ইংল্যাণ্ডে দ্বিতীয় লকডাউন
* ফার্লো স্কিমের সময়সীমা বৃদ্ধি
* ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান লকডাউনের বাইরে রাখার আহবান
লণ্ডন, ৬ অক্টোবর – আইনী প্রদক্ষেপ নেয়ার হুমকিপাঁচ মাসের মাথায় দ্বিতীয়বারের মতো লকডাউনের সূচনা হলো ইংল্যাণ্ডে। গত ৫ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার থেকে মাসব্যাপী লকডাউন ডিসেম্বরের ২ তারিখ সমাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং বুধবার তা পার্লামেন্টেও অনুমোদিত হয়। ব্যবসায়িক ক্ষতি চিন্তা করে কিছু এমপি এর বিরোধীতা করলেও সংখ্যাগরিষ্ট ভোটে বিলটি পাশ হয়েছে বুধবার। বৃটেনে করোনার প্রাদুর্ভাব নতুন করে অস্বাভাবিকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় গত ৩১ অক্টোবর, শনিবার ডাউনিং স্ট্রিটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া চার সপ্তাহের লকডাউনের কথা ঘোষণা করেন তিনি।
এর আগে শনিবার মন্ত্রিসভার দীর্ঘ বৈঠক চলে। সংবাদ সম্মেলনে বরিস জনসন বলেন, এবারের ক্রিসমাস ‘বেশ আলাদা’ হতে পারে। কিন্তু তিনি প্রত্যাশা করেন, এই সময়ে পদক্ষেপ নেওয়া মানে ভবিষ্যতে পরিবারের সবাই একসঙ্গে হতে পারা।
নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে নতুন করে ‘স্টে অ্যাট হোম’ নির্দেশ কার্যকর হবে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে হসপিটালিটি খাত এবং অপরিহার্য নয় এমন দোকানপাঠ। তবে প্রথম দফায় লকডাউনের মতো এবার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা হচ্ছে না। আগামী ২ ডিসেম্বরের পর এসব কড়াকড়ি শিথিল করা হতে পারে বলেও জানান তিনি।
লকডাউনটিতে ভ্রমণের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। তবে মানুষজন কেবল তাদের বাড়ির বাইওে থেকে একজনের সাথে দেখা করতে পারবে।
বৃটেনে শীতকালীন সময়ে করোনায় প্রায় ৮৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় শুধু ইংল্যাণ্ডই নয়, এর মধ্যেই জার্মানি, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের মতো দেশগুলোও দ্বিতীয় দফায় লকডাউনে ফিরেছে।
লকডাউনের এই সরকারী ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো যখন বৃটেনে আক্রান্তের সংখ্যা মিলিয়ন ছাড়িয়েছে আর প্রতিদিন ৪,০০০ প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত লকডাউনের সময় চালু হওয়া ফার্লো স্কিম অক্টোবরের শেষদিকে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নতুন করে লকডাউন ঘোষণার কারণে তা আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।।
এদিকে, লকডাউন কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে অন্যান্য বিধিনিষেধের ন্যