নিউজ

শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছি: ড. মোমেন(ভিডিওসহ)

"নূপুর শর্মার ইস্যুতে আমরা একটি কথাও বলিনি"

ঢাকা অফিস, ১৮ আগস্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বন্দর নগরী চট্টগ্রামের জেএম সেন হলে জন্মাষ্টমী উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে। শেখ হাসিনার সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা করতে অনুরোধ করেছি।’

সম্প্রতি নিজের ভারত সফরের প্রসঙ্গ টেনে মোমেন বলেন, ‘আমি বলেছি, আমার দেশে কিছু দুষ্ট লোক আছে, কিছু উগ্রবাদী আছে। আমাদের দেশ সারা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন না। আপনার দেশেও যেমন দুষ্টু লোক আছে, আমাদের দেশেও আছে। কিছুদিন আগে তাদের দেশেও এক ভদ্রমহিলা কিছু কথা বলেছিলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে একটি কথাও বলিনি। বিভিন্ন দেশ কথা বলেছে, আমরা বলিনি। এই ধরনের প্রটেকশন আমরা আপনাদের দিয়ে যাচ্ছি।

সেটা আপনাদের মঙ্গলের জন্য, আমাদের মঙ্গলের জন্য। আমরা যদি একটু বলি, তখন উগ্রবাদীরা আরও সোচ্চার হয়ে আরও বেশি বেশি কথা বলবে। তাতে ক্ষতিটা হবে কী? আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন হবে। স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘ভারতকে বলেছি, আমরা উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড কখনও প্রশ্রয় দেব না। এটা যদি আমরা করতে পারি, ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়ের মঙ্গল। শেখ হাসিনা আছেন বলে ভারতের যথেষ্ঠ মঙ্গল হচ্ছে। বর্ডারে অতিরিক্ত খরচ করতে হয় না। ২৮ লাখ লোক আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছর ভারতে বেড়াতে যায়। ভারতের কয়েক লাখ লোক আমাদের দেশে কাজ করে। এটি সম্ভব হয়েছে আমাদের সুন্দর অবস্থানের কারণে। সুতরাং আমরা উভয়ে এমনভাবে কাজ করব যাতে কোনো ধরনের উসকানিমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়। ভারত সরকারকে বলেছি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকবে যদি আমরা উভয়ে শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিই।’

ওদিকে, ২০২১ সালে দুর্গাপূজায় বিভিন্ন মণ্ডপে হামলা ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের একটি বিবৃতি নিয়ে ক্ষুব্ধ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠন। বিভিন্ন সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেছেন তারা। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন্মাষ্টমী উৎসবের অনুষ্ঠানে অংশ নিলে তাকে প্রধান অতিথি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নগরের চেরাগীপাহাড় মোড়ে কালো পতাকা মিছিল করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দুটি সংগঠন। দুজন নেতা ওই বক্তব্যের ব্যাখা দাবি করলে জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ঘটনাটি একবছর আগের। পূজার সময় কুমিল্লায় একটি দেবতার কাছে কোরআন শরীফ রেখে একটা ছবি তোলে। সেটা ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়ার পর কিছু গোষ্ঠী ওখানে আক্রমণ করে। আক্রমণ থামাতে গিয়ে পুলিশ গুলি করে। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে এই ঘটনা আমরা জানি, তখনও আমরা কিন্তু কুড়িগ্রামের কাহিনী জানতাম না। তখন আমাদের মন্ত্রণালয় যেসব কথা বলেছে, সত্যি কথা বলেছে। আমি শিক্ষক লোক, সত্য কথা বলি। আমরা বলেছি, তখন পর্যন্ত মোট ছয়জন লোক মারা যায়। তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, চারজন মুসলমান, দুজন হিন্দু। তবে আমরা একজন লোকও মারা যাক সেটা চাই না। এখানে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে অনেকে গল্প বলেছে, এটা খুবই দুঃখজনক। আমি যেটা করেছি, তা বিবেকের তাড়নায় করেছি। কিন্তু এটাকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে, টুইস্ট করে আপনাদের কাছে বলা হয়েছে। আমি বলছি- কোথাও সত্যের অপলাপ হয়নি। জেনেশুনেও আপনারা যদি প্রতিক্রিয়া দেখান, তাহলে এটা তো বড় মুশকিল।’

এদিকে হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বিরুদ্ধে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং  কালো পতাকা মিছিল করেছে। বৃহস্পতিবার নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘মিথ্যাচারের’ প্রতিবাদে ‘বিক্ষুব্ধ সনাতনী সমাজের’ ব্যানারে উক্ত প্রতিবাদের নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যালের প্রসিকিউটার রানা দাশ গুপ্ত। ওই সময় বিক্ষোভ সমাবেশের অদূরেই চট্টগ্রামের জেএম সেন হল মাঠে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিচ্ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

উল্লেখ্য, নগরের রহমতগঞ্জের জেএম সেন হলে জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ আয়োজিত সনাতন ধর্ম মহাসম্মেলনে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মিছিলের আগে সমাবেশে অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত বলেন, ‘সংখ্যালঘু জনগণের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের প্রতিবাদ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে।’ এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তার বক্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনারও আহ্বান জানান তিনি।

ভিডিও লিংক: https://fb.watch/e_naPZ9XEg/

Sheikhsbay

সম্পরকিত প্রবন্ধ

Back to top button
Close
Close