নিউজ

বিশ্বমিথ্যুক এখন বিশ্ববিপদ

** ল্যাণ্ডমাইন ও বিষাক্ত গ্যাস আমদানি নিয়ে চাঞ্চল্য বিশ্বব্যাপী
** আইএসপিআর এর দুই রকম বক্তব্যে নানা প্রশ্ন
** অস্ত্রের উৎস রাশিয়া
** বাংলাদেশ কি দাবার গুটি?
** জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্তের দাবি

।। আরিক শামস।।
লণ্ডন, ২১ জুলাই : চলতি সপ্তাহে (১৬ জুলাই, ২০২২) গ্রিসে দুর্ঘটনার শিকার বাংলাদেশ অভিমুখী অস্ত্রের চালানবাহী কার্গো বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ কেন ও কি উদ্দেশ্যে বিষাক্ত গ্যাস ও বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ ঘোষিত ল্যাণ্ডমাইন ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র বিমানযোগে জরুরী ভিত্তিতে আমদানি করছিল— এসব প্রশ্ন উঠতে দেখা গেছে বিভিন্ন মহল থেকে। বিষাক্ত গ্যাস ও ল্যান্ডমাইন বহনকারী এ বিপদজনক অস্ত্রের চালান জর্ডান, সৌদি আরব ও ভারতের নিরাপত্তার জন্যেও হুমকি হতে পারতো বিধায় ঘটনাটি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ মহল। এই বিপজ্জনক অস্ত্রের চালান ও রহস্যজনক আমদানীকে ঘিরে বাংলাদেশের মিডিয়ায় আলোচনার সুযোগ নেই বলে বিদেশে অসংখ্য প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সমালোচিত হচ্ছেন কতৃত্ববাদী সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা। বলা হয়ে থাকে, একজন বেপরোয়া জেনারেল কিংবা রাষ্ট্র/সরকার প্রধান শুধু তার দেশের জন্যই নয়, পুরো পৃথিবীর জন্যই বিপদজনক।

আন্তর্জাতিক মিডিয়ার খবর যেভাবে এসেছে:
* ১৬ জুলাই ২০২২ উত্তর গ্রিসে বিধ্বস্ত একটি কার্গো বিমান বাংলাদেশে ল্যান্ডমাইন সহ ১১টন (১১ হাজার কিলোগ্রাম) অস্ত্র নিয়ে যাচ্ছিল – সার্বিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নেবোজা স্টেফানোভিক (বিবিসি)।
* অস্ত্র ব্যবসায়ী গ্রূপ ভালিরের একজন পরিচালক বিবিসিকে বলেছেন বিধস্ত কার্গো বিমানে ল্যান্ডমাইন ছিলো।
* উত্তর গ্রীস ফায়ার ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট জেনারেল মারিওস অ্যাপোস্টোলিডিস সাংবাদিকদের বলেছেন, “অন্য কথায়, তীব্র ধোঁয়া এবং তাপ, সেইসাথে একটি সাদা পদার্থ যা আমরা চিনতে পারি না, তাই একটি বিশেষ সশস্ত্র বাহিনীর দলকে আমাদের জানাতে হবে যে এটি কী। এবং আমরা মাঠে প্রবেশ করতে পারি কিনা।”
* হেলেনিক ন্যাশনাল ডিফেন্স কর্মকর্তারা বলছেন, ল্যান্ড মাইন ডিসপোজাল টিম এবং পারমাণবিক, রাসায়নিক এবং জৈবিক অস্ত্রের জন্য এর বিশেষ ইউনিটের বিশেষজ্ঞরা একটি সন্দেহজনক সাদা পাউডার সনাক্ত করার জন্য সেখানে কাজ করছিলেন, যা দুর্ঘটনাস্থলে এবং এর আশেপাশে ছড়িয়ে পড়েছিলো : নিউ ইয়র্ক টাইমস

