লণ্ডন মেয়র ও টাওয়ার হ্যামলেটস: ডেমোক্রেসি ভার্সেস হিপোক্রেসি
সুরমার এ সপ্তাহের সম্পাদকীয় ।। ইস্যু ২২০০
৬ মে, ২০২১। মহামারীর মধ্যেও যুক্তরাজ্যের বৃহত্তর নির্বাচনী দিন । ২০২০ সালের ৭ মে এই নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিলো। কিন্তু মহামারীর জন্য সরকার এক বছরের জন্য এই নির্বাচনগুলো স্থগিত করে। ৬ মে লন্ডন মেয়র ও গ্রেটার লন্ডনের স্থানীয় ৩২টি কউন্সিলের নির্বাচন ছাড়াও ১৪৫ ইংলিশ লোকাল কাউন্সিল (প্রায় ৫,০০০ আসন), তেরোটি কাউন্সিলে সরাসরি মেয়র এবং ৩৯ পুলিশ ও ক্রাইম কমিশনার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একইদিন স্কটিশ পার্লামেণ্টে ১২৯ আসনে, ওয়েলশ পার্লামেন্টে ৬০ আসন এবং লন্ডন এসেম্বলি ২৫ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এই বিশাল নির্বাচন যজ্ঞে একটা প্রশ্ন বড়ো হয়ে দেখা দিয়েছে। একই দিনে লন্ডন মেয়র আর টাওয়ার হ্যামলেটস্ রেফারেন্ডামকে ঘিরে। একইদিনে একই আয়োজনে দুই বিপরীতমুখী ভোট । লন্ডনের বাসিন্দারা যেদিন লন্ডন মেয়রের জন্য ভোট দেবেন, একই দিন টাওয়ার হ্যামলেটসের ভোটাররা মেয়র পদ্ধতি তুলে দেয়ার প্রশ্নে ভোট দেবেন । লন্ডন মেয়র স্থানীয় সরকারের ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ। ব্রিটিশ গণতন্ত্রে ভারসাম্য, জনগণের অংশগ্রহণ আর শেয়ারিং মূল্যবোধের এক মর্যাদার প্রতীক। সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাহী মেয়র নির্বাচনের এই পদ্ধতি টাওয়ার হ্যামলেটের জনগণ ২০১০ সালে তাদের দাবিকৃত রেফারেন্ডামের মাধ্যমে অর্জন করে। আর দশ বছর না যেতেই লেবার নিয়ন্ত্রিত কাউন্সিল নির্বাহী ক্ষমতাবলে মেয়র পদ্ধতি বিলোপের প্রশ্নে ৬ মে আরেক রেফারেণ্ডামের ডাক দিয়েছে। লন্ডনের মেয়র নিয়ে গর্ব করা টাওয়ার হ্যামলেটের জনগণকে এখানকার মেয়র পদ্ধতি উৎখাত প্রশ্নে গণভোটের মুখোমুখি করা একটা প্রবঞ্চনা ও পদ্ধতিগত অনাচার যাকে সহজ অর্থে হিপোক্রেসি বলা যেতে পারে। টাওয়ার হামলেটে বাঙালী কমিউনিটি এক তৃতীয়াংশের বেশি হওয়ায় যে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সুযোগ তৈরি হয়েছিলো তা অঙ্কুরেই বিনাশের উদ্যোগকে সমালোচনার মোলায়েম ভাষা কোনো অভিধানেই সহজসাধ্য হবে না । তবে রেফারেন্ডামে যেহেতু টাওয়ার হ্যামলেটের বাসিন্দারাই ভোট দেবেন, তারা নিশ্চয়ই তাদের জন্য উত্তম পন্থাই বেঁচে নেবেন। কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীর স্বার্থ কমুনিটির কাছে কখনো প্রাধান্য পায়নি, এবারও পাবেনা বলেই আমাদের বিশ্বাস।
ডেমোক্রেসি ভার্সেস হিপোক্রেসি । দেখা যাক, টাওয়ার হামলেটে কোনটির জয় হয়, এই রেফারেণ্ডামে?