মুক্তচিন্তা

বিলেতে মুক্তিযুদ্ধের উজ্জ্বল তারকারা

।। ফারুক আহমেদ ।।

২০২১ সালে আমরা বিজয়ের রজত জয়ন্তী উদযাপন করছি। ইতিহাসের বাটখারায় পঞ্চাশ বছর খুব বেশি না হলেও একেবারে কম নয়। কিন্তু এই সময়েও আমরা দেশে যেমন মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাটি সঠিকভাবে তৈরি করতে পারিনি, একইভাবে বহির্বিশ্বে জনমত গঠনে যুক্তরাজ্যের যে সকল বাঙালির বিশেষ অবদান রেখেছিলেন তাদের সরকারিভাবে মূল্যায়ন বা তাদের তালিকা তৈরি করার কাজটিও করতে পারিনি। কারণ বহবিধ। সেজন্য আমরা যারা বিলাতে বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা করি তারাও কম দায়ী নই। অথচ আমরা একে-অপরের সহায্য-সহযোগিতা করলেও এটা খুব সময় বা ব্যয়-সাপেক্ষ কাজও নয়। আমাদের অনেক বড় বড় মিডিয়া হাউস আছে। তারাও গত পঞ্চাশ বছর ধরেই নাকে তেল দিয়ে ছিলেন। হঠাৎ করে তারা জেগে উঠেন যখনই স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস আসে। তারপর আবারও নীরব।

