নিউজ

বিগসের ‘বিগ ডিল’

ঋণ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া: মেয়র বিগস
জরুরী সার্ভিসগুলো অব্যাহত ছিলো: সাবেক মেয়র লুৎফুর

|| সুরমা প্রতিবেদন ||
লণ্ডন, ২১ এপ্রিল : বর্তমান লেবার নেতৃত্বাধীন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল ফাণ্ডিংয়ের অভাবে এল্ডারলি, ইয়ূথ, ওমেন এবং এডুকেশন খাতসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ সেবাসমূহে বিপুল পরিমাণে ফাণ্ডিং কাট বা কর্তন করা দেওয়া হলেও কাউন্সিলের রিজার্ভ থেকে অন্যান্য বরাকে ঋণ প্রদান করা হয়েছে ৮৭ মিলিয়ন পাউণ্ড। আর এটি করার জন্য স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিস বা পরিষেবাগুলিতে অর্থ বিনিয়োগ না করায় বিভিন্নভাবে সমালোচিত হয়েছে কাউন্সিল। সমালোচকরা বলছেন, এটা জন বিগসের বিগ ডিল ছাড়া আর কিছুই নয়। ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বৃটেনের ১৪টি বারায় টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের উপরুল্লেখিত অর্থ পাওনা রয়েছে বলে কাউন্সিলের নথিগুলিতে দেখা গেছে। আর এজন্য বারার বিরোধীদলীয় অনেক রাজনীতিক ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ বিষয়টি নিয়ে চরম সমালোচনা করেছেন। তারা যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, এই অর্থ অন্য কোথাও ঋণ প্রদানের পরিবর্তে স্থানীয় সামাজিক সেবাখাতসহ অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করা উচিৎ ছিলো। অর্থাভাবে বিভিন্ন সেবামূলক সার্ভিস কাট করে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের রিজার্ভের অর্থ অন্য ১৪টি বারায় ঋণ প্রদানের সংবাদ একটি অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর বিষয়টি স্থানীয় জনসাধারণের মাঝেও বেশ সমালোচিত হচ্ছে। এব্যাপারে টাওয়ার হ্যামলেটসের বর্তমান মেয়র জন বিগসের বক্তব্য চেয়ে সুরমার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তাঁর একজন মুখপাত্রের মাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন যে, লোকাল গভর্ণমেন্ট এ্যাক্ট অনুযায়ী বৃটেনের কাউন্সিলগুলোর মধ্যে লোন দেয়া নেয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং আগেও এধরনের লোন দেওয়া হয়েছিলো বলে দাবী করা হয়। তবে এব্যাপারে সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিও তাঁর এক মুখপাত্রের মাধ্যমে জানান, আগে তা করা হলেও আমার প্রশাসন জরুরী সার্ভিসগুলোর ব্যাপারে খুবই সাবধানী ছিলো। আমার সময়ে বারার জনগুরুত্বপূর্ণ সার্ভিস কাট করা হয়নি বা সেসবের কারণে অন্যান্য সার্ভিসে তার কোনো প্রভাব পড়েনি।

টাওয়ার হ্যামলেটস লণ্ডনের সবচেয়ে বঞ্চিত বরোগুলির মধ্যে অন্যতম। কিন্তু এই বারার রিজার্ভ রয়েছে ৫৫৭ মিলিয়ন পাউণ্ড। লেবার নেতৃত্বাধীন এইকাউন্সিল এর আগে তার রিজার্ভের বেশী ব্যয় না করার জন্য সমালোচিত হয়েছিল। কারণ মুদ্রাস্ফীতির হার তার নগদ সুদের হারের চেয়ে বেশী হওয়ায় কাউন্সিল গত চার বছরে অর্থ হারিয়েছে। গত বছর কাউন্সিল মূল্যস্ফীতির জন্য ১১ মিলিয়ন পাউণ্ড হারিয়েছে।

অন্যান্য সংস্থায় অর্থ বিনিয়োগ করা বা ঋণ দেওয়া হল কাউন্সিলের রিজার্ভের উপর তহবিল সংগ্রহের একটি উপায়। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল অন্যান্য কাউন্সিলকে ৪ মিলিয়ন থেকে ১০ মিলিয়ন পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সাউথ লণ্ডনের সাউথওয়ার্ক কাউন্সিল, বার্মিংহাম সিটি কাউন্সিল এবং অ্যাবারডিন সিটি কাউন্সিল।
১৪টি কাউন্সিলে টাওয়ার হ্যামলেটসের দেওয়া ঋণের অর্থ তিন থেকে ১২ মাসের মধ্যে ফেরত দেওয়ার কথা, যার সুদের হার ০.০৭ শতাংশ থেকে ১.৫ শতাংশের মধ্যে। আসন্ন নির্বাচনে টাওয়ার হ্যামলেটসের কনজারভেটিভ পার্টির মেয়র প্রার্থী এলিয়ট ওয়েভার, কাউন্সিলের অর্থ যেভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে তার সমালোচনা করেছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, কাউন্সিলের যে মিলিয়ন মিলিয়ন পাউণ্ড অন্যান্য বারায় ঋণ দেওয়া হচ্ছে তা স্থানীয় পরিষেবাগুলিতে বিনিয়োগ করা উচিত।

তিনি বলেন “বিভিন্ন ছাপ থাকা সত্ত্বেও লেবার মেয়র এমনটিই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, তিনি স্বীকার করেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল দেশের সরকার দ্বারা অর্থায়ন করা অন্যতম সেরা বারা। এটি এতই সমৃদ্ধ যে এটি অন্যান্য কাউন্সিলকে কয়েক মিলিয়ন পাউণ্ড ধার দিতে পারে। বারার বাসিন্দারাও ভেবে আশ্চর্য হবেন যে, কেন আমাদের লাইব্রেরিগুলিকে লেবার মেয়র দ্বারা বন্ধ করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল এবং কেন যুব পরিষেবাগুলিতে কাটছাঁট করা দরকার ছিল।”

