সম্পাদকীয়

লকডাউন না তামাশা?

এ সপ্তাহের সম্পাদকীয় ।। ইস‍্যু ২২০৯
বাংলাদেশে গত দুই সপ্তাহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় পহেলা জুলাই বৃহস্পতিবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য ‘সার্বিক কার্যাবলী/চলাচলে’ নতুন ২১ দফার বিধি-নিষেধ জারি করেছে সরকার। এই এক সপ্তাহের মধ্যে ‘অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত’ বাড়ির বাইরে বের হলে ‘আইনানুগ ব্যবস্থা’ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সরকারের মন্ত্রীদের কেউ কেউ একে বলছেন লকডাউন কেউ একে বলছেন শাটডাউন। তবে গত সপ্তাহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য সরকার যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল সেটি মাত্র দুইদিন পরেই ভেঙে পড়েছিলো। সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এই বিধিনিষেধকে ‘লকডাউন’ হিসেবে বর্ণনা করেছিল। কিন্তু দৃশ্যত প্রথম দিন থেকেই কোথাও লকডাউনের লেশমাত্র ছিলনা। অনেক জায়গায় মার্কেট ও দোকানপাট খোলা রাখার দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে। কোথাও কোথাও এই বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। এমন অবস্থায় সরকার যেসব ‘বিধিনিষেধ’ আরোপ করেছিল তার কোন কোনটি থেকে তারা নিজেরাই পিছু হঠেছে। প্রশ্ন হল দৃশ্যত গত সপ্তাহের এমন ব্যর্থতার পরেও সরকার কেন আরেকটি শাটডাউনের পথে হাঁটছে? চলমান বিধি নিষেধের মধ্যেই মঙ্গলবার থেকে ঢাকার আশেপাশের সাতটি জেলায় নয়দিনের বিশেষ লকডাউন শুরু হয়েছে।

এর মাধ্যমে রাজধানীকে বাংলাদেশের বাকি জেলাগুলো থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে বলা যায়। এমন সময় সরকার এই ব্যবস্থা নিয়েছে, যখন সীমান্তবর্তী জেলাগুলোসহ দেশের অনেক জেলায় সংক্রমণের হার বেড়ে গেছে, অনেক জেলায় স্থানীয়ভাবেও লকডাউন চলছে।

এদিকে জনগণের অবস্থা কি? উদ্ভট নৌকায় সওয়ার হওয়া সরকারের লকডাউন পরিকল্পনায় অফিস-আদালত- কল কারখানা খোলা, মার্কেট বন্ধ। যেখানে সব শিল্প-কারখানা খোলা আছে সেখানে শুধু মার্কেট-শপিংমল বন্ধ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিভাবে থামানো যাবে?

আবার গত সপ্তাহে দেখা গেলো লকডাউনে অফিস খোলা, পরিবহন বন্ধ।‌ সরকারি বিধি-নিষেধের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস শুধু জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় জনবলকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা-নেওয়া করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে বেশিরভাগ অফিসের নিজস্ব কোন পরিবহন ব্যবস্থা নেই।

অবস্থাদৃষ্টে স্পষ্ট প্রতীয়মান যে এধরণের সিদ্ধান্ত খুবই সাংঘর্ষিক হয়েছে।‌ কথার সাথে কাজের কোন মিল নেই। এগুলো নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে। লকডাউন নিয়ে সরকারের কোন প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনা ছিল না বলে জনগণের বিরাট অংশ এখন নিশ্চিত ধারণা পোষণ করেন। বিষয়টি নিয়ে সরকারের মধ্যেই যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল তা বিভিন্ন মন্ত্রীদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে প্রকাশ পাচ্ছে। মহামারী মোকাবেলায় জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এইসব তামাশার দায় সারা দুনিয়ার মতো বাংলাদেশেও সরকারকেই নিতে হবে । সরকারের মনোভাব ও কার্যক্রম জনগণ ঠিকই বুঝতে পারে। সুতরাং মহামারী মোকাবেলায় চরম দায়িত্বহীনতা, অবহেলা, দুর্নীতি, অদক্ষতা আর ব্যক্তি-দল আর গোষ্ঠী স্বার্থহাসিলের রক্তচোষা নির্মম রাজনীতি দেখতে দেখতে বাংলাদেশ পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে। মহামারীর কাছে ১৮ কোটি মানুষ আত্মসমর্পণ করে বসে আছে আর দিন গুনছে- কবে শেষ হবে এই মহামারীর? কবে শেষ হবে জনস্বাস্থ্য নিয়ে এই নির্মম তামাশা?

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close