হাউজিং মামলা: সাবেক স্বামীকে দায়ী করলেন এমপি আফসানা

আদালতে সাবেক শ্যাডো চ্যান্সেলরের সাক্ষ্য: খুবই ভালো মানুষ, লেবার জয়ী হলে তাকে মিনিস্টেরিয়েল পোস্ট দেওয়া যেতো
।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ২৮ জুলাই : পপলার এণ্ড লাইম হাউজ আসনের এমপি আপসানা বেগম তাঁর বিরুদ্ধে চলা হাউজিং ফ্রডের মামলার শুনানিতে অংশ নিয়ে সবকিছুর জন্য সাবেক স্বামীকে দায়ী করেছেন। পূর্ব লণ্ডনের স্নায়ার্সব্রুক ক্রাউন কোর্টে শোনানী চলাকালে আপসানা বলেন, তাঁর সাবেক স্বামী একাউন্ট নিয়ন্ত্রণ করতেন সম্ভবত তিনি কাউন্সিল হাউজ বিডিং চালিয়ে যেতে পারেন। এসময় তাঁর আইনজীবীও একই কথা বলেন।
এদিকে, লেবার এমপি আপসানার বিরুদ্ধে থ্রি কাউন্ট হাউজিং ফ্রডের অভিযোগে চলা মামলায় তাকে সমর্থন করে শোনানিতে অংশ নেন সাবেক শ্যাডো চ্যান্সেলর ম্যাক-ডানেল। তাকে এমপি আপসানার চারিত্রিক বৈশিষ্ট সম্পর্কে বলতে কোর্ট থেকে আহবান করা হয়। স্বীয় দল লেবার এমপি আপসানার প্রশংসা করে তিনি বলেন, কঠোর পরিশ্রমী ও খুবই ভাল মানুষ। ২০১৯ সালের নির্বাচনে লেবার জিততে পারলে আপসানা বেগমকে মিনিস্টেরিয়েল পোস্ট দেওয়া যেতো এবং আপসানার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে এমনটিই ভাবছিলেন বলে জানান অভিজ্ঞ এই লেবার রাজনৈতিক।
বিভিন্ন মিডিয়া সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় দিনের শোনানীতে অংশ নিয়ে পরিবারিক ও বৈবাহিক জীবনের নানা বিষয় তুলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এমপি আপসানা বেগম। ২৬ জুলাই, সোমবার আদালতে আপসানা দেওয়া বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বেশ কয়েকটি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম।
ইভনিং স্ট্যাণ্ডার্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্নায়ার্সব্রুক ক্রাউন কোর্টের শুনানিতে ৩১ বছর বয়সী পার্লামেন্ট সদস্য আপসানা বেগম কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
আপসানা আদালতকে বলেন, তিনি যখন কমিউনিটি লিডারশিপ নিয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা করছিলেন তখন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের বর্তমান কাউন্সিলার এহতেশামুল হকের সাথে তার পরিচয় হয়। কিন্তু, এহতেশাম তার চেয়ে সাত বছরের বড় এবং আগে দুই বার বিবাহিত হওয়ায় আপসানার পরিবার এহতেশাম ও তা সম্পর্কের পক্ষে ছিল না।
আপসানা আদালতে তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের জানুয়ারী থেকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত আনীত আবাসন জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই অভিযোগ এনেছে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। তাদের অভিযোগ আপসানার কারনে কাউন্সিলের ৬৩ হাজার ৯২৮ পাউ- ব্যয় হয়েছে। আপসানার বিরুদ্ধে কাউন্সিলকে অবহিত না করার অভিযোগ উঠেছে।
জবাবে আপসানা জানিয়েছেন, স্যোশাল হাইজিংয়ে আবেদন করার পর তিনি এহতেশামুল হকের সাথে চলে যান। তার দাবী, বেশী জনাকীর্ণ ওই আবাসে বাস করেননি। তিনি কাউন্সিলকে তা জানিয়েছেন।
আফসানা আরও দাবী করেছেন যে, তাঁর সাবেক স্বামী এহতেশামুল হক তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইতেন, বাধ্য করতেন। তাকে ব্যাংক লোনে সহায়তা করার কারণে তিনি তাঁর ইমেইল, পাসওয়ার্ড সবকিছু জানতেন।
২০১৯ সালে নির্বাচিত পপলার এণ্ড লাইম হাউজের এমপি আপসানা স্ন্যায়ার্কব্রুক ক্রাউন কোর্টের জুরিদের বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে তাঁর নামে কাউন্সিল হাউজের একাধিক বিডিং তাকে ‘নিয়ন্ত্রণকারী’ তাঁর সাবেক স্বামীর মাধ্যমে হয়েছিলো।
উল্লেখ্য, আপসানা বৃটেনের সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে ল-নের সবচেয়ে বেশী বাংলাদেশী বহুল এলাকা পপলার এ- লাইম হাউস এলাকা থেকে লেবার পার্টির মনোনয়ন পেয়ে চমকের সৃষ্টি করেন। লেবার পার্টির নিরাপদ এ আসনটি থেকে মনোনয়ন পাওয়া মানেই অনেকটা নিশ্চিত বিজয়। যদিও সে মনোনয়ন যুদ্ধে টাওয়ার হ্যামলেটসের খোদ লেবার কাউন্সিলার ও স্থানীয় লেবার রাজনৈতিকদের বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয় তাকে। গত নির্বাচনে কনজারভেটিভ প্রার্থীকে প্রায় ২৯ হাজার ভোটে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন লেবার পার্টির প্রার্থী আফসানা। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা টাওয়ার হ্যামলেটসে হলেও বাংলাদেশে তার বাবার বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। আফসানার বাবা মনির উদ্দিন টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিলর ছিলেন।