পাকুয়েতার থেকে পাস পেয়ে গোলকিপার লিভাকোভিচকে এক টোকায় কাটিয়ে বল জালে জড়ান নেমার। ব্রাজিল ভেবেছিল তারা সেমিফাইনালে উঠে গিয়েছে। মুহূর্তের অসাবধানতায় গোল খেয়ে বসে তারা। ১১৭ মিনিটের মাথায় প্রতি আক্রমণে আসে ক্রোয়েশিয়া। সেখান থেকে পেরিসিচের পাসে বাঁ পায়ের শটে গোল করেন ব্রুনো পেটকোভিচ।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close