আবার সমাজকর্মী লেবাসধারী আরেক দল আছেন তাদের প্রচার-প্রচারণায়, অনেক বেশি আলো পড়ে এমন জায়গায় নিজেদের উপস্থিতি উজ্জ্বল করে ধরার তালে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যারা কাজ করেছেন তাদের মধ্য থেকে এই সমাজকমীর্রা তাদের পছন্দের অথবা বলা যায় তাদের দলীয় অনুগতদের ঘটা করে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন। প্রক্রিয়াটি এখনো চলমান। এতে দোষের কিছু না থাকলেও আদৌ কি কোনো কাজ হচ্ছে? এর ওপর আছে আঞ্চলিক বিভাজন। এটা বাংলাদেশী আঞ্চলিকতা নয়, বিলাতকেন্দ্রীক আঞ্চলিকতা। লন্ডনবাসীরা মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের মূল কাজ তারাই করেছেন। বার্মিংহামবাসীরা মনে করেন এবং প্রমাণ করতে চান তারাই ছিলেন সংখ্যাগরিষ্ট। তারাই দলবদ্ধভাবে লন্ডনে এসে আন্দোলনে গতি সঞ্চার করেছেন। একইভাবে দাবি আছে ম্যানচেস্টার, ওল্ডহ্যাম সহ অন্যান্য এলাকাগুলোর মানুষের। অর্থাৎ ‘কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান।’ এখানে প্রশ্ন হচ্ছে এতে কি আদৌ কারো কোনো লাভ হচ্ছে? নাকি হবে?
২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকার, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য স্টুডেন্ট অ্যাকশন কমিটির বারো জনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন। খরবটি যুক্তরাজ্যব্যাপী অসন্তোষ দেখা দেয়। এই অসন্তোষ নিরসনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় তিন মাসের সময় দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেন। তারপর এই তালিকা নিয়ে খোদ সরকারি দল আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা বিভক্তি দেখা দেয়। সরকারের বাইরে থাকা বিরোধী দলগুলো এ বিষয়ে ছিল একেবারেই নীরব। তাদের ধারণা আওয়ামী লীগ তাদের দলভুক্তদের কোনো ধরণের স্বীকৃতি দেবে না। আমি গত প্রায় তিন দশক ধরে বিলাতে বাঙালির ইতিহাসের একজন ছাত্র। তাই এই সুযোগে দলীয় বলয়ের বাইরে থেকে তালিকাটি তৈরিতে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহীদের ফরমটি পূরণ করতে সাহায্য করার জন্য তিন সপ্তাহের ছুটি নিয়ে সহযোগিতা করতে চেষ্টা করি। আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট সুলতান মাহমুদ শরীফ, স্টিয়ারিং কমিটির অন্যতম সদস্য ড. কবির চৌধুরী, মহিলানেত্রী ফেরদৌস রহমান, শেফালী হক ও সোফিয়া রহমান; মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবদুল মসব্বির তরফদার, শামসুদ্দিন আহমদ এমবিই, আবদুল মছব্বির এমবিই, শাহ আবিদ আলী, বন্ধু সুজাত মনসুর, সৈয়দ জহিরুল ইসলাম (আফাক), আলমিুজ্জামান প্রমুখ।
এর আগে আমি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ, লন্ডন আওয়ামী লীগ, স্টিয়ারিং কমিটি সহ তখনকার প্রথম সারির নেতাদের আবেদনপত্র পূরণ করে রাখি যাতে তাদের আত্মীয়স্বজনেরা শুধুমাত্র দস্তখত করেই আবেদনপত্রগুলো হাইকমিশন বরাবরে পাঠাতে পারেন। কিন্তু অবাক হবার মতো বিষয় যে, এদের এক শতাংশও এই বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন না। বার বার চেষ্টা করেও তাদের সন্তানদের সাড়া পাওয়া যায়নি। অনেকের আবেদনপত্র পূরণ করে তাদের সন্তানদের কাছে ডাকযোগে পাঠিয়ে অনুরোধ করেছি শুধুমাত্র দস্তখত করে হাইকমিশনে পাঠাতে অথবা আমার কাছে পাঠালে আমি নিজে তা হাইকমিশনে পাঠিয়ে দেবো। এর পরেও বেশির ভাগ মানুষ এই আহবানে সাড়া দেননি। এর কারণগুলো নিয়ে পরবতীর্ সময়ে বিস্তারিত লিখবো।
বর্তমানে যারা জীবিত আছেন, যেমন — ড. কবির চৌধুরী, আবদুল মছব্বির তরফদার, হাবিব রহমান প্রমুখের পাল্টা প্রশ্ন ছিল, তাদেরকে আবেদনপত্র পূরণ করে মুক্তিযুদ্ধা হতে হবে কেন? তাদের নাম কি সরকারি দলিলপত্রে নেই? দ্বিতীয়ত তারাতো মুক্তিযোদ্ধা হতে চান না। কারণ, গত পঞ্চাশ বছর ধরে তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাজ্যবাসী বাঙালিদের ভূমিকা নিয়ে অন্তত বিশ থেকে পঁচিশটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। প্রত্যেকটি গ্রন্থে তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বলা হয়েছে। এখন তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কারণ কী? ‘মুক্তিযোদ্ধা’ একটি ইউনিক শব্দ। রণাঙ্গণে যারা জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন, এই সম্মান একমাত্র তাদেরই প্রাপ্য। এটা কি সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়? তাদের প্রশ্ন ছিল, কেউ যদি প্রশ্ন করে তারা কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন তাহলে এর উত্তর কী হবে, ইত্যাদি। আসলেও কথাগুলো সত্য। কিন্তু উত্তর দেবে কে?

প্রায় তিন মাস চেষ্টা করে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বজনমত গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালনকারী মাত্র নব্বইটির মতো আবেদনপত্র পূরণ করে দিতে সক্ষম হয়েছি। বাকিগুলো সাপোর্টিং দলিলপত্র ও দাবিদার ব্যক্তির কোনো উত্তরাধিকারী না পাওয়ায় পাঠানো সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে অনেককে দরখাস্তটি পূরণ করতে গিয়ে নানা ধরণের ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। ফরমে একটি কলামে আছে তিনজন সহযোদ্ধার নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা তালিকায় দিতে হবে! তা অনেকটা অসম্ভব বললেও বেশি বলা হবে না। এই বিড়ম্বনার তালিকায় একজন হচ্ছেন ইপসুইচ অ্যাকশন কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল আফতাব আলী। দেশ স্বাধীনের পর থেকে তিনি পূর্ব লন্ডনবাসী। দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, লণ্ডন-এরও জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন। তার সময়ে যিনি ইপসুইচ অ্যাকশন কমিটির প্রেসিডেন্ট বা অন্যান্য পদে ছিলেন তাদের প্রায় কেউই এখন আর জীবিত নেই। থাকলেও কে কোথায় আছেন তা তিনি জানেন না। প্রশ্ন হচ্ছে তিনি কি তার মৃত সহকমীর্দের বিবরণ এতে যোগ করবেন? যদি তাই হয় তাহলে তিনি কীভাবে জানবেন তাদের নাম, পিতার ও বাংলাদেশের ঠিকানা? সেজন্য তিনি বর্তমানে জীবিত এবং সে সময়ের ছাত্র দু’তিন জনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের পাল্টা প্রশ্ন ছিল আপনিতো ইপসুইচে কাজ করেছেন, আমরা কীভাবে আপনাকে রেফারেন্স দেবো? ভদ্রলোক একপর্যায়ে দরখাস্ত করবেন না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এর পরে সাংবাদিক তানভীন আহমদ তার আবেদনপত্রটি পূরণ করে দেন।

