নিউজ

বর্ণাঢ্য আয়োজনে ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশন ইউকে’র স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

মিলনায়তন রুপ নেয় ঢাবি'র টিএসসি চত্বরে

।। সারওয়ার-ই আলম ।।
ছাব্বিশে মার্চ শনিবার বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপনকে কেন্দ্র ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশন ইউ কে’র অনুষ্ঠানটি কার্যত: রুপ নেয় প্রবীণ-নবীনের এক আনন্দঘন মিলনমেলায়। ষাটের দশক থেকে শুরু করে নব্বইয়ের দশকের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা কেউ নতুন করে জ্যেষ্ঠ সতীর্থদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আনন্দে আর কেউ কেউ করোনাকালের দীর্ঘ ব্যবধানে প্রিয় সতীর্থের সঙ্গে পুণরায় সাক্ষাতের আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠেন। টুং টাং শব্দ করে যন্ত্রশিল্পীরা যে সময়টাতে নির্ধারিত অনুষ্ঠান শুরুর প্রস্ত্ততি নিচ্ছিলেন সে সময়টা পুরো মিলনায়তনটি যেন রুপ নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র — টিএসসি চত্বরে। পুরো মিলনায়তনটি গম গম করছিল প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের পদচারণায়। বাংলাদেশের পতাকার রঙের সঙ্গে রঙ মিলিয়ে অভ্যাগতদের অনেকের পরনেই ছিল লাল-সবুজ পোশাক; যা অনুষ্ঠানে যোগ করে ভিন্ন আকর্ষণ।
সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ ইলফোর্ডের দ্য ড্রাইভ সেণ্টারের মিলনায়তনটি কানায় কানায় ভরে ওঠে। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নির্ধারিত কর্মসূচী। সাংবাদিক ও নাট্যকার বুলবুল হাসানের উপস্থাপনায় সূচনা পর্বে অভ্যাগতদের স্বাগত জানান সংগঠনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক। এই পর্বে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন গণআন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার ওপর আলোকপাত করে সারগর্ভ বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রতিবেদন বিষয়ক কার্যালয়ের সাবেক পরিচালক লেখক ডক্টর সেলিম জাহান। উল্লেখ্য তিনি সত্তরের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ছিলেন এবং পরবর্তীতে একই বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।
ডক্টর সেলিম জাহান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে মেধা নেতৃত্ব ও মু্ক্তবুদ্ধি চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একইসঙ্গে দশকের পর দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের প্রায় সকল আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভাষা আন্দোলনকে শুধু ভাষার আন্দোলন হিসেবে দেখেনি, দেখেছে স্বাধিকারের আন্দোলন হিসেবে।


তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আত্মত্যাগ তা ভোলার মত নয়। আমাদের সহপাঠীরা সে যুদ্ধে আত্মাহুতি দিয়েছিল। আজকের প্রজন্মের সেই গৌরবান্বিত ইতিহাস জানা দরকার।
ডক্টর জাহান বলেন, মেধা নেতৃত্বের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একসময় যে সম্মানের জায়গায়, মর্যাদার জায়গায় ছিল দু:খজনক হলেও সত্য যে আজ সে অবস্থানে আর নেই।
তাঁদের সময়কার ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে ডক্টর জাহান বলেন, ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক আজ ভেঙ্গে গেছে। ফলে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আজ রাষ্ট্রকে পরিস্কার করে বলতে হবে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসলে কী চায়। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যদি শিক্ষক নিয়োগ হয় তাহলে সে বিশ্ববিদ্যালয় মেধার নেতৃত্বে আসতে পারেনা। আগামী পঞ্চাশ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় যাবে তিনি সে মূল্যায়ণেরও দাবী জানান। বক্তৃতা পর্ব শেষে ডক্টর জাহানকে পুষ্পস্তবক দিয়ে সম্মাননা জানান এনামুল হক ও আনোয়ার খান।
আলোচনা পর্ব শেষে টেলিভিশন উপস্থাপক শামিমা মিতা ও নিগার সুলতানা পারভীন জলির সঞ্চালনায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

এ পর্বটি ছিল মূলত বিলেতে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য। এ পর্বে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শম্পা কুণ্ডুর কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের ‘ ও আমার দেশের মাটি’ গানটির সঙ্গে কবি সারওয়ার-ই আলমের স্বরচিত কবিতা পাঠ এবং সিনথিয়া দাস, নার্গিস শাহেদা ও তাসলিমা আখতার লিপির কবিতা পাঠ অনুষ্ঠানে মুগ্ধতা ছড়ায়। সঙ্গীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী মাহবুবুর রহমান সবুজ, ডাক্তার শম্পা দেওয়ান, তরুণ কণ্ঠশিল্পী জয়, শিশুশিল্পী মোহনা, আনন্দরুপ, রুমি এবং স্বাধীনতা ও নারী অধিকার নিয়ে নিবন্ধ উপস্থাপন করেন মেধাবী ছাত্রী নাহিয়ান রাইদা অরণ্য।

শেষ পর্বে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় দর্শকদের মুগ্ধ করেন সাংস্কৃতিক সংগঠন আনন্দধারার শিল্পীবৃন্দ। সাংস্কৃতিক পর্বে যন্ত্রসংযোগে ছিলেন অমিত দে, ফয়সল, তানজিল, সাগর প্রমুখ।
সাংস্কৃতিক পর্ব শেষে অভ্যাগতদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী আনওয়ার খান। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানটিকে সর্বোতভাবে সফল করতে সহযোগিতা করার জন্য তিনি সংগঠনের সদস্য ডক্টর সিরাজুল হক চৌধুরী, সৈয়দ ফাহিম আহমেদ, আশরাফ জামান, তপন সাহা, তারেক হাসান, শামিমা মিতা, মিনারা সুলতানা, আলাউদ্দিন সোহেল প্রমুখের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সাধারণ সম্পাদক অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করলে আনন্দঘন এ সন্ধ্যাটিকে স্মৃতিতে তুলে রাখার জন্য সতীর্থদের সঙ্গে ছবি তুলে একে অপরের কাছ থেকে বিদায় নেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীবৃন্দ। আর এভাবেই শেষ হয় ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশন ইউকে’র স্বাধীনতা দিবস উদযাপন।

উল্লেখ্য অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ষাটের দশকের ছাত্র, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সাবেক প্রধান সম্পাদক, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক গাজীউল হাসান খান, সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সদস্য হাবিব রহমান, সত্তরের দশকের দশকের ছাত্রী, বাংলা একাডেমির সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ সাহিত্য পদকপ্রাপ্ত কবি শামীম আজাদ, নব্বইয়ের দশকের ছাত্র সাপ্তাহিক সুরমার সম্পাদক শামসুল আলম লিটন, এনএইচএস’র ম্যানেজার ডক্টর মোস্তাফিজুর রহমান হারুণ, সাপ্তাহিক সুরমার বিভাগীয় সম্পাদক ডরিনা লাইজু, মলি মল্লিকা,নাদিয়া তারেক, কামরান আহমেদ, রেডব্রিজ কাউন্সিলের কাউন্সিলর সাংবাদিক সৈয়দা সায়মা আহমেদ, নৃত্যশিল্পী সোনিয়া সুলতানা প্রমুখ।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close