মূর্তি-ভাস্কর্য: বিতর্ক না আতঙ্ক

সুরমার এ সপ্তাহের সম্পাদকীয় ।। ইসু্য ২১৭৯
বাংলাদেশ সরকার ঢাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা সর্বশেষ মূর্তি বনাম ভাস্কর্য বিতর্কে পর্যবসিত হয়েছে। বাংলাদেশে এনিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভ প্রতিবাদ আর সমর্থন উত্তাল তরঙ্গের মধ্যে পরিস্থিতি ভিন্নমাত্রা নিতে শুরু করেছে।
শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারের এই উদ্যোগ। ঢাকায় ইতিপূর্বে বিভিন্ন স্থানে অনেক ভাস্কর্য থাকলেও একটিমাত্র ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে বিতর্ক কেন? গতবছর হাইকোর্টের সামনে লেডি জাস্টিস ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট ও সরকার শেষ পর্যন্ত পিছু হটে। বিতর্কের মধ্যে সরকারি তরফ থেকে নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দেয়া হলেও বাংলাদেশে এই নিয়ে বিতর্ক যে পর্যায়ে উপনীত হয়েছে তা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে।
ইসলামে মূর্তিপূজা বা মূর্তি তৈরি ও প্রদর্শনের তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে । সুতরাং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এব্যাপারে কোন বিতর্কের অবকাশ নেই । কিন্তু মানুষ অথবা প্রাণী ছাড়াও বিভিন্ন বস্তুর প্রতীকী অর্থে ভাস্কর্য স্থাপন শুধু বাংলাদেশ নয় মুসলিম বিশ্বে একটা সাধারন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোথাও কোথাও এটা সংস্কৃতির অংশে পরিণত হয়েছে। এসব নিয়ে তেমন একটা বিতর্ক এখন হতে দেখা যায় না ।কিন্তু যখনই কোন ব্যক্তি মানুষের মূর্তি বা ভাস্কর্য স্থাপনের প্রশ্ন আসে তখনই ইসলামপন্থী বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক শক্তি ধর্মীয় বিশ্বাসের আলোকে তার বিরোধিতা করে। এই বিতর্কে পক্ষে অথবা বিপক্ষে আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু বাংলাদেশ ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ । এখানে ধর্মীয় মূল্যবোধের মৌলিক প্রশ্নে যখন বিতর্ক দেখা দেয় তখন তাকে নানা কুতর্কের মাধ্যমে মোকাবেলা করার প্রচেষ্টা অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ বলে প্রতীয়মান হয়। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সংশ্লিষ্ট প্রশ্নসমূহের বিরোধিতা করতে গিয়ে অনেকেই স্বাধীনতাবিরোধী, জামাত ইত্যাদি ইত্যাদি নানা বিশেষণ ব্যবহার করতে থাকেন। এটাও একটি অগ্রহণযোগ্য প্রচেষ্টা। কারণ এসব প্রশ্নে রাস্তায় যারা বিক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের বেশিরভাগ এর জন্ম স্বাধীনতার যুদ্ধের অনেক পরে। এসব বিতর্কে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার মত সর্বজনীন বিষয়কে টেনে এনে বুদ্ধিবৃত্তিক অপকর্মের দায় রাষ্ট্র অথবা রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত শক্তিগুলো কেন নেবে সেটাই হচ্ছে এখন সবচেয়ে বড় বিষয় । সুতরাং ভাস্কর্যের প্রসঙ্গে বিতর্ককে স্বাগত জানিয়ে যারা পক্ষে বিপক্ষে কথা বলছেন, জাতীয় পর্যায়ে সে আলোচনা গুলোকে সমন্বয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে।
নাগরিক অধিকার কে অবজ্ঞা ও অবহেলা করা এবং বিভিন্ন সংকীর্ণ রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িয়ে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টা প্রকারান্তরে দুর্বল রাষ্ট্রশক্তিইকে আরো দুর্বল করে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ও বিশ্বাস রাষ্ট্রশক্তির রাজনৈতিক অভিলাষের কাছে যাতে পরাজিত না হয় সেটাই সবচেয়ে বেশি কাঙ্খিত। মূর্তি অথবা ভাস্কর্য বিতর্ক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান হোক সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।