আবেদনপত্রে বলা হয়েছে এর সঙ্গে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র দেয়ার জন্য। আমরা কমবেশি সবাই জানি যে, ১৯৮২ সালে সরকার যখন মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র সংগ্রহ ও প্রকাশের উদ্যোগ নেন তখন কবি হাসান হাফিজুর রহমান একটি দল নিয়ে বিলাতে এসে দলিলপত্রগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে যান। এর সিকিভাগ তিনি কাজে লাগান, বাকিগুলো সম্ভবত এখনো সরকারি মহাফেজখানায় আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের ডকুমেন্টগুলোতো তারা ১৯৮২ সালেই তৎকালীন সরকারের কাছে দিয়েছেন, এখন আবার সেগুলো ফেরত পাবেন কীভাবে? সেক্ষেত্রে আমি তাদের আবেদনপত্রের সঙ্গে বিভিন্ন বইয়ের রেফারেন্স জুড়ে দিয়েছি। কিন্তু অবাক হবার মতো বিষয় যে, সে সময়ে গঠিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ-এর মূল কমিটির সদস্য নয় বরং পরবতীর্কালে যোগ দেয়া জনৈক ছাত্র এই বলে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন যে, আবু সাঈদ চৌধুরী, আবদুল মতিন, শেখ আবদুল মান্নান ও ড, খন্দকার মোশারফফ হোসেনের বই ছাড়া আর কারো বই মন্ত্রণালয় নাকি রেফারেন্স হিসেবে গ্রহণ করবে না। ২০১২ সালে প্রকাশিত আমার একটি বইয়ের রেফারেন্স দেয়ার কথা শুনে বলেছেন আমার বইও নাকি সরকারিভাবে স্বীকৃত নয়। এভাবে একগোষ্ঠী মানুষ আবেদনকারীদের বিভ্রান্ত করেছেন।

আমাদের বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু করলে হবে না। বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু নাম উচ্চারণ করলেও এই বছর স্টুডেন্ট অ্যাকশন কমিটির বারো জনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির মতো খণ্ডিতভাবে কিছু মানুষকে হয়তো খুশী করা হবে। এতে প্রকৃত মানুষ জনের কোনো মূল্যায়ন হবে না। আমার এই লেখায় বার বার যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নাম উচ্চারিত হতে দেখে বর্তমান আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৯৭১ সালের আওয়ামী লীগকে এক করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। আমি আগেই বলেছি ১৯৭১ সালে হাতেগোণা কয়েকজন ছাত্র ও পেশাজীবী ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টি করতেন। আর বাকি সবাই দুটি নামই জানতেন ক. শেখ মুজিব খ. আওয়ামী লীগ। তখন ১৩০টিরও বেশি অ্যাকশন কমিটি গ্রেইট ব্রিটেনে ছিল। সেই কমিটিগুলোকে কভেন্ট্রি সম্মেলনে ৩৩টি জোনাল অ্যাকশন কমিটির অধীনে নিয়ে আসা হয়। এগুলোর মধ্যে একমাত্র বার্মিংহামের তোজাম্মেল হক টনির নেতৃত্বাধীন অ্যাকশন এবং লন্ডনের জগলুল হোসেন, আবু মুসা প্রমুখের নেতৃত্বাধীন কমিটি ছাড়া বাকি প্রায় সব ক’টি কমিটি ছিল যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন। টনি হক আলাদাভাবে কাজ করলেও তিনি একনিষ্ঠভাবে স্বাধীনতার পক্ষেই কাজ করেছেন। তবে কোন ৩৩টি অ্যাকশন কমিটিকে অনুমোদন দেয়া হয়েছিল সে হিসেবে আমরা খুব সঠিক ভাবে এখনো জানি না। তবে আমার অনুসন্ধানে যে সকল অ্যাকশন কমিটির সন্ধান পেয়েছি সেগুলো নিয়ে পরে বিস্তারিত লিখবো। আজ শুধু বিলাত থেকে বহির্বিশ্বে জনমত গঠনে বিশেষ অবদান রাখা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের আটপৌরে একটি তালিকা প্রদান করেই লেখাটি শেষ করবো।

