ফিচার

সিলেটের বন্যা দুর্গতাদের পাশে কমিউনিটি সংগঠনের পাশে লণ্ডনের বাংলামিডিয়া

সিলেট বিভাগের বন্যা দুর্গতের সামনের দিনগুলোতে রয়েছে পর্বত পরিমাণ সমস্যা, এসব সমস্যার মাঝে ঘরবাড়ী বিনষ্ট হওয়া বিরাট সমস্যা। ছাত্রছাত্রীদের বইখাতা নষ্ট হয়ে গেছে, তৈজসপত্র ভেসে গেছে, গবাদি পশু, মাঠের ফসল ভেসে গেছে। বন্যা দুর্গতদের নতুন জীবন শুরু করতে হলে তাদের সহযোহিতার প্রয়োজন। কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে বিচ্ছিন্নভাবে এই চালেঞ্জ মোকাবলো করা একেবারেই সম্ভব নয়। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে ইউনিসেফ, বৃটিশ সাহায্য সংস্থা, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন, রেডক্রস ও দাতা সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। বৃটেনে ও আমেরিকার বাংলাদেশী সংগঠনগুলোকে এ ব্যাপারে জড়িত করতে হবে। ব্যাংক, বীমা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসবিলিটির ফাণ্ড থেকে অর্থ অনুদান আনার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় বন্যা পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবলায় লণ্ডন বাংলা মিডিয়া যে প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মহলকে তা অবহিত করতে হবে। এবং সমন্বিতভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। লণ্ডনের বাংলা মিডিয়া কী ধরণের উদ্যোগ নিয়েছে এই সংবাদ ইতোমধ্যে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে। তার পরে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির উপর ভিত্তি করে নিচের প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছে। যাতে প্রিন্ট মিডিয়াতে এ নিয়ে লেখালেখকি অব্যাহত থাকে।

সেইভ সিলেট টুগেদার: সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য চ্যানেল এস ও পার্টনার সংগঠনের উদ্যোগে গত ২২ জুলাই, শুক্রবার লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবে অন্যতম পার্টনারদের নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিং-এ এ ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এতে মূখ্য আলোচক ছিলেন সেইভ সিলেট-এর প্রধান উদ্যোক্তা চ্যানেল এস এর ফাউন্ডার মাহি ফেরদৌস জলিল। লিখিত বক্তব্য রাখেন প্রজেক্ট-এর সমন্বয়ক, চ্যানেল এস এর চীফ রিপোর্টার মুহাম্মদ জুবায়ের ও ধন্যবাদ বক্তব্য রাখেন চ্যানেল এস এর চ্যরিটি কনসালটেন্ট এবং রেসকিউ এইড ট্রাস্ট-এর ট্রাস্টি হাসান রহমান। 

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট বিভাগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। ভিটে বাড়ী-সম্পদ হারিয়ে বিপন্ন হাজারো পরিবার। অসহায় মানুষের পাশে দাড়াতে চ্যানেল এস-এর উদ্যোগ- সেইভ সিলেট টুগেদার: ওয়ান কমিউনিটি, ওয়ান এ্যাপিল শিরোনামে। রেসকিউ এইড ট্রাস্টের মাধ্যমে চ্যানেল এস-এ দুদিন লাইভ চ্যারিটি এপিল অনুষ্ঠিত হয়। FPf যুক্ত হয় বৃটিশ বাংলাদেশী ১৫টি পার্টনার প্রতিষ্ঠান। সাধারণ দান এবং সবার সহযোগিতায় বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনে প্রায় ১শ হাজার পাউন্ড-এর প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রেস ব্রিফিং-এ কিছু প্রস্তাবিত কার্যক্রমের কথাও তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে ফ্লাড ভিকKটoদের ঘর নির্মান, ঘর সংস্কার, গবাদি পশু ক্রয়, টিউবওয়েল স্থাপন এবং জরুরী ম্যাডিক্যাল ক্যাম্প অন্যতম। তবে কিছু কিছু নিভৃত গ্রামে এখোনো জরুরী খাবারের প্রয়োজনীতা আছে, সেটিও বিবেচনায় রাখা হবে। থাকবে ফোডপ্যাক বিতরন কার্যক্রমও। 
উল্লেখ্য পার্টনারদের কারো কারো কাছ থেকে যেমন অগাম প্রতিশ্রুতির তুলনায় বেশী অর্থ কালেকশন হয়েছে, তেমনি কিছু পার্টনার ফান্ডরেইজিং-এ তুলনামূলক ভাবে কম সফল হয়েছেন। নূন্যতম ৫ হাজার পাউণ্ড-এর প্রতিশ্রুতি নিয়ে সেইভ সিলেট টুগেদার-এর প্রাইম পার্টনার হচ্ছে বৃটিশ বাংলাদেশ ক্যাটারাস এসোসিশেন (বিবিসিএ), এম কে সি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও শেফ ওনলাইন। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী শেফ অনলাইন প্রায় ৮ হাজার পাউন্ড কালেকশন করে শীর্ষে রয়েছে। ২য় অবস্থানে আছে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব, অংক ছাড়িয়েগেছে সাড়ে ৬ হাজার পাউন্ড।”

