সিলেটী মন্ত্রীরাও কি সিলেট বিদ্বেষী?

এ সপ্তের সম্পাদকীয় ।। ইস্যু ২১৯৭
সিলেট হচ্ছে বাংলাদেশের রূপকথার সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁস। সেই রাজহাঁসকে না খোঁচালে যেন বাংলাদেশের এক ধরনের মন্ত্রী-আমলার ভাত হজম হয়না। কোয়ারেন্টাইন নিয়ে কি একটা অবস্থা চলছে সারাদেশে, কোন লকডাউন কার্যকর করা যাচ্ছে না। সর্বত্র যখন এই অবস্থা তখন একমাত্র সিলেটেই দুই প্রবাসী যুবককে জরিমানা করেও ক্ষান্ত হয়নি প্রশাসনের দন্ডমুন্ডের কর্তারা। তাদের জেলে পাঠিয়ে লন্ডনীদের উপর একশ’ ভাগ ক্ষমতার তাপ দেখালেন। কারণ কি? সারাদেশের জন্য এক আইন আর সিলেটের প্রবাসীদের জন্য কি আরেক আইন? দুঃখজনক হলেও সত্য চ্যারিটি কাজ করতে গিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যে সিলেটী মা-বাবার ঘরে জন্ম নেয়া ওই দুই মানবতাবাদী যুবক আব্দুর নুর ও আলম হাসান রফি। আর বাংলাদেশ ওদের দুজনকে দিয়ে করোনা জেলখানা উদ্বোধন করলো। অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাস্কর ঘটনা।
সিলেটিরা আজ ক্ষমতার শীর্ষের আশেপাশে। মানুষ আশায় বুক বাঁধে। ক্ষমতাধর মানুষগুলো প্রবাসীদের কষ্ট আর তাদের উপর জুলুমের অবসান করতে পারবেন। মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সাইফুর রহমান ও এ এস এম কিবরিয়ার কারণে প্রবাসীদের অনেক মনের আশা পূর্ণ হয়েছে এবং সিলেটও অনেক এগিয়ে গেছে। কিন্তু হালের সিলেটের নেতৃত্ব দেখলে মনে হয় না তারা সিলেটিদের সমস্যা সমাধানে আন্তরিক। বরঞ্চ তাদের চলনে-বলনে আচরণে কথনে সিলেটিদের প্রতি এক ধরনের বিদ্বেষ ভাবই প্রকট ভাবে ধরা পড়ে। কে না জানে বাংলাদেশের প্রবাসীদের এক বড় অংশই বৃহত্তর সিলেটের এবং স্বাধীনতা পূর্বকালে বাংলাদেশের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রবাসী বলতে কেবলমাত্র সিলেটিদের বোঝাত। এমনকি স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় সবচাইতে বড় অনুদান সংগ্রহ করে দিয়েছিল এই লণ্ডন প্রবাসী সিলেটের কমিউনিটি, যেটা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বপ্রথম অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু এই সিলেটিরা বিমানবন্দরে গিয়ে নির্মমভাবে নিহত হয়, হয়রানির শিকার হয় যত্রতত্র। আর অন্য সময় লাঠিপেটা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন তো আছেই। জায়গা জমি বাড়ীঘর দখল সেখানেও সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। মামলা মোকদ্দমা শুরু হয়, আর শেষ হয়না। সিলেটের থানাগুলো নাকি এখন ঢাকার চেয়ে ও অনেক দামি। কারণ কি? এসবের প্রতিকার চাইতে গেলে কোনো কোনো মন্ত্রী উল্টো প্রবাসীদের সম্পর্কে নানা অবজ্ঞাসূচক মন্তব্য করেন, সমস্যা সমাধান তো দূরের কথা।
প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক, সিলেট প্রবাসীদের এসব অপমান আর নিপীড়ন কি সিলেট থেকে মনোনীত, তাঁদের আবার কেউ কেউ আবার নিজেরাও প্রবাসী; সামান্যতম লজ্জিত করে না? নাকি তাঁরাও চেয়ার রক্ষার তাগিদে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সিলেট বিদ্ধেষী অথবা প্রবাসী বিদ্ধেষী? সময় থাকতে এটা বোঝা দরকার। প্রবাসীরা তাঁদের আত্মমর্যাদা আর ভুমিকা দেখার জন্য হয়তো অনন্তকাল অপেক্ষা করবে না।