খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবীতে দেশ-বিদেশে সমাবেশ-বিক্ষোভ

# লিভার সিরোসিসে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে খালেদা # বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি প্রশ্নে অনড় সরকার # স্লো পয়জনিং’এর অভিযোগ বিএনপির # মাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন তারেক জিয়া # বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে চিকিৎসা সম্ভব নয়: ড্যাব # খালেদা জিয়ার ক্ষতি হলে মানুষ রেহাই দেবে না: ফখরুল
সুরমা প্রতিবেদন
লন্ডন, ৫ ডিসেম্বর :বাংলাদেশের রাজনীতিতে চিকিৎসার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে এমন পাশবিক আচরণ আরেকটি খুঁজে পাওয়া যাবেনা। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সরকারের বক্তব্য-বিবৃতি আর কর্মকান্ড এমনই অমানবিক যাকে অনেকে কেবল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার সঙ্গেই তুলনা করছেন। যদিও খালেদা জিয়া ১/১১’র সরকারের বিরুদ্ধে হাসিনাকে টেনে হিঁচড়ে অমানবিকভাবে গ্রেফতারের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। দীর্ঘ স্বৈরশাসন থেকে দেশকে গণতন্ত্রে ফেরানোর সংগ্রামের নেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে এখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাকে বাঁচাতে অবিলম্বে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট ও সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি। রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দেখে বারবার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের বর্ণনা থেকে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার চরম অবনতির কথা শোনে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে দেশে-বিদেশে থাকা বাংলাদেশীদের মাঝেও। জটিল লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত খালেদাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার বিকল্প নেই বলে ইতোমধ্যেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছেন।
সম্প্রতি বিদেশে সুচিকিৎসা ও স্থায়ী মুক্তির দাবি জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। ড্যাব নেতৃবৃন্দ বলেছেন, বাংলাাদেশের যতো চিকিৎসা প্রযুক্তি আছে তার জন্য সব প্রয়োগ করা হয়েছে। এখন তাকে পূর্ণ সুস্থ করতে হলে অনতিবিলম্বে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো জরুরী। তাছাড়া ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিশিষ্টজনেরাও বারবার মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বর্ষিয়ান এই নেত্রীর সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবী জানিয়ে আসছেন।
এতোকিছুর পরও সরকার মানবিক এই বিষয় নিয়ে নানা টালবাহানার আশ্রয় ও রাজনীতি করেই যাচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। জনমনে প্রশ্ন যে, জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা একজন মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার মৌলিক অধিকার নিয়ে আর কতো রাজনীতি বা ছিনিমিনি খেলবে শাসক দল? আর কতো অমানবিক হবে বাংলাদেশ? শাসকদের দলের এমন অবিবেচক ভূমিকার কারণে বাংলাদেশের এমন কদর্য, নিষ্ঠুর রূপইবা দেখবে কেন বিশ্ব?
এদিকে, লন্ডনে ভালো নেই বেঁচে থাকা একমাত্র সন্তান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান। সবকিছু বাদ দিয়ে মায়ের কখন কী হয়, সেই চিন্তায় সময় কাটছে তাঁর। এমনটি দলীয় বিভিন্নসূত্রে জানা গেছে। ৩০ নভেম্বর, মঙ্গলবার যুক্তরাজ্য যুবদলের উদ্যোগে আয়োজিত খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির দোয়া মাহফিলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে তাঁকে অনেকটা বিমূর্ষ দেখা গেছে।
স্লো পয়জনিং প্রমাণিত হওয়ার ভয়ে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে না সরকার : যুক্তরাজ্য বিএনপি
বিএনপির চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে স্লো পয়জনিংয়ের মাধ্যমে গুরুতর অসুস্থতার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে দাবী করেছে যুক্তরাজ্য বিএনপি। মাত্র দেড় বছর পূর্বে বেগম জিয়ার পূর্ণ শারীরিক চেকআপ করা হয়েছে এবং আদালতেও জমা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে জানানো হয় যে, তখন বেগম জিয়ার লিভারে কোনো ধরণের জটিলতা ধরা পরে নাই। দেশের নামকরা সরকারী ডাক্তাররা এই চেকআপ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ছিলেন। অথচ এতো কম সময়ের মধ্যে লিভার সিরোসিসের মতো চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়া প্রমাণ করে বেগম জিয়াকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে। মেডিকেল সায়েন্সের তথ্যমতে এ ধরণের রোগ এতো কম সময়ে সেই পর্যায়ে যায় না, যদি বাইরে থেকে স্লো পয়জনিং করা না হয়।
