ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে লেস্টারে হিন্দুমুসলিম সংঘাত
২৫ পুলিশসহ আহত অর্ধশতাধিক
৪৫ গ্রেফতার, ১ জনের ১০ মাসের কারাদণ্ড
শান্তি ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় কমিউনিটির চেষ্টা অব্যাহত
।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ২২ সেপ্টেম্বর : সাম্প্রতিক এশিয়কাপ ক্রিকেট টুর্ণামেন্টে ভারত বনাম পাকিস্তানের ম্যাচকে কেন্দ্র করে লেস্টারের হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের লোক চরম সংঘাতে জড়িয়েছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, গত ২৮ আগস্ট এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ভারত-পাকিস্তানের খেলা নিয়ে এই চলমান সাম্প্রদায়িক সংঘাতের সূত্রপাত। গত শনি ও রোববারও শহরের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত হয়েছে। সংঘাতে এপর্যন্ত ২৫ পুলিশ সদস্যসহ অর্ধশত লোক আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া ইতোমধ্যে একজনকে ১০ মাসের কারাদণ্ডও দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। এলাকায় এখানো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এবং হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের স্থানীয় কমিউনিটি উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় কমিউনিটির লোকজন সবধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় এভিংটনের কাউন্সিলের কাউন্সিলার এবং কমিউনিটি নেতা শহীদুল্লাহ খান বাংলামেইলকে জানিয়েছেন, সংঘাতটি স্থানীয় জনসাধারণের মাধ্যমে শুরু হয়নি। তিনি বহিরাগতদের দায়ী করে বলেন, প্রথমে ক্রিকেট ম্যাচকে কেন্দ্র সংঘাতের সূত্রপাত এবং বাহির থেকে আসা লোকদের মাধ্যমে তা বিস্তৃত হয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানীদের পক্ষে ভারতীয় এলাকায় স্লোগান থেকে শুরু হয় সংঘাতের। অতঃপর বিভিন্ন এলাকার হিন্দু ও মুসলমানরা তাতে যোগ দিয়ে তা অবনতির দিকে নিয়ে যান। তবে পরিস্থিতি শান্ত করতে সবধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা স্থানীয় হিন্দু—মুসলমানরা এক ও ঐক্যবদ্ধ রয়েছি। মঙ্গলবার স্থানীয় একটি মসজিদের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ সভা ও বিবৃতি প্রদানের বিষয় উলে্স্নখ করে তিনি পরিস্থিতি আর অবনতি না হওয়া এবং শান্তির ফিরিয়ে আনতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
লেস্টার পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, গত ২৮ আগস্ট এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ভারত—পাকিস্তানের খেলা নিয়ে এই চলমান সংঘাতের সূত্রপাত। আর এর সূত্র ধরে গত শনি ও রোববারও শহরের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত হয়েছে। এরই মধ্যে সহিংসতা ও ক্ষয়ক্ষতির বেশ কিছু ঘটনা পুলিশকে জানানো হয়েছে এবং ঘটনাগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
লেস্টার পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, শহরে হিংসা বা বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বিভিন্ন স্থানে পুলিশকে দুইপক্ষের সংঘাত থামাতে দেখা গেছে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর, সোমবার সাম্প্রদায়িক এই সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে কিছু মানুষ জয় শ্রীরাম স্লোগান দিতে দিতে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া উপাসনালয় আক্রান্ত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
পুলিশের অস্থায়ী প্রধান কনস্টেবল রব নিক্সন বলেছেন, ‘পূর্ব লিসেস্টার এলাকার বেশ কিছু অংশে বিশৃঙ্খলার অসংখ্য খবর পাওয়া গেছে। আমরা সেখানে অফিসার পাঠিয়েছি, আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছি, সেখানে আরও অফিসার যাচ্ছে, যাদের জনসমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।’
লেস্টার হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এই বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক ও বিকৃত তথ্যের প্রচারকেই দায়ী করেছেন শহরের মেয়র পিটার সোলসবি।
বিবিসির একটি রেডিও প্রোগ্রামে তিনি বলেছেন, ‘আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কিছু কনটেন্ট দেখেছি যা এখন খুব, খুব, খুব বিকৃত এবং এর মধ্যে কিছু সম্পূর্ণভাবে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ঘটনা সম্পর্কে মিথ্যা বলছে।’
সহিংসতা-থামাতে-মসজিদের বারান্দায় স্থানীয় হিন্দু-মুসলিম নেতাদের সভা:
উভয় সম্প্রদায়ের লোক শান্ত করে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় উভয় সম্প্রদায়ের লোকজন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই প্রেক্ষিতে গত ২০ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার মসজিদের বারান্দায় এক সভা শেষে যৌথ বিবৃতি দেয়ার সময় লেস্টার শহরের ইসকন হিন্দু মন্দিরের সভাপতি প্রদীপ গজ্জার বলেছেন, উত্তেজনা ও সহিংসতার উদগীরণ দেখে তারা দুঃখিত এবং তাদের হৃদয় ভেঙে গেছে। নিরপরাধ ব্যক্তিদের ওপর শারীরিক আক্রমণ এবং সম্পত্তির অযৌক্তিক ক্ষতি কোনো সভ্য সমাজের অংশ নয় এবং প্রকৃতপক্ষে আমাদের বিশ্বাসেরও অংশ নয়। এছাড়া, এশিয়া কাপের ভারত-পাকিস্তানের গ্রুপ পর্বের এক ম্যাচকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্যের লেস্টার শহরে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে চলতে থাকা উসকানি ও সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন উভয় সম্প্রদায়ের কমিউনিটির নেতারা এবং স্থানীয় রাজনীতিবিদরা।
মঙ্গলবার সকালে একটি মসজিদের সিঁড়িতে জড়ো হন হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতারা।
টাইমস রেডিওর সাক্ষাৎকারে লেস্টার শহরের বিরোধী লেবার এমপি জোনাথন অ্যাশওয়ার্থ সহিংসতার ঘটনার নিন্দা করে একে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন। সোমবার এক টুইট বার্তায় জোনাথন সবাইকে শান্ত, শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধনে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।