শেখ তাহির উল্লাহ‘র আইঅন টিভি সম্মাননা লাভ
বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিতে প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের অবদানের স্বীকৃতি
লণ্ডন, ৩ মার্চ : বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব, নিউপোর্ট আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আলহাজ্ব শেখ মো. তাহির উল্লাহ মুক্তিযুদ্ধের প্রবাসী সংগঠক হিসেবে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। বৃটেনের অন্যতম বাংলা মিডিয়া, স্যাটেলাইট চ্যানেল আইঅন টিভির পক্ষ থেকে বৃটেনে থেকে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারী, রোববার সন্ধ্যায় পূর্ব লণ্ডনের রয়েল রিজেন্সী হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বর্ষপূর্তিতে আইঅন টিভির আয়োজর করে বৃটেনপ্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা সংগঠকদের সম্মাননা জানানোর বিশেষ অনুষ্ঠান। উক্ত সম্মাননা অনুষ্ঠানে শেখ তাহির উল্লাহসহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে মুক্তিযুদ্ধে তাদের বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশেষ সম্মাননা স্মরক প্রদান করা হয়।
শেখ তাহির উল্লাহ মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকের হিসেবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও বৃটেনে আসার পর থেকেই এখানকার বাঙালি কমিউনিটির অগ্রগতি ও উন্নয়নে বিভিন্নভাবে ভূমিকা রেখে চলেছেন। ১৯৭১ সালে লণ্ডনে থাকাকালীন তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে এখানকার স্টিয়ারিং কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। ফাণ্ড সংগ্রহে সহায়তা থেকে শুরু করে হাইড পার্ক, ট্রাফালগার স্কয়ারের মিছিল—মিটিংয়ে নিয়মিত যোগ দিতেন। লণ্ডনস্থ পাকিস্তানী হাইকমিশন অবরোধ করতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন সময় পুলিশের হাতেও গ্রেফতারের শিকার হয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহচর্যে যাওয়ারও সৌভাগ্য হয়েছিলো শেখ তাহির উল্লাহর। ৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে খালাস পেয়ে লণ্ডনে আসলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আয়োজিত মিটিংয়ে তিনি যোগদান করেন। বিশেষ করে ৭৩ সালে নর্থ লণ্ডনের একটি হাসপাতালে বঙ্গবন্ধুর যখন একটি অপারেশন হয়েছিলো তখন তিনি তাঁর খুব ঘনিষ্ট সান্নিধ্যে যাবার সুযোগ পেয়েছিলেন।
১৯৬৮ সালে বৃটেনে আসেন শেখ তাহির উল্লাহ। প্রথমে লণ্ডনেই বসবাস শুরু করেন এবং নিজস্ব ব্যবসা চালু করেন। পূর্ব লণ্ডনের হ্যাসল স্ট্রিটে ব্যবসা করার সময় এখানকার ভারতীয় ও পাকিস্তানীরা তাকে ‘বাংলাদেশী সাব’ বলেই সম্বোধন করতো এবং চিনতো। বাঙালি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব প্রয়াত তসুদ্দুক আহমদ এমবিই‘র সুনামধন্য গঙ্গা রেস্টুরেন্টও কিছুদিন কাজ করেছেন।
এক সময় তিনি লণ্ডন থেকে কার্ডিফ চলে যান। সেখানে গিয়েও তিনি সেখানকার বাঙালি কমিউনিটির সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। ৮০ সালে ওয়েলসের নিউপোর্ট শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি। ৮৩ সালে নিউপোর্টে বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং শিক্ষার্থীদের নিজের গাড়ি দিয়ে স্কুলে আসা—যাওয়ায় সহায়তা করতেন। তিনি নিউপোর্ট বাংলা স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সেখানকার শাহপরান বাংলাদেশী জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন এবং এখনো মসজিদটির ট্রাস্টি রয়েছেন। তিনি স্থানীয় মেইনডি প্রাইমারী স্কুলের গভর্ণর ছিলেন। বিভিন্নক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নিউপোর্ট সিটি কাউন্সিল তাকে সিভিক এওয়ার্ডে ভূষিত করে। এছাড়া কমিউনিটিতে কন্ট্রিবিউশনের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১০ সালে তিনি চ্যানেল এস এওয়ার্ড লাভ করেন।
রাজনৈতিক, সমাজিক—সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পাশাপাশি বৃটেনের বাংলা মিডিয়ার সাথেও তাঁর সম্পৃক্ততা রয়েছে। অধুনালুপ্ত বাইল্যাঙ্গুয়েল সাপ্তাহিক ইউরোবাংলা’র ভাইচেয়ারম্যান ও ডাইরেক্টর ছিলেন তিনি। বিলেতের বাংলা মিডিয়ার প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠনক লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাবেরও তিনি লাইফ মেম্বার। এছাড়া কার্ডিফে ভাষাশহীদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনারের ফাউণ্ডার ট্রাস্টিদের একজন। বাংলাদেশী রাজনীতির জড়িত থাকার পাশাপাশি তিনি বৃটেনের মূলধারা রাজনৈতির সাথেও সম্পৃক্ত এবং লেবার পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য।
শেখ তাহির উল্লাহ শুধু এখানকার বাঙালি কমিউনিটিই নয়, দেশে নিজ এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা ও স্কুল—কলেজের উন্নয়নে তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। নিজ গ্রামের পুরাতন মসজিদটি পুনঃসংস্কার করে আধুনিক নির্মাণশৈলী প্রদানে ভূমিকা পালনকারীদেরও তিনি অন্যতম। স্থানীয় বিশ্বনাথ বাজারে সুপরিচিত অত্যাধুনিকি শপিং সেন্টার আল হেরার অন্যতম ডাইরেক্ট। এলাকার বৃহৎ ও প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাদানিয়া মাদ্রাসার একটি রুম তৈরী করে দেওয়াসহ মোহাম্মদিয়া মাদ্রাসায় ভূমি প্রদান করেন। এছাড়া এলাকার শিক্ষা উন্নয়নে গঠিত বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকের সিনিয়র সহ—সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
পারিবারিক জীবনে ১ ছেলে ও ২ মেয়ে সন্তানের জনক শেখ তাহির উল্লাহর বাংলাদেশের বাড়ি বিশ্বনাথ সদরের মুক্তির গাঁও।