নিউজ
Trending

“আব্দুল গাফফার চৌধুরী- আমরা কি ভুলিতে পারি”

বাংলাদেশ ও লন্ডনে শোকের ছায়া


সুরমা প্রতিবেদন।
লন্ডন ২০মে। “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি”- অমর একুশে গানের রচয়িতা বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী  ১৯মে বৃহস্পতিবার লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮৮ বছর। দীর্ঘদিন ধরে দুরারোগ্য কিডনি জনিত রোগে ভুগছিলেন একুশে পদকসহ বহু সম্মাননাপ্রাপ্ত এই প্রখ্যাত সাংবাদিক। শুক্রবার বাদ জুম্মা ব্রিকলেন মসজিদে জানাজা শেষে আলতাব আলী পার্কে আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন দল ও কমিউনিটি সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। জানাজা ও আলতাব আলী পার্কে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে নেমেছে শোকার্ত মানুষের ঢল। আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে বাংলাদেশে ও লন্ডনে বাঙালী কমুনিটির মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর মৃত্যুর খবরের পাশাপাশি ঘুরে ফিরে আসে অমর সেই গানের কলি – “আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী- আমরা কি ভুলিতে পারি(?)”

আলতাব আলী পার্কে কমিউনিটি পক্ষ থেকে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী’র প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়

১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়ার চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। তাঁর বাবা হাজী ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা জহুরা খাতুন। ১৯৫০ সালে গাফফার চৌধুরী পরিপূর্ণভাবে কর্মজীবন শুরু করেন। এ সময়ে তিনি ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। মহিউদ্দিন আহমদ ও কাজী আফসার উদ্দিন আহমদ তখন ‍‘দৈনিক ইনসাফ’ পরিচালনা করতেন। ১৯৫১ সালে ‘দৈনিক সংবাদ’ প্রকাশ হলে গাফফার চৌধুরী সেখানে অনুবাদকের কাজ নেন। এরপর তিনি বহু পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন।

মাসিক সওগাত, দিলরুবা, মেঘনা, ইত্তেফাক, আজাদ, জেহাদ ও পূর্বদেশসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন বরেণ্য এই সাংবাদিক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতা পৌঁছান। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক জয়বাংলায় লেখালেখি করেন। এ সময় তিনি কলকাতায় দৈনিক আনন্দবাজার ও যুগান্তর পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবেও কাজ করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দৈনিক জনপদ বের করেন। লন্ডনে নতুন দিন ও জাগরণ পত্রিকা সম্পাদনার পাশাপাশি বহু পত্র পত্রিকায় তিনি নিয়মিত-অনিয়মিত কলুম লিখেছেন।  

১৯৭৩ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজিয়ার্সে ৭২ জাতি জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যান তিনি। দেশে ফেরার পর তার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে কলকাতা নিয়ে যান। সেখানে সুস্থ না হওয়ায় তাকে নিয়ে ১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাসে লন্ডনে যান। এরপর তাঁর প্রবাস জীবনের শুরু।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ছোটদের উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘সম্রাটের ছবি’, ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’, ‘বাঙালি না বাংলাদেশী’সহ তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ৩০। এছাড়া তিনি কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ নাটক লিখেছেন। এর মধ্যে আছে ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’, ‘একজন তাহমিনা’ ও ‘রক্তাক্ত আগস্ট’।

কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন গাফফার চৌধুরী। ১৯৬৩ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার পান তিনি। এছাড়া বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদকসহ আরও অনেক পদকে ভূষিত হয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মরহুম আবদুল গাফফার চৌধুরীর মরদেহ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে যত দ্রুত সম্ভব ঢাকায় প্রেরণের জন্যে বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস উইং এর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে ।

ঢাকায় স্ত্রীর কবরের পাশে দাফন: হাইকমিশনার

 আবদুল গাফফার চৌধুরীকে ঢাকার মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে সমাহিত করা হবে। মরহুমের পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম বলেন, ‘আমরা ওনার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, আবদুল গাফফার চৌধুরীর অন্তিম ইচ্ছা ছিল, তাকে যেন স্ত্রীর কবরের পাশে দাফন করা হয়। পরিবারের সদস্যরা চাইছেন, ওনার শেষ ইচ্ছেটা পূরণ হোক। আমরাও সেভাবে ব্যবস্থা করছি।’

কমিউনিটিতে শোকের ছায়া:

টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমানের শোক

খ্যাতনামা সাংবাদিক ও কলামিষ্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে টাওয়ার হ্যামলেটসের জনগণের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান।

এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, “আব্দুল গাফফার চৌধুরীর প্রয়ানে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে যে শূণ্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তা সহজে পূরণ হবার নয়। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকায় অনেক ছাত্র-জনতার জীবন উৎসর্গের ঐতিহাসিক দিন ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি স্মরণে সেই সময়ে তাঁর লেখা “আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি” গানটি তাঁকে অমর করে রাখবে। তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের কমিউনিটির ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশেও অবদান রেখেছেন। তাঁর এই অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৯ সালে তাঁকে বারার সর্বোচ্চ সম্মান “ফ্রিডম অব দ্যা বারা” এওয়ার্ড প্রদান করেছিলো টাওয়ার হ্যামলেটস্ কাউন্সিল।”

তিনি বলেন, “বাংলা ভাষাভাষি মানুষের কাছে পরম শ্রদ্ধেয় এই মহান ব্যক্তিত্বকে টাওয়ার হ্যামলেটসের জনগণও আজ স্মরণ করছে শ্রদ্ধার সাথে।” নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান মরহুমের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তাঁর শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব

লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ ও কোষাধ্যক্ষ সালেহ আহমেদ এক শোকবার্তায় মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সহানুভূতি ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি স্বজনদের ধৈর্য ধারনের শক্তি দানের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করেন।

সুরমা পরিবারের শোক:

 প্রধান সম্পাদক ফরিদ আহমেদ রেজা ও সম্পাদক শামসুল আলম লিটন সাপ্তাহিক সুরমা পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে বলেন, বাংলা সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার ইতিহাসে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর মৃত্যুতে যে শূন্যতা তৈরী হলো তা কখনো পূরণ হবার নয়।

যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ সভাপতি সুলতান শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুক, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী যুক্তরাজ্য সভাপতি গোলাম মোস্তফা পৃথক বিবৃতিতে  গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। তাঁরা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close