মাফিয়াদের অপরাধের দায়: যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও সম্পর্কে নতুন মাত্রা
সম্পাদকীয় ।। ইস্যু ২২৩৩
সামনে পরিস্থিতি যাই দেখা যাক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে সুদূর প্রসারী প্রভাব ফেলবে; কূটনীতিক জগতের ওয়াকিবহাল মহল এ ব্যাপারে প্রায় নিশ্চিত।এমনকি এটা ও এখন প্রায় নিশ্চিত, বর্তমান সরকারের বিদায়ের পরেও বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগের তালিকা থেকে সহজে সরে যাবে না। মানবাধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের জন্য এটা অনেক বড় সুখবর। কিন্তু অর্থনীতির নানা দিকে যাদের যাতায়াত, যেমন-আমদানি-রপ্তানি, বেসামরিক প্রশাসন ও ব্যাংকিং খাতের লোকজনের জন্য এটা বড় দুঃসংবাদ। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের হুমকির প্রেক্ষিতে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে বাংলাদেশ নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর রাজনৈতিক ব্যবহারে যত্নবান হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। বাংলাদেশের সংবিধান এ কাজটি করার জন্য তাদের দায়িত্ব দিয়েছে এবং তারা সেই শপথও নিয়ে থাকেন। কিন্তু প্রতিদিন প্রতি ক্ষণে এই শপথ ভঙ্গ হয়ে চলেছে এবং মানবাধিকারের রেকর্ড দিনের-পর-দিন নিচে নামছে। বাংলাদেশ পরিস্থিতি এমন ভয়ানক হয়েছে যে এ অবস্থাকে উত্তর কোরিয়া চীন কিংবা রাশিয়ার চেয়েও খারাপ বলে অনেকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে তুলে ধরছেন ।
আলজাজিরা এই পরিস্থিতির সঙ্গে মাফিয়া কানেকশন এবং মানি লন্ডারিং প্রমাণসহ তুলে ধরেছিলো। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আলোচিত আল-জাজিরার ওই প্রামাণ্য প্রতিবেদনের মাধ্যমে এ কথা প্রমাণিত হয়েছিল বাংলাদেশ একটি অকার্যকর রাষ্ট্র এবং মাফিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। প্রামাণ্য তথ্যের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক মহলে এই সত্য ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, মার্কিনিদের নিষেধাজ্ঞা এই সত্যটি আবারো তুলে ধরল। ওই মাফিয়া তালিকায় প্রধানমন্ত্রীর লোক বলে চিহ্নিত হয়েছে সেনাপ্রধান ও খুনের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত তার ভাইয়েরা। প্রধানমন্ত্রীর লোক হিসেবে তারা চিহ্নিত। অন্যান্য আরও কিছু তালিকায় রয়েছে মানিলন্ডারিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবসায়ী ও রাজনীতির বেশ কিছু মানুষ। এই লোকগুলোর ব্যাপারে যে একশন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো নিতে শুরু করেছে, তার পরিণতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন মোড় নিয়েছে। কারণ এই লোকগুলো নিজ নিজ সেক্টরে শীর্ষ অবস্থান করছে ওর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। এদের বিরুদ্ধে সকল প্রামাণ্য অভিযোগ সরকার ইতিমধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে। সুতরাং তাদের অপরাধের দায় পুরো সরকার ও দেশকে দায়বদ্ধ করেছে।
বর্তমান নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা আরও দীর্ঘ করতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে চীনা ব্লকে আত্মসমর্পণে নতুন মেরুকরণ কতটা সহায়তা করবে সেটা এখনই বলা মুশকিল। তবে পশ্চিমাদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শতভাগ নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে, সেটি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে চলেছে । সম্পর্কের নতুন মেরুকরণের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গন্তব্য শেখ হাসিনা সরকার কোথায় নিয়ে যাবেন, সেটাই এখন দেখার জন্য অপেক্ষা করছে সকল পক্ষ।