সাংগঠনিকভাবে তারা হলেন:

১. যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ
ক. প্রথম কমিটি
সভাপতি : গাউস খান (লন্ডন); সহ-সভাপতি: নেসার আলী (লন্ডন), হাজী সুরতুর রহমান ও মিম্বর আলী (লন্ডন); সাধারণ সম্পাদক: বি. এইচ. তালুকদার (লন্ডন); সাংগঠনিক সম্পাদক: আলহাজ এম. ইসমাইল; প্রচার সম্পাদক: আবদুর রউফ খান; দফতর সম্পাদক: সুলতান মাহমুদ শরীফ; কোষাধ্যক্ষ: আবদুল হামিদ ও তৈয়বুর রহমান। কমিটির সদস্যদের মধ্যে ছিলেন: ছইদ আলী, আবু তাহির, আবদুর রকিব, মইন উদ্দিন আহমদ (মনাফ মিয়া), বশির উদ্দিন আহমদ, সিফত উল্লাহ, রমজান আলী, রউফ খান, রিয়াজুল হক, সমরু মিয়া, নজির উদ্দিন আহমদ, শফিকুর রহমান, নজব মিয়া, আবদুল মুতাল্লিব চৌধুরী, আবদুল হামিদ ও আবদুল হক।

খ. দ্বিতীয় কমিটি:
সভাপতি: গৌস খান; সহ—সভাপতি: এ. কে. এম. হক, আব্বাস আলী, নেসার আলী; সাধারণ সম্পাদক : তৈয়বুর রহমান; সাংগঠনিক সম্পাদক : বি. এইচ. তালুকদার; দফতর সম্পাদক: সুলতান মাহমুদ শরীফ; প্রচার সম্পাদক : মিম্বর আলী; সমাজকল্যাণ সম্পাদক : সৈয়দ নূরুল হক; স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক: মোহাম্মদ আলী; কোষাধ্যক্ষ: আবদুল হামিদ।
সদস্য: আবদুল মান্নান (সানু মিয়া), আবদুল গফুর, আফরোজ মিয়া (বার্মিংহাম), জমসেদ মিয়া (বার্মিংহাম), আবদুল মুসাব্বির, সুরতুর রহমান সুরত মিয়া, আবদুর রকিব, রমজান আলী (বার্মিংহাম), আবদুর রউফ, বসির উদ্দিন আহমদ, আবদুল মুতাললিব চৌধুরী, আবদুল হক, শফিক মিয়া, তাইফুর মিয়া, হাফিজ মজির উদ্দিন, আবদুল মতিন (ম্যানচেস্টার), নজির উদ্দিন আহমদ (ম্যানচেস্টার), মকদ্দস বখ্ত (ম্যানচেস্টার), সইদ আলী, রউফ খান, রিয়াজুল হক, সমরু মিয়া, আবদুল আজিজ চৌধুরী, আবদুল গণি, এ বি এম ইসহাক, সিরাজুল হক, আবদুল আজিজ, মোহাম্মদ আবদুল হাকিম, ইসমাইল মিয়া, মোহাম্মদ ইসহাক, জিল্লুল হক, শফিকুর রহমান, মতিউর রহমান চৌধুরী।

