নিউজ

সিলেটের ওসমানিনগরে বৃটেনপ্রবাসী পরিবারকে বিষ প্রয়োগ: নিহত ২, ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, ১২ আত্মীয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ

ঘটনায় স্তম্ভিত বৃটেনের আত্মীয়-স্বজন ও কমিউনিটি: সুষ্ঠু তদন্ত দাবী

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ২৭ জুলাই : বাংলাদেশে গিয়ে নিজ এলাকা ওসমানিনগরে বিষ প্রয়োগের শিকার হয়েছেন এক বৃটেনপ্রবাসী পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের ৫ সদস্যকে রাতে কে বা কারা পুরো পরিবারকে বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করে। এতে ২ দুজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৩ জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালের আইসিইউতে রয়েছেন। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে ১২ আত্মীয়কে আটক করে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। পুলিশ ধারণা করছে যে, বিষ প্রয়োগই প্রবাসীদের মৃত্যুর কারণ এবং ভিকটিমের নিকটাত্মীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, গত ২৬ জুলাই, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের একটি ভাড়া বাসার কক্ষ থেকে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর পিতা ও পুত্রের মৃত্যু হয়েছে এবং মা, মেয়ে ও এক ছেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমেও শীর্ষ শিরোনাম হয়। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির অনলাইনেও বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এমন মর্মান্তিক ঘটনায় বৃটেনে বসবাসকারী নিহতদের আত্মীয়-স্বজন এবং কমিউনিটিতে শোক বিরাজ করছে। অনেক আত্মীয় ঘটনার পরপরই দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে হৃদয়বিদারক ঘটনার সুষ্টু তদন্ত দাবী করেছেন অনেকে। বাংলাগঞ্জ-ওসমানীনগর এডুকেশন ট্রাস্টের সাবেক সেক্রেটারি মিজানুর রহমান মীরু সাপ্তাহিক সুরমার সাথে আলাপকালে বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক ও হৃদয়বিদারক মন্তব্য করে তিনি ঘটনাটির সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবীর পাশাপাশি যারা বেঁচে আছেন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবী জানান।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত ঘটনার বিবরণে জানা যায়, সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর মঙ্গলচণ্ডি রোডস্থ একটি বাসা থেকে বৃটেনপ্রবাসী একই পরিবারের ওই ৫ জনকে অবচেতন অবস্থায় গত ২৬ জুলাই, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় ওসমানী নগর থানা পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পর দুপুর ২ টার দিকে ২ জনের মৃত্যু হয়। এরা হলেন পরিবার প্রধান রফিকুল ইসলাম (৫০) ও তাঁর কনিষ্ঠ পূত্র মাহিকুল ইসলাম (১৬)। তাদের মরদেহ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। পরিবারের অপর ৩ জন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনসেন্টিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)-এ চিকিৎসাধীন রয়েছে। পুলিশ এবং হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ওসমানীর আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবচেতন মা হোসনে আরা বেগম (৪৫) এবং মেয়ে সামিরা বেগম (২০)-এর অবস্থা আশঙ্কাজনক। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ৩য় জন পরিবারের প্রথম সন্তান সাদিকুল ইসলাম (২২)।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, প্রবাসী পরিবারের সদস্যদের খাদ্যে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে অবচেতন করা হয়েছে। আর এ কারণেই ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর পরই তাজপুর এলাকার ঝলক সাহার ওই বাড়িতে যান সিলেট জেলা পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিনসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা বাসার অন্যান্য বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।
পরে পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, “সার্বিকভাবে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, এটা একটা পয়জনিংয়ের ঘটনা ঘটতে পারে।”
“ঘরে যারা ছিলেন, ভিকটিমের নিকটাত্মীয়; তাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, রাতের খাওয়া—দাওয়ার পর তারা যখন ঘুমিয়ে পড়েন, তারপরে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এটা তদন্তের বিষয়। পয়জনিংটা হলো কীভাবে? কীভাবে উনারা মারা গেলেন। আমরা তদন্ত শেষে এটা বলতে পারব।”
“কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে, এটা বিষপাণে হত্যার ঘটনা মনে হচ্ছে।”
পুলিশ জানায়, পরিবারের সবাই বৃটেনপ্রবাসী। এ মাসেই তারা এখানে আসে। তাদের বাড়ি ওসমানীনগরে। পরিবারের একটি ছেলে অসুস্থ ছিল। চিকিৎসার সুবিধার্থে তারা এই বাসাটি ভাড়া নেয় এবং ১৮ জুলাই থেকে তারা এই বাসায় ভাড়া থাকতে শুরু করেন।
রফিকুল ইসলামের শ্বশুড়-শাশুড়ি এবং শ্যালকরা এই বাসায় ছিলেন। তাদের সঙ্গেই একটি কক্ষ ভাড়া নেন রফিকুল।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বৃটেনপ্রবাসী এ পরিবারটি গত ১২ জুলাই দেশে যান। তারা ৬ দিন ঢাকায় অবস্থানের পর সিলেটের ওসমানী নগর উপজেলার তাজপুরে যান গত ১৮ জুলাই।

নিহত পরিবার প্রধান রফিকুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি ওসমানীনগর উপজেলার সরিষপুরে এবং শ্বশুড় বাড়ী দয়ামীর ইউনিয়নের বড় দিরারাই গ্রামে। তিনি মৃত আব্দুল জব্বারের পূত্র, দীর্ঘদিন যাবৎ সপরিবারে বৃটেনপ্রবাসী এবং কার্ডিফের রিভার সাইড এলাকায় বসবাস করতেন। উল্লেখ্য, পুলিশ প্রবাসী পরিবারের সদস্যদের উপর এ বিষক্রিয়া এবং মর্মান্তিক ও পৈশাচিক হত্যা রহস্য উদঘাটনে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close