এখানে উল্লেখ্য যে, বর্তমান মেয়র জন বিগস প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই সার্ভিস—কাট অব্যাহত রেখেছেন। ইতোমধ্যে অনেকগুলো ইয়ুথ ক্লাব, কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিস, ওয়ানস্টপ সার্ভিস, ড্রাগ রিহিভিলেইশন সেন্টার নাফাস ও লাঞ্চন ক্লাবসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপুর্ণ সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর ৪০ মিলিয়ন পাউণ্ড সাশ্রয়ের লক্ষ্যে তরুণ সমাজের জ্ঞানার্জনের কেন্দ্র আইডিয়া স্টোর ও লাইব্রেরীগুলোও একদা বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো, তবে প্রতিবাদ ও আন্দোলনের মুখে পুরোপুরি তা না করা হলেও শ্যাডওয়েল এলাকার ওয়াটনি মার্কেটেস্থ আইডিয়ার স্টোরটি ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ঋণ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া: মেয়র বিগস
এবিষয়ে মেয়র জন বিগসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, লোকাল গভর্ণমেন্ট এ্যাক্ট অনুযায়ী বৃটেনের কাউন্সিলগুলোর মধ্যে লোন দেয়া নেয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মেয়রের একজন মুখপাত্রের মাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, “মানুষ যেমন একে অন্যের কাছ থেকে ধার-দেনা করে তেমনি কাউন্সিলগুলোও বিভিন্ন ইন্টারেস্ট রেটে বিভিন্ন প্রয়োজনে একে অন্যের কাছ থেকে স্বল্প মেয়াদে ধার দেনা করে । এর ফলে ইন্টারেস্ট থেকে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলগুলোর যে আয় হয় তা তারা বিভিন্ন সার্ভিসে ব্যয় করে। এই ইন্টারেস্টের হার ব্যাকিং সূদের হারের চেয়ে অনেক বেশী হওয়ায় তারা এই খাতকে বেশী পছন্দ করে। কাউন্সিল যে লোন দেয় তা তাদের লাভের জন্যই দিয়ে থাকে।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল যে লোন দিয়েছে তা বিভিন্ন সার্ভিসে বিনিয়োগ করা যেত বলে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা একেবারেই সত্য নয়।
কারন আইন মোতাবেক কাউন্সিল তার চলমান বাজেট বা কাউন্সিলের নিয়মিত সেবাখাত থেকে কোনো অর্থ লোন হিসাবে বিনিয়োগ করতে পারে না। এই লোন দেয়া অর্থের সঙ্গে কাউন্সিলের বিভিন্ন সার্ভিসে বাড়তি বিনিয়োগের কোনো সম্পর্ক নেই।
যে অর্থ লোন দেয়া হয় তা ক্যাপিটাল মানি (যা সার্ভিসে ব্যয় করা হয় না, যেমন পেনশন, ইন্সুরেন্স) অথবা রিংফেঞ্চ করা অর্থ (মুলধন হিসাবে জমা রাখা)। এই অর্থ বসিয়ে না রেখে লোন হিসাবে বিনিয়োগ করলে কাউন্সিলের জন্য বাড়তি আয় হয় বলেই তারা তা করে থাকে। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল অতীতেও এমন কাজ করেছে। ২০১৪/১৫ সালে বিভিন্ন কাউন্সিলগুলোকে ৬ মিলিয়ন পাউণ্ড লোন দেয়া হয়েছিল। ৩১ মার্চ ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের লোন ছিল ১শ ১৫ মিলিয়ন পাউণ্ড। কাউন্সিলের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনগুলোতে এই লোন দেয়া নেয়া এবং আয়ের হিসাব রয়েছে।”

জরুরী সার্ভিসগুলো অব্যাহত ছিলো: সাবেক মেয়র লুৎফুর
টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রথম নির্বাহী মেয়র লুৎফর রহমান বলেছেন, এই কঠিন সময়ে নিজের বারার সার্ভিসে কাট এর ক্ষেত্রে আরো অনেক বেশী দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিলো বর্তমান লেবার মেয়রের। ৫৫৭ মিলিয়ন পাউণ্ড রিজার্ভে রেখেছেন মেয়র, কিন্তু ইয়ুথ সার্ভিস, সোসাল সার্ভিসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিসে অসহনীয় কাট বা কর্তন করেছেন। যেসব সার্ভিসের অভাবে বারার বাসীন্দারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আর এই কঠিন সময়ে তিনি অন্যান্য কাউন্সিলে ৮৭ মিলিয়ন পাউণ্ড লোন দিয়েছেন, তা চরম হতাশাজনক। সাবেক এই মেয়র বলেন, আমাকেও শত মিলিয়নের উপর কাট নিতে হয়েছে। কিন্তু আমার প্রশাসন জরুরী সার্ভিসগুলোর ব্যাপারে খুবই সাবধানী ছিলো। জরুরী সার্ভিসগুলো অব্যাহত রাখতে আমরা অর্থ সাশ্রয় করেছি কৌশলে।
লৎফুর রহমান আরো বলেন, নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণে টাওয়ার হ্যামলেটসএ ক্লিনিং থেকে শুরু করে নানা জরুরী সার্ভিস কাট হয়েছে। ৫ বছর ধরে কাউন্সিল ট্যাক্স বৃদ্ধি, ক্রাইম বৃদ্ধিসহ আরো নানা কারণে জনগণ অসন্তুষ্ট। আমার সময়ে আমরা কাজ করছি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close