২. লণ্ডন আওয়ামী লীগ
ক. প্রথম কমিটি: সভাপতি: মিনহাজ উদ্দিন; সহ—সভাপতি: এ.গফুর, এ.আজিজ চৌধুরী ও আবদুল আজিজ; সাধারণ সম্পাদক: সুলতান মাহমুদ শরীফ; সাংগঠনিক সম্পাদক: এ.আজিজ; প্রচার সম্পাদক: এ.গনি; দফতর সম্পাদক: এ.বি.এম.ইসহাক; মহিলা সম্পাদক: বেগম ইসহাক এবং কোষাধ্যক্ষ: সিরাজুল হক।

খ. দ্বিতীয় কমিটি:
সভাপতি: আবদুল মান্নান (সানু মিয়া); সহ—সভাপতি: মিনহাজ উদ্দিন, ইসমাইল মিয়া ও মোহাম্মদ ইসহাক; সাধারণ সম্পাদক: আবুল বশর; সাংগঠনিক সম্পাদক: সুলতান মাহমুদ শরীফ; গণ—সংযোগ সম্পাদক: জিল্লুল হক; সমাজসেবা সম্পাদক: মিম্বর আলী; শ্রম সম্পাদক: শাহ সিরাজুল হক; আন্তর্জাতিক সম্পাদক: আবদুর রকিব; মহিলা সম্পাদক: বেগম হেলেন তালুকদার; দফতর সম্পাদক: এম. এ. হাকিম এবং কোষাধ্যক্ষ: হাফিজ মজির উদ্দিন।

৩. ন্যাপ-কমিউনিস্ট
ক. মস্কোপন্থী: এরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীনের পক্ষে কাজ করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন — তাসাদ্দুক আহমদ, নিখিলেশ চক্রবতীর্, শেখ আবদুল মান্নান, ব্যারিস্টার সাখাওয়াত হোসেন, ডাক্তার মঞ্জুর মোর্শেদ তালুকদার, নবীন তপন রায় চৌধুরী, গৌরাঙ্গ চন্দ্র সাহা রায় (গৌরাঙ্গ শাহা রায়), ডাক্তার নূরুল আলম, শ্যামা প্রসাদ ঘোষ, সাইদুর রহমান মিঞা, অশীত চৌধুরী, এরশাদ আলী, শামসুল আলম, মুস্তাফিজউদ্দিন আহমদ, সামসুল আলম চৌধুরী, হাবিব রহমান, আবদুল হক, মাহমুদ এ রউফ, খায়রুল হুদা চৌধুরী, মোশতাক আহমদ কোরেশী, শফিক উদ্দিন আহমদ প্রমুখ; এবং বার্মিংহামের Ñ আজাদ মোহাম্মদ জগলুল পাশা, আজিজুল হক ভুঁইয়া, ইসমাইল আজাদ, মোস্তাফিজুর রহমান দীপু।
এদের মধ্যে জীবিত ও সুস্থ্য আছেন — নিখিলেশ চক্রবতীর্, গৌরাঙ্গ সাহা রায়, মাহমুদ এ রউফ ও হাবিব রহমান।

খ. চিনপন্থী: ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল কভেন্ট্রি সম্মেলনে তাদের প্রস্তাবগুলো গৃহীত না হওয়ায় তারা তাদের দলীয় আদর্শ অনুযায়ী নিজেদের মতো কাজ করেন। এই দলে ছিলেন Ñজিয়াউদ্দিন মাহমুদ, জগলুল হোসেন, মেসবাহ উদ্দিন, ব্যারিস্টার লুৎফুর রহমান শাহজাহান, আবু মুসা এবং বার্মিংহামের তোজাম্মেল হক টনি (টনি হক)।
এদের মধ্যে জীবিত আছেন — জগলুল হোসেন ও তোজাম্মেল হক টনি।