অস্ত্রের চালানের রুট:
এ অস্ত্রের চালানটি সার্বিয়া থেকে রাশিয়ান একটি কার্গো বিমানে প্রথমে জর্ডান, ও পরে সৌদি আরব ও দিল্লিতে তেল নিয়ে নিয়ে ঢাকায় অবতরণ করার কথা। এই তিনটি দেশের যেকোনো ঘনবসতিপূর্ণ জনপদে বিস্ফোরিত হতে পারতো এই কার্গো বিমান। জর্ডান, সৌদি আরব কিংবা ভারতের যে আকাশ সীমা এই বিমানটি ব্যবহার করেছে তার সবগুলো শহরই ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোন জনপদে বিস্ফোরণ হলে ঘটে যেত বিশাল বিপর্যয়। এমনকি কয়েক হাজার মানুষ মারা যেতে পারত। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্বের ভাব প্রকাশ করা হলেও আদৌ ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুলো এই ভয়াবহ অস্ত্রের চালান ও পরিবহন সম্পর্কে অবহিত ছিল কিনা? কারণ দিল্লিতে তেল গ্রহণের সময় অথবা কলকাতার উপর দিয়ে উড়ে আসার সময় এই দুর্ঘটনাটি সেখানে ঘটতে পারতো।

ল্যান্ডমাইন নিয়ে বাংলাদেশের দুই রেকর্ড:
হাসিনা ল্যাণ্ডমাইন আমদানি করছেন। এই দুঃসময়ে যখন সারা পৃথিবী নানা সংকটের মদ্ধ দিয়ে যাচ্ছে। অথচ ল্যাণ্ডমাইন নিয়ে এর বিপরীত ইতিহাস বাংলাদেশের আছে। উপসাগরীয় যুদ্ধে বাংলাদেশ ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে সৈন্য পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু যুদ্ধের পর ল্যান্ডমাইন অপসারণের জন্য কুয়েতের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সৈন্য পাঠান। ল্যাণ্ডমাইন বালুতে ঢুকে পড়লে সহজে খুঁজে পাওয়া যায়না। যন্ত্র ছাড়াও বালু সরিয়ে মাইন খুঁজতে হয়। এটা খুব জটিল কাজ। কিন্তু এই জটিল কাজ করতে গিয়ে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারান বাংলাদেশের অনেক সেনা সদস্য। বাংলাদেশের সেনা সদস্যরা নিজেদের জীবন দিয়ে বিপুল সংখ্যক মাইন অপসারণ করে কুয়েতকে তার নাগরিকদের জন্য আবারো নিরাপদ ও বাসযোগ্য ভূমিতে রূপান্তর করেন। তার জন্য কুয়েত বাংলাদেশের কাছে তাদের কৃতজ্ঞতা জানায়। কুয়েতের তৎকালীন আমীর খালেদা জিয়াকে ব্যাক্তিগতভাবে উপহার প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করেন। খালেদা জিয়া ব্যক্তিগতভাবে  উপহার গ্রহণ না করে দেশের জন্য কম দামে জ্বালানি তেল চান। কিন্তু ওপেকের সদস্য হওয়ায় কমদামে তেল দিতে পারেনি কুয়েত, তবে গ্রীসের পরিবহন কার্গোর ব্যায় নিজেদের দায়িত্বে নিয়ে পরোক্ষভাবে বাংলাদেশকে তেল দিয়ে সাহায্য করে কুয়েত। তারপরও খালেদা ও তাঁর পরিবারের জন্য আরও কিছু করতে চাইলে খালেদা জিয়া একটি এতিমখানা প্রতিষ্ঠায় কুয়েতের সাহায্য চান। কুয়েতে মাইন অপসারণ করতে গিয়ে অনেক সেনা সদস্যের সন্তানরা এতিম হয়ে যায়। তাদের পুনর্বাসন একটা বড় বিষয় হিসেবে বিবেচনা করেন খালেদা জিয়া। কুয়েত খালেদা জিয়াকে ২কোটি টাকার সমপরিমাণ অনুদান দেন। সেই অর্থ এখনো এতিমখানার তহবিলে জমা হয়ে আছে, যা ইতিমধ্যে তিন গুণেরও বেশি পরিমাণ হয়ে গেছে ও ব্যাংকে জমা আছে। লক্ষণীয় যে, একসময় প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বারবার বলতেন খালেদা এতিমদের টাকা মেরে খেয়েছেন। কুয়েতের ধমক খেয়ে হয়তো এখন এই কথা বলা বন্ধ করেছেন।

