পরিবেশ রক্ষার সম্মেলনে পরিবেশ ধ্বংস!
।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ৭ নভেম্বর : প্রায় ৫২ জেট বিমানে অনেক বিলিয়নিয়ারসহ পৃথিবীর ৫ শতাধিক নামী দামী হর্তাকর্তার জেট বিমানে আরোহন, বিশ্বের অন্যতম ধনী বিল গেটস এর বিশাল যাত্রী নিয়ে প্রমোদতরীতে জন্মদিন পালন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের চার্টার্ড বিমানে যাত্রা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেনকে বিশাল মোটর শোভাযাত্রায় স্বাগতম, যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে প্রায় ৩১ কিলোমিটার দূরে গিয়ে জেট বিমান পার্কিং এবং প্রায় ২৫ হাজার ডেলিগেট এর মাধ্যমে হাজার হাজার টন কার্বন নিঃসরণ বহুল কাক্সিক্ষত জলবায়ু সম্মেলনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আর এসব কারণে এই সম্মেলনকে তামাসায় পরিণত করেছে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা।
এছাড়া বিশ্বের অন্যতম পরিবেশদূষণকারী দেশ ভারত, রাশিয়া ও চীনের রাষ্ট্রপ্রধানদের সরাসরি অংশগ্রহণ না করার কারণে কার্বন নিঃসরণ, বন উজাড় করা ঠেকানো, পরিবেশ দূষণে ক্ষতিগ্রস্তদেশগুলোকে সহায়তা, নতুন সবুজায়ন ও পরিবেশবান্দব টেকনোলোজিকে সহজীকরণ কতটুকু বাস্তবাহন হবে তা নিয়ে ইতিমধ্যে পরিবেশবাদীরা প্রশ্ন তুলেছেন।
এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবীতে স্কটল্যাণ্ডের গ্লাসগোতে বিক্ষোভ করেছেন শত শত মানুষ। জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬ সামনে রেখে গত ৩০ অক্টোবর, শনিবার বিক্ষোভ করেন তারা। পরদিন রোববারও বিশ্বনেতাদের প্রতি একই দাবী নিয়ে রাজপথে ছিলেন অনেক পরিবেশ অধিকারকর্মী।
এ পটভূমিতেই গত ৩২ অক্টোবর, রোববার শুরু হয়েছে জলবায়ু সম্মেলন। চলবে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় থেকে পৃথিবীকে রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে বিশ্বনেতাদের চাপে ফেলতে বিভিন্ন দেশের পরিবেশ আন্দোলনকর্মীরাও বিক্ষোভ-সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। শনিবারের বিক্ষোভে যোগ দেন জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্দোলনে সাড়া জাগানো সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ।
এছাড়া রোববার সম্মেলন শুরুর আগমুহূর্তে স্কটল্যাণ্ডের রাজধানী এডিনবার্গে বিক্ষোভ করেন শতাধিক মানুষ। সেখান থেকে তাঁরা গ্লাসগোর উদ্দেশে যাত্রা করেন। বিক্ষোভকারীদের একজন অ্যালান ম্যাকইনটায়ার বলেন, ‘আমি বিক্ষোভে যোগ দিয়েছি; কারণ, আমি চাই জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে রাজনীতিকেরা আরও বেশী কিছু করুন।’
অনেকের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘শুধু মুখের কথা নয়, পদক্ষেপ চাই’ এবং ‘জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করুন’। সম্মেলন শুরুর আগমুহূর্তে স্কটল্যা-ের রাজধানী এডিনবার্গে বিক্ষোভ করেন শতাধিক মানুষ।
উল্লেখ্য, দাবদাহ, দাবানল ও বন্যার মতো জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া তীব্রতর হচ্ছে। গত দশক ছিল রেকর্ড গরম। বিজ্ঞানীরা বারবার এ ব্যাপারে সতর্কতা উচ্চারণ করে আসছেন। বিশ্বের সরকারগুলো একমত যে এ বিষয়ে জরুরী ভিত্তিতে যৌথ পদক্ষেপ দরকার।
কপ-২৬ সম্মেলনে বিশ্বের ২০০টি দেশের কাছে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে তাদের পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হবে। জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে এই দেশগুলো ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রাকশিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি যাতে না বাড়ে, সে ব্যাপারে সম্মত হয়েছিল। তবে এরই মধ্যে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রিতে সীমিত না রাখতে পারলে বিপর্যয় এড়ানো যাবে না। এ বিষয়ে কপ-২৬ থেকে জোরালো সিদ্ধান্ত আসার আশা করছে বিশ্ববাসী।