৩. বাংলাদেশ মহিলা সমিতি:
প্রধান উপদেষ্টা: লুলু বিলকিস বানু, প্রেসিডেন্ট: মিসেস জেবুন্নিসা বখ্স, সেক্রেটারি: আনোয়ারা জাহান, ট্রেজারার: সোফিয়া রহমান। সদস্যদের মধ্যে ছিলেন: ফেরদৌস রহমান, হাসিনা চৌধুরী, রুকাইয়া কবীর, তালেয়া রহমান, রোজমেরি আহমদ (তাসাদ্দুক আহমদের জার্মান স্ত্রী), মিসেস ডায়েন লাম্ব (জাকারিয়া খান চৌধুরীর ইংরেজ স্ত্রী), রিজিয়া চৌধুরী, সুরাইয়া খানম, নোরা শরীফ (সুলতান মাহমুদ শরীফের আইরিশ স্ত্রী), আনোয়ারা হক (ওরফে শেফালী হক), মিসেস ফাজিলা—তুন—নিসা, মুন্নি রহমান, জ্যোৎস্না হাসান, কুলসুম উল্লাহ, সেলিনা মোল্লা, মিসেস বদরুন নেসা পাশা (বার্মিংহাম), জেবুন্নিসা খায়ের, খালেদা উদ্দিন, পুষ্পিতা চৌধুরী, সায়েকা চৌধুরী, সাহানা আহমেদ, সাহানা ইসলাম, ফরিদা হাসান, ফিরোজা বেগম, তাহেরা হক, জেবুন্নিসা খায়ের, সুরাইয়া খালেক, উমা রকিব, নাহার ইসলাম, মুসফেকা ইসলাম, রাবেয়া ভঁুইয়া (পরবতীর্কালে ব্যারিস্টার ও মন্ত্রী), শাহেদা ইসলাম, শেফালী সুলতানা, হাসিনা চৌধুরী, জ্যোৎস্না হাসান, বেলা ইসলাম, মিসেস শরফুল ইসলাম খান প্রমুখ (পরবতীর্কালে সদস্য সংখ্যা প্রায় পাঁচশ জনে উন্নীত হয়)।

৪. ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ
ক. প্রথম আহবায়ক কমিটি। ১১ সদস্য বিশিষ্ট
আহবায়ক: মোহাম্মদ হোসেন মঞ্জু। সদস্য: কামরুল আহসান, এ. কে. নজরুল ইসলাম, খন্দকার মোশারফ হোসেন, আখতার ইমাম, জাকি উদ্দিন আহমদ, সুলতান মাহমুদ শরীফ, আনিসুর রহমান, শামসুদ্দিন আহমদ চৌধুরী (মানিক), শফিউদ্দিন মাহমুদ বুলবুল ও এ. টি. এম. ওয়ালী আশরাফ।

খ. দ্বিতীয় আহবায়ক কমিটি (মোহাম্মদ হোসেন মঞ্জু মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ভারতে চলে যাবার পরে):
আহবায়ক: খন্দকার মোশারফ হোসেন
সদস্য: মোহাম্মদ হোসের মঞ্জু, খন্দকার মোশারফ হোসেন, এ. কে. নজরুল ইসলাম, এ. টি. এম. ওয়ালী আশরাফ, সুলতান মাহমুদ শরীফ, শফিউদ্দিন মাহমুদ বুলবুল, শামসুদ্দিন আহমদ চৌধুরী (মানিক), জিয়া উদ্দিন মাহমুদ, লুৎফুর রহমান শাহজাহান, আখতার ইমাম ও কামরুল ইসলাম।
পরবতীর্কালে যারা সদস্য হিসেবে কাজ করেন: সুরাইয়া খানম, আনিস আহমদ, ফজলে রাব্বি মাহমুদ হাসান, আনিসুর রহমান, মঞ্জুর মোর্শেদ, এম ইয়াহিয়া, আফরাজ আফগান চৌধুরী, ড. হুজ্জাত আলী প্রমাণিক, আবদুল হাই খান, মাজেদ সওদাগর, আমিনুল ইসলাম, ড. এলাহী, আলতাফ হোসেন, এ এফ এম কবির, আবদুল আজিম, আবদুল করিম, জাকিউদ্দিন আহমেদ, মাহমুদ এ রউফ, এম আই চৌধুরী, এ কে এম সামসুল আলম, মুজিবুল হক, আবদুস সামাদ, সামসুল আবেদীন, রফিকুল ইসলাম মিঞা, আবদুল্লাহ ফারুক, আবুল হাশেম, আমিনুল হক, খলিফা এ মালিক, এম নুরুল আবসার, এ এ মুস্তাফিজুর রহমান, সৈয়দ ফজলে এলাহি, সৈয়দ সফিউল্লাহ, শ্যামা প্রসাদ ঘোষ (এদের মধ্যে সুলতান মাহমুদ শরীফ ও মোহাম্মদ হোসেন মঞ্জু ছাড়া বাকি সবাই ছিলেন বামপন্থি) প্রমুখ।

স্টিয়ারিং কমিটি
স্থান: ১১ গোরিং স্ট্রিট, লন্ডন ইসি১
আজিজুল হক ভুইয়া, শেখ আবদুল মান্নান, মনোয়ার হোসেন, শামসুর রহমান, ড. কবির চৌধুরী (ড. কবির হোসেন চৌধুরী) এবং অফিস সেক্রেটারি সামসুল আলম চৌধুরী।

বিশ্ব জনমত গঠনে যারা অনশন ধর্মঘট করেন
ক. বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ—এর সদস্য: শামসুদ্দিন আহমদ চৌধুরী মানিক (পরবতীর্কালে ব্যারিস্টার ও বিচারপতি), আফরাজ আফগান চৌধুরী (হবিগঞ্জ বারের আইনজীবী) ও আবদুল হাই খান (সিলেট বারের আইনজীবী ও সিলেট পৌরসভার দরগা মহল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর)। এই ঘর্মঘটকে সফল করার জন্য নানাভাবে কাজ করেন Ñ আহমদ হোসেন জোয়ারদার, জাকিউদ্দিন আহমেদ ও মোহাম্মদ হোসেন লেবু প্রমুখ। একমাত্র আবদুল হাই খান ছাড়া বাকি সবাই জীবিত আছেন।
খ. ‘সাউথ ওয়েলস বাংলাদেশ সংগ্রাম পরিষদ’-এর ৬ জন সদস্য: এ হালিম, জুলহাস মিয়া, আব্দুল হান্নান, এম. ফিরোজ ও আব্দুস শহীদ ১৯৭১ সালের ১৩ মে দুপুর ১২ টা থেকে ১৪ মে বিকাল ৩টা পর্যন্ত লন্ডনের পার্লামেন্টের সামনে অনশন ধর্মঘট করেন। ধর্মঘটকারীরা মি. পিটার শো’র এমপি ও মি. সিডনী বিডওয়েল এমপি’র বিশেষ অনুরোধে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন।
বাংলাদেশ ওয়ারক্রসের কর্মকর্তা
এটি গঠিত হয় ১৯৭১ সালের ২৮ জুন: সভাপতি: এস এ এম এরশাদ; সাধারণ সম্পাদক: আব্দুল্লা ফারুক; প্রধান চিকিৎসা-বিষয়ক উপদেষ্টা: ডা. মোখলেছুর রহমান; মেডিক্যাল অফিসার: ডা. আবদুস সোবহান ও ডা. সুফিয়া খানম, কোষাধ্যক্ষ: আই আর সরদার ও কলমদর আলী। সদস্য: এরশাদ আলী, ডাক্তার মোশারফ হোসেন জোয়ারদার, ডাক্তার শামসুদ্দিন এমআরসিপি, ডাক্তার আবদুল হাকিম, ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডাক্তার গিয়াসউদ্দিন মিয়া।
সাংবাদিক
পুলিন বিহারী শীল, আমির আলী, কবির উদ্দিন আহমেদ, সুরাইয়া খানম, শিল্পী আবদুর রউফ, মহিউদ্দীন চৌধুরী।

শিল্পী
ইনামূল হক চৌধুরী, শাহ আলম ও সঙ্গীরা, শ্রী হরিদাস গাঙ্গুলী, মিসেস তৃপ্তি দাস, মিসেস গোপা বসু, ওয়াসিল মিয়া, নাজমুল আবেদীন, মোহাম্মদ আলী, চিত্রা ব্যানার্জি প্রমুখ।
(চলবে)

Sheikhsbay

Related Articles

Check Also
Close
Back to top button
Close
Close