প্রবাসী সাংবাদিকদের পরিবারকে হয়রানী বন্ধের আহবান: পারভেজ-মনুর মুক্তি দাবী সিপিজে’র
|| সুরমা প্রতিবেদন ||
লণ্ডন, ২২ সেপ্টেম্বর : সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক ও বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শামসুল আলম লিটনের বড় ভাই নূর আলম চৌধুরী পারভেজ এবং সুরমার বিশেষ প্রতিনিধি ও লণ্ডন বাংলা চ্যানেলের প্রধান আব্দুর রব ভুট্টোর ভাই আব্দুল মক্তাদির মনুর মুক্তি দাবী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে)। আমেরিকার নিউইর্য়ক থেকে পরিচালিত বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার এবং স্বাধীন গণমাধ্যম বিষয়ে সোচ্চার অলাভজনক ও বেসরকারী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক এই সংস্থা ২০ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার তাদের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে সাংবাদিকদের স্বজনদের মুক্তির এই দাবী জানায়। কথিত সরকার বিরোধী প্রচারণার অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি এবং একইসঙ্গে বিদেশে বসে সাংবাদিকতা করাদের পরিবারের সদস্যদের আটক, হেনস্থা কিংবা যে কোনো ধরণের প্রতিশোধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকারও আহবান জানানো হয় সিজেপি‘র বিবৃতিতে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি নোয়াখালী শহর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা সাপ্তাহিক সুরমার সম্পাদক শামসুল আলম লিটনের বড় ভাই নোয়াখালী জেলা জাসদের সভাপতি নুর আলম চৌধুরী পারভেজকে একইভাবে কোনো কারণ ছাড়াই নিজ বাসভাবন থেকে তুলে নিয়ে যায়। একইভাবে মৌলভীবাজার শহর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাপ্তাহিক সুরমার বিশেষ প্রতিনিধি এবং লণ্ডন বাংলা চ্যানেল প্রধান আব্দুর রব ভুট্টোর ভাই, স্থানীয় ইউনিয়ন কয়েক বারের নির্বাচিত সদস্য আব্দুল মুক্তাদির মনুকে।
সিপিজে মঙ্গলবার নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই অবিলম্বে ও শর্তহীনভাবে নুর আলম চৌধুরী পারভেজ এবং আব্দুল মুক্তাদির মনুকে মুক্তি দিতে হবে। যেসব সাংবাদিক বিদেশে বসে সাংবাদিকতা করছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের হেনস্থা বন্ধের আহবানও জানানো হয় ওই বিবৃতিতে। এতে বলা হয়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর নোয়াখালী শহর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা নুর আলমকে গ্রেপ্তার করে। তিনি বৃটেনভিত্তিক সাপ্তাহিক সংবাদপত্র সুরমা’র সম্পাদক শামসুল আলম লিটনের বড় ভাই। এছাড়া তিনি ইউকেভিত্তিক রাজনৈতিক ইস্যুভিত্তিক টক-শো “টেবিল টক উইথ হাসিনা আখতার” এবং ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ডিজিটাল নিউজ প্লাটফরম “সোজাকথা” এর সম্পাদক শাহ আলম ফারুকের ভাই।
নূর আলম চৌধুরী পারভেজকে তুলে নেওয়ার কারণ হিসেবে আরো উল্লেখ করা হয়, গত ১৪ আগস্ট শাসমুল আলম লিটন সাপ্তাহিক সুরমার সম্পাদকীয়তে মানিলণ্ডারিংয়ে অভিযুক্ত সরকারী কর্মকর্তাদের জবাবদিহী করার জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আহবান জানিয়েছিলেন। আর এসব করণেই পুলিশের অভিযোগ যে, বৃটেনে বসে লিটন সোশ্যাল মিডিয়াতে সরকারের বিরুদ্ধে প্রোপ্যাগাণ্ডা ছড়াচ্ছেন এবং তাঁর সঙ্গে মিলে পারভেজও দেশের নাগরিকদের মধ্যে ‘বিভ্রান্তি ও উৎকণ্ঠা’ সৃষ্টি করছেন।
এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার শহর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আব্দুল মুক্তাদির মনুকে। তিনিও সুরমার বিশেষ প্রতিনিধি এবং লণ্ডন বাংলা চ্যানেলের প্রধান আব্দুর রব ভুট্টোর ভাই। সিপিজে’র এশিয়া প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর বেহ লিহ ই জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে বলেন, বাংলাদেশ সরকার যেভাবে সমালোচনাকারী সাংবাদিকদের পরিবারকে টার্গেট করছে তা প্রতিশোধ গ্রহণের একটি জঘন্য রূপ।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের কূটনৈতিক অংশীদার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই এদিকে নজর দেয়া উচিৎ। তিনি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই দ্রুততার সঙ্গে এবং শর্তহীনভাবে নুর আলম চৌধুরী পারভেজ এবং আব্দুল মুক্তাদির মনুকে ছেড়ে দিতে হবে। একইসঙ্গে বিদেশে বসে সাংবাদিকতা করাদের পরিবারের সদস্যদের আটক, হেনস্থা কিংবা যে কোনো ধরণের প্রতিশোধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
সিজেপি‘র বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছেন তার কিছু দিন আগেই এই গ্রেপ্তারের ঘটনাগুলো ঘটেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ, আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ই-মেইল পাঠিয়েছে সিপিজে। তবে এসব ই-মেইলের কোনো রিপ্লাই আসেনি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংগঠনটি জানিয়েছে, এর আগেও বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সাংবাদিক কনক সরওয়ারের বোন নুসরাত শাহরিন রাকাকে গ্রেপ্তার করেছিল। তিনি ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত আটক ছিলেন। এছাড়া সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক তাসনিম খলিলের মাকে দেশে বারবার হয়রানির বিষয়টিও উল্লেখ করা হয় সিজেপি‘র বিবৃতিতে।