কেন এই অস্ত্র? কেন এয়ার কার্গো?
অস্ত্র ও বিস্ফোরকের মত সামগ্রী নিরাপত্তার কারণে সমুদ্রগামী জাহাজে আমদানি রপ্তানি করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই ১১ টন অস্ত্র কেন সমুদ্রযোগে না নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে কার্গো বিমানে নেয়া হলো এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কার জন্য নেয়া হচ্ছিল এই অস্ত্র? কারণ ল্যান্ড মাইন্ড ভারত বা মায়ানমার সীমান্তে বিছিয়ে রাখার জন্য নিশ্চয়ই নেয়া হচ্ছিল না? তাহলে এই ল্যান্ড মাইন, বিষাক্ত গ্যাস ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র কার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতো? বাংলাদেশের জনগণ কিংবা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কিংবা বিভিন্ন এলাকায় সরকার বিরোধী হিসেবে পরিচিত এলাকাগুলোতে এসব ল্যান্ডমাইন ও বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহার করার পরিকল্পনা ছিল কিনা, তা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
গ্রিসের কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনা কবলিত এলাকার কয়েক কিলোমিটারের  মধ্যে বাসিন্দাদের কয়েকদিন ঘরের বাইরে দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।কার্গোতে বহনকারী বিষাক্ত গ্যাস তাদের জীবনের জন্য হুমকি এ কথাও ঘোষণায় বলা হয়। দুর্ঘটনার দুদিন পরেও মাইন লাইন বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছে এলাবাসী।  ফায়ার ব্রিগেড পাশে থাকলেও নিরাপত্তার জন্য সেখানে অপারেশন চালাতে পারেনি। পাহাড়ি অঞ্চলে বিধস্ত হয় হওয়ায় সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে হাজার হাজার মানুষ।

ব্ল্যাকবক্সে পাওয়া যাবে সব তথ্য:
কার্গো বিমানটি ধ্বংস হলেও ব্ল্যাকবক্সে পাওয়া যাবে সব তথ্য।যত লুকোচুরি করা হোক না কেনো, বিমানটির ব্লাকবক্স উদ্ধার করে ইউরোপের এভিয়েশন কতৃপক্ষ দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব তথ্য পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে এই অস্ত্রের চালান নিয়ে টেকনিক্যাল সব প্রশ্নের পাশাপাশি জরুরী সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।

আইএসপিআর এর  দু’রকম বক্তব্য:
ইতিমধ্যে আন্তঃবাহিনীর জনসংযোগ দপ্তর আইএসপিআর এই ঘটনার ব্যাপারে দু’বারে দুই রকম বক্তব্য দেওয়ায় রহস্য আরো ঘনীভূত হয়েছে। প্রথম বক্তব্যে তারা কোন অস্ত্র আমদানির ঘটনা পুরোপুরি অস্বীকার করে পরে ইউরোপের মিডিয়ায় খবরটি প্রকাশিত হলে বেকায়দায় পড়ে আরেকটি বক্তব্য দেয়া হয় সেখানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর ট্রেনিংএর জন্য এই আমদানির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিষাক্ত গ্যাস আমদানি সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি ওই বিবৃতিতে। এ নিয়ে আর কোন আলোচনা বা সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ অথবা নির্দেশনা ও দেয়া (পরোক্ষ হুমকি) হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে আসলেই বাংলাদেশের বর্তমান সেনাপ্রধান ভয়াবহ এই অস্ত্রের চালান সম্পর্কে আদৌ কিছু জানতেন কিনা? কারণ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও তার সামরিক উপদেষ্টা সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন

কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ:
রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ শুধু অস্ত্র নয়, এর আগে চার গুন দামে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র কিনেছে। মোটা অংকের কমিশন যে সেখানে জড়িত, তা ইতিমধ্যে সবার কাছে প্রতিষ্ঠিত। হাসিনা সরকার এইসব তথ্যবহুল ও বস্তুনিষ্ঠ-বিশ্বাসযোগ্য সমালোচনার জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকায় (১৫ বিলিয়ন ডলার) মাত্র ২২০০ মেগাওয়াট পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র কিনছে রাশিয়া থেকে, যেখানে ভারত একই প্রকল্প কিনেছে মাত্র ৪.২ বিলিয়ন ডলারে। একইভাবে ভয়াবহ এই অস্ত্রের চালানকে ঘিরেও বিপুল কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ করছেন সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ মহল।অস্ত্রের চালানের উৎস রাশিয়া এটাও এখন ইউরোপে ব্যাপকভাবে আলোচিত। সার্বিয়াকে শুধু রুট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তদন্তে এইসব সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সামরিক সূত্রগুলো তাদের ধারণা নিশ্চিভাবে উল্লেখ করেছেন সাপ্তাহিক সুরমাকে। 

বাংলাদেশ কি দাবার গুটি?
সার্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীনিকোলা সেলাকোভিচ বাংলাদেশ সফর করেন গত ২৫-২৬মে। এই সফরে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানী ও সরকারী কর্মকর্তাদের ভিসা-ফ্রী যাতায়াতের সুযোগ তৈরির কথা বলা হয়েছে প্রকাশ্যে। কিন্তু ঢাকার কূনৈতিক পাড়া সেগুনবাগিচায় আমাদের সূত্রগুলো বলছে ভিন্নকথা। এই অস্ত্রচুক্তি ছিল সফরের মুখ্য বিষয় এবং তা ঢাকার পশ্চিমাদেশের কূটনীতিক সূত্রগুলোতে ফাঁস হয়ে যায়। তারই পরিণামে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে হাসিনা সরকারকে বিশ্বের কাছে এক্সপোজ করে দেয়া হলো। সূত্রগুলো আরও বলছেন, পুরো বিষয়ে বাংলাদেশের উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখা ক্ষমতাধর এক বা একাধিক দেশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরের সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশ কি তাহলে ক্ষমতাধর পক্ষগুলোর দাবার গুটিতে পরিণত হয়েছে?

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্তের দাবি
:
এদিকে, বাংলাদেশের জন্য মরণাস্ত্র বহনকারী এই প্রশ্নবোধক কারগো বিমানের পুরো ঘটনা তদন্তের জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে জরুরী ভিত্তিতে তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন অভিজ্ঞ মহল।  তারা বলছেন বাংলাদেশ সরকারের খামখেয়ালী অথবা স্বেচ্ছাচারিতার জন্য বিশ্বের অনেক দেশেরই মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এই বিপদজনক কার্গো বিমানটি অনেক বড় মাপের বিপদের কারণ হতে পারতো। ভবিষতে অন্য যেকোনো আরও দুর্ঘটনা এড়াতে এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত জরুরী। ল্যান্ডমাইন ও বিষাক্ত কেমিক্যাল অস্ত্র উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ (আমদানী-রফতানী) নিষিদ্ধকরণে একাধিক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে বাংলাদেশ স্বাক্ষরকারী দেশ।  আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এইসব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে বাংলাদেশ বেআইনি কাজের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নিরাপত্তা হুমকিও তৈরী করেছে। 
সাপ্তাহিক সুরমার সম্পাদক শামসুল আলম লিটন পত্রিকাটির সম্পাদকীয় বোর্ড ও পাঠকদের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ মহাসচিব মি. এন্টোনিও গুটেরেস’এর প্রতি জরুভিত্তিতে পুরো ঘটনাটি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। বিপদজনক অস্ত্রের এই চালান শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রশিক্ষণের কথা বলে জাতিসংঘকেও এর সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক চুক্তির অধীনে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ এই ১১টন অস্ত্র কি নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য নেয়া হচ্ছিলো? তাহলে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর নাম কেন ল্যান্ড মাইন ও রাসায়নিক অস্ত্র আমদানি করা হচ্ছিলো? জাতিসংঘের তদন্তে এই প্রশ্নগুলোর স্পষ্ট উত্তর জানতে চাওয়া হয়েছে। সম্পাদকের অফিসিয়াল পত্রে জাতিসংঘকে নিরাপত্তার জন্য হুমকির মতো এমন বিষয় থেকে প্রাতিষ্ঠানিক দায়মুক্তির জন্য হলেও জরুরী ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক প্যানেলের মাধ্যমে তদন্ত ও রিপোর্ট প্রকাশের জোর দাবি জানানো হয়েছে। এর আগেও আল জাজিরার বহুল আলোচিত প্রামাণ্যচিত্র “অল দা প্রাইম মিনিস্টার্স ম্যান”-এ ইসরাইল থেকে আঁড়িপাতা যন্ত্র, যা বাংলাদেশে রাজনৈতিক দমন পীড়নে ব্যবহারের জন্য বিশ্বব্যাপী নিন্দা কুড়িয়েছে, তাকেও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীর কাজে আমদানী বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। জাতিসংঘ তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের এই অসত্য দাবী প্রত্যাখ্যান করে। 

বিশ্ব মিথ্যুক এখন বিশ্ব বিপদ:
ষাটের দশকে বিখ্যাত আমেরিকান মুভি “ডক্টর স্ট্রেইন্জলাভ”-এ একজন অপ্রকৃতিস্থ জেনারেল রাশিয়ার উপর আণবিক বোমা হামলা করতে উদ্যত হয়। কিন্তু অল্পের জন্য পৃথিবী একটা পারমাণবিক যুদ্ব থেকে বেঁচে যায়। বাস্তব একটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে নির্মিত ছবিটি এই বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত করেছে, একজন বেপরোয়া জেনারেল কিংবা রাষ্ট্র/সরকার প্রধান শুধু তার দেশের জন্যই নয়, পুরো পৃথিবীর জন্যই বিপদজনক। বাংলাদেশের স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী এমনই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। এখন তিনি শুধু বাংলাদেশ নন, বিশ্বের অন্যান্য অংশের জন্যেও ক্রমেই বেশী বিপজ্জনক হয়ে উঠেছেন। মি. পুতিনের প্রকাশ্য সমর্থক শেখ হাসিনা পুতিনের পথেই চলছেন এবং পুতিনের মতো নিজ দেশের ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য নানাভাবে পৃথিবীর জন্য হুমকি তৈরী করছেন। ইতিমধ্যে তার কতৃত্ববাদী শাসনের কারণে জীবনের নিরাপত্তার জন্য সাংবাদিক, ব্লগার, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী মিলিয়ে অন্ততঃ এক মিলিয়ন মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে আরও বেশী হতে পারে কারণ তার শাসন ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যাও দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়েছে।বাংলাদেশের ভিতরে নিজের কতৃত্ব অব্যাহত রাখতে উন্নয়ন, মেগা প্রকল্প আর মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির ভুয়া গল্প একতরফা প্রচার করেন। কিন্তু প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইউরোপে গ্রীস, অস্ট্রিয়া, তুরস্ক এবং লিবিয়া, সিরিয়াসহ সবগুলো শরণার্থী শিবিরে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী শরণার্থীর উপস্থিতি নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে। এইসব উদ্বেগের খবর বিশ্বের সামনে তুলে ধরছে  শেখ হাসিনা এখন বিশ্বের জন্যও বিপদ হিসেবে আভির্ভূত হয়েছেন। বিশ্বমিথ্যুকের তকমার পাশাপাশি তিনি এখন প্রকৃতই বিশ্ববিপদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে চলেছেন।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close