যুক্তরাজ্য বিএনপির এক সভায় মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ফরমায়েশি রায় দিয়ে পরিত্যক্ত ও নির্জন কারাগারে বেগম জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করার জন্য পরিকল্পিতভাবে রাখা হয়েছিল বলেও দাবী করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে গত ২৯ নভেম্বর, সোমবার বার্মিংহামের রিয়া লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্য বিএনপির সাংগঠনিক জোন -২ এর এক প্রতিবাদ সভায় নেতৃবৃন্দ এসব অভিমত ব্যক্ত করেন।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, ম্যাডামের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত মেডিকেল বোর্ড দেশনেত্রীর শারীরিক অসুস্থতার বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। এটা আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, বিনাভোটের সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এমনকি সর্বোচ্চ নির্বাহী প্রধান শেখ হাসিনাও বেগম জিয়ার সুষ্ঠূ চিকিৎসার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। যেখানে চিকিৎসকেরা পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন এই মুহূর্তে ম্যাডাম জিয়াকে উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়ার মতো উপকরণ ও হাই-টেক ফেসিলিটি বাংলাদেশে নেই, সেখানে অবৈধ সরকারের মন্ত্রীরা এমনকি অবৈধ প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত ম্যাডাম জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে যেভাবে কাপুরুষোচিত এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বকে চ্যালেঞ্জ করে মন্তব্য করছেন তাতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির দেউলিয়াত্ব ও শেখ হাসিনার চরম প্রতিহিংসা ফুঠে উঠেছে। সভায় বক্তারা বলেন, বিদেশে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার অধিকার ম্যাডাম জিয়ার সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। এ থেকে বঞ্চিত করে এই অবৈধ সরকার বাংলাদেশের সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক হিউমান চার্টার এর বিধিমালাও লঙ্গন করছে।
দেশ-বিদেশে সমাবেশ-বিক্ষোভ-স্মারকলিপি পেশ
সুচিকিৎসার্থে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে বিদেশে পাঠানোর দাবীতে দেশ-বিদেশে সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান করছে বিভিন্ন সংগঠন। যুক্তরাজ্যে প্রায় প্রতিদিন বিক্ষোভ প্রতিবাদ সমাবেশ করছে বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন। এছাড়া বেশকিছু মানবাধিকার সংগঠনও সোচ্চার ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।
বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত সু-চিকিৎসা এবং নিঃশর্ত মুক্তি দাবী করছে এনবিসি ইউকে। তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপর থেকে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও বিদেশে উন্নত সু-চিকিৎসা এবং নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গত ২৯ নভেম্বর, সোমবার যুক্তরাজ্য সময় বিকাল ৩ ঘটিকায় পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে নিরাপদ বাংলাদেশ চাই (এনবিসি) ইউকের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মুসলিম খান। মানববন্ধন পরিচালনা করেন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আরিফ আহমদ। শুরুতে আল কোরআন থেকে তেলাওয়াত করবেন আছাদ আহমদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এনবিসি’র ইভেন্ট সেক্রেটারী মো. আসয়াদুল হক। প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম। বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ জেলা, বিএনপির সহ সভাপতি আশিকুর রহমান আশিক, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ওলী উল্লাহ নোমান, ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক জেলা সভাপতি আবদুল্লাহ আল মুনিম। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন এনবিসি’র সহ-সাভাপতি আলী হোসেন, বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর, লুৎফুর রহমান, মোহাম্মদ আশিকুর রহমান প্রমুখ।
এদিকে, একই দিন যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ফাইট ফর রাইটস ইন্টারন্যাশনালের (এফআরআই) আয়োজনে পূর্ব ল-নের মাইক্রো বিজনেস কমিউনিটি হলে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে এবং তার সুস্থতা কামনায় আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি মো. রায়হান উদ্দীনের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারী বুরহান উদ্দীন চৌধুরী ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সেক্রেটারী মো. নজরুল ইসলামের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন আসাদ আহমেদ। এতেত স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফআরআই‘র সিনিয়র সহসভাপতি মো. তরিকুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম এবং বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন জাসাসের সাবেক কেন্দীয় সহসভাপতি হাজী এম এ সালাম। এছাড়া ছাত্র শিবিরের সাবেক সিলেট জেলা সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মুনিম, ইষ্ট ল-ন বিএনপি’র তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ আশিকুর রহমান এবং জাস্টিস ফর ভিকটিমস এর সভাপতি জহিরুল ইসলাম। দোয়া পরিচালনা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী উলামা দলের যুগ্ম আহবায়ক মাওলানা শামীম আহমদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহিদুর রহমান বলেন, দেশ আজ এক বন্দিশালায় পরিণত হয়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে এই অবৈধ সরকার দেশকে একটি কারাগারে পরিণত করেছে। সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে এই সরকার।
বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্ভব নয়: ড্যাব
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার কথা বলছেন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের চিকিৎসক নেতারা। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি হারুন আল রশিদ বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য প্রশিক্ষিত চিকিৎসক দল ও সরঞ্জাম প্রয়োজন। সে জন্য চিকিৎসক এনে তাঁর চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। বিদেশে সুচিকিৎসা ও স্থায়ী মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ড্যাব সভাপতি। বুধবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
হারুন আল রশিদ বলেন, ‘খালেদা জিয়ার যে অসুস্থতা, তাঁর যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, কয়েকবার রক্তক্ষরণ হয়েছে। এটা এমন একপর্যায়ে আছে, এখানে কালক্ষেপণ করার সুযোগ নেই। তাঁর চিকিৎসা পুরোটাই একটা টিম ওয়ার্ক। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির জায়গায় জায়গায় এই চিকিৎসা হয় না, দু-একটা সেন্টারে হয়। এটা টোটাল একটা টিম ওয়ার্ক। যদি চিকিৎসক আনা হয়, তিনি বলবেন, আমি তো একা পারব না। ওই টিমে যে নার্স, ওয়ার্ডবয়, যন্ত্রপাতি, প্রত্যেকেই ইকুইপড (প্রশিক্ষিত)। একজনের ভুলে পুরো জিনিস পন্ড হয়ে যেতে পারে। সে জন্য যারা বলছে যে বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করানোর যেতে পারে, এটা কালক্ষেপণ এবং সরকারের অনৈতিক অবস্থানকে সমর্থন করা। সরকার যেহেতু বিদেশে যেতে দিতে চাইছে না, সে জন্য তাকে ব্যাকআপ দেওয়া।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বাংলাদেশে সম্ভব বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড্যাব সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়ার নিয়োজিত চিকিৎসক প্যানেলের সদস্যরা দেশের প্রথিতযশা যত চিকিৎসক আছেন, তাঁদের মধ্যে স্বনামধন্য। তাঁরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, তাঁর বাংলাদেশে চিকিৎসা এ মুহূর্তে সম্ভব নয়। এমনকি উপমহাদেশেও সম্ভব নয়। এর বিপক্ষে সরকারের অবস্থান যা, ঠিক তারই পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে বিএমএ। তারা খালেদা জিয়ার চিকিৎসার মৌলিক অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
এ সময় ড্যাবের মহাসচিব মো. আবদুস সালাম বলেন, খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস হয়েছে। লিভার সিরোসিস তো দূরের কথা, বাংলাদেশে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট পর্যন্ত হয় না। আজ পর্যন্ত দুটি ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয়েছে, তার মধ্যে একজন মারা গেছে, আরেকজনের অবস্থা ভালো নয়। সুতরাং লিভার সিরোসিসের চিকিৎসা বাংলাদেশে হয়, এটা ভুল তথ্য।
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার তথ্য তুলে ধরে হারুন আল রশিদ বলেন, ‘যে সর্বশেষ খবর জেনেছি, তাঁর হিমোগ্লোবিনের লেভেল কিছুটা কমেছে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে, সেগুলোর রেজাল্ট এখনো আসেনি। তাঁর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আছে। তাঁর রক্তক্ষরণ হয়েছে।
খালেদার জিয়ার ক্ষতি হলে মানুষ রেহাই দেবে না: ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সুচিকিৎসার অভাবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার যদি কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে দেশের মানুষ কোনো দিনই রেহাই দেবে না। খালেদা জিয়ার কিছু হলে সব দায় সরকারকে বহন করতে হবে।
৩০ নভেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বরিশাল বাদে দেশের নয়টি সাংগঠনিক বিভাগে মঙ্গল একই কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। ঢাকাসহ সব সমাবেশ এক একটি মহাসমাবেশে পরিণত হয়।
নির্বাচনব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তৃতীয় ধাপে এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি ইউপিতে হেরে আওয়ামী লীগ নেতারা হেরেছেন দাবী করে তিনি বলেন, এদের (আওয়ামী লীগ) পতন শুরু হয়েছে।
ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য বাসভাড়া না কমানোর সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এ নিয়েও বৈষম্য করেছে। শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিয়ে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। বিভিন্ন ভ্যাট ও সারচার্জের কথা বলে জনগণের পকেট কেটে হাজার হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই টাকা মানুষের জন্যই ব্যয় করতে হবে। তা না করে তারা নিজেদের পকেটে ভরছে। কানাডার বেগম পাড়ায় বাড়ি করছে। মালয়েশিয়াতে বাড়ি করছে । সৌদিতে বাড়ি করছে। টাকা পাচার করছে।
একই অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘পুলিশকে ব্যারাকে রেখে রাজপথে আসুন। বিএনপি বনাম আওয়ামী লীগ খেলা হবে। সেই খেলায় কে জিতে কে হারে, তা আমরা দেখে নেব। আওয়ামী লীগ যদি দুনিয়ার এত ভালো কাজ করে থাকে, তাহলে তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনে যেতে ভয় পায় কেন, এই প্রশ্নের উত্তর সরকারকে দিতে হবে।’ আওয়ামী লীগ বিশ্বে কর্তৃত্ববাদী-একদলীয় শাসনের রোল মডেল বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নীতিনির্ধারক।
সমাবেশে দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান অভিযোগ করেন, সরকার খালেদা জিয়াকে পরিকল্পিতভাবে তিলে তিলে মারার চেষ্টা করছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম।
সমাবেশে বক্তব্য দেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও আহমেদ আজম খান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস প্রমুখ।