জমজম চ্যারিটি ট্রাস্ট ও টিভি ওয়ানের উদ্যোগে নিরাপদ ঘর নির্মাণের উদ্যোগ

‘‘বন্যায় সর্বহারা মানুষদের জন্য জমজম চ্যারিটি ট্রাস্ট ও টিভি ওয়ানের উদ্যোগে নিরাপদ ঘর নির্মাণের একটি মানবিক প্রয়াস হাতে নেয়া হয়েছে। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে মূল লেখা পাঠ করেন গোলাম রাসুল, ডিরেক্টর অপারেশন টিভি ওয়ান। বিশ্লেষণ করেন শায়খ আব্দুর রহমান মাদানী, ডাইরেক্টর, টিভি ওয়ান। সভাপতিত্ব করেন জমজম চ্যারিট্যাবল ট্রাস্ট এর চেয়ারম্যান জনাব মঈন উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে লিখিতি বক্তব্যে বলা হয়, এ বছরের বন্যায় যে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক তথ্য উপাত্ত না পাওয়া গেলেও সরকারের নানা বিভাগ ,অধিদপ্তর, জাতিসংঘের নানা সহযোগী সংস্থ্যা এবং নানা বেসরকারী দাতব্য সংস্থার তথ্য ও গবেষনা মতে সিলেট বিভাগের ৭৫% এলাকা কোন না কোন ভাবে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। তার মধ্যে সিলেট জেলার ৮০% এবং সুনামগঞ্জ জেলার ৯০% অঞ্চল সম্পূর্ন প্লাবিত হয়।

এ বছর বন্যায় ১৮টি জেলায় মোট আনুমানিক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৮৬ হাজার ৮১১ কোটি ৬৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭২ টাকা । যার ৮৫% ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শুধু মাত্র সিলেট বিভাগে। প্রাণ হারিয়েছে ৬৫ জন। প্রায় ৭ লাখ ৭ হাজার একরের ফসল নষ্ট হয়েছে। গবাদি পশু মারা গেছে প্রায় ৩ হাজার। ৬ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠদানের অনুপযোগী হয়েছে। শত শত মসজিদ এবং মাদ্রাসাও সম্পূর্ন বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো প্রায় ১১৮টি গ্রামের অধিকাংশ মানুষ নিজ ঘরে অবস্থান করতে পারে না । 
আর সিলেট বিভাগে সম্পূর্ন বা আংশিক ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১০০ হাজারেরও বেশি। বর্তমানে বন্যার পানি নেমে গেলেও আকস্মিক বন্যা যে ভবাবহ ক্ষতি করেছে তা অনুধাবন করে আপনাদের প্রিয় টিভি চ্যানেল টিভি ওয়ান এ সংকটের পুরো সময় সিলেটবাসীর পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার ধারাবাহিতায় জমজম চ্যারিট্যাবল ট্রাস্ট এবং টিভি ওয়ান এর যৌথ উদ্যোগ ‘সেইফ হোম গ্রেটার সিলেট’ ।
এ প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে মোট ১হাজার ঘর নির্মান করা হবে। মোট চার ধাপে ২৫০টি করে নির্মিত হবে ১হাজার ঘর। পাকা বা ইটের তৈরী দেয়াল এবং চাল (ছাদ) নির্মান করা হবে বজবুত টিন দিয়ে। দুই রুম বিশিষ্ট আধা পাকা এ ঘরের প্রতিটি রুম এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হবে ১৩ ফুট করে। আর প্রত্যেকটি বাড়িতে থাকবে বারান্দা। 
প্রত্যেকটি ঘরের আয়তন হবে ৪২৯ বর্গফুট। যা হবে ছোট একটি পর জন্য নিরাপদ এবং টেকসই স্থায়ী মাথা গোজার ঠিকানা। 
”সেইফ হোম” এর এমন একটি ঘর নির্মান করতে প্রয়োজন হবে মাত্র ২হাজার পাউন্ড।”

গৃহ নির্মাণ ও সিলেটের বন্যা পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবলোয় বৃটেনের কমিউনিটি সংগঠগুলোর পাশে এসে দাড়িয়েছে লণ্ডনের বাংলা মিডিয়া। দেশের যে কোনো দুর্দিনে লণ্ডনের বাংলা মিডিয়া কমিউনিটি সংগঠনগুলোর পাশে এসে দাড়ায়। এবারও তার ব্যাত্যয় ঘটেনি। তবে এবারের চ্যালেঞ্জ একটু ভিন্ন কারণ, এই প্রকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় শর্ট টার্ম, মিড টার্ম ও লং টার্ম ব্যবস্থা নিতে হবে। ইতোমধ্যে সিলেটে সেনাবাহিনী বন্যা দুর্গতদের পাশে এসে দাড়িয়েছে। দেশী বিদেশী এনজিও ও দেশ বিদেশের সমাজসেবী সংগঠগুলো দৃষ্টান্তমূলক কাজ করেছে। এই ধারাবাহিকতায় লণ্ডনের বাংলা মিডিয়া ও কমিউনিটি সংগঠগুলো বন্যা পরবর্তী যে ত্রাণ কাজের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অব্যাহত রাখতে হলে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ারেক সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। টক শোগুলোতে বন্যার কারণ তুলে ধরতে হবে। আকস্মিকভাবে বন্যা আসেনা,এখন নিয়মিতভাবে আসবে কারণ, উজারেন পানি যখন নেমে  আসবে তখন বন্যা হবেই। কাজেই মানুষকে সচেতন করতে হবে যাতে তাদের ন্যুনতম প্রস্তুতি থাকে। এ জায়গায় মিডিয়াকে পরকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে।

অনুলিখন: নজরুল ইসলাম বাসন ৩০ জুলাই, যুক্তরাজ্য।

Sheikhsbay

সম্পরকিত প্রবন্ধ

Back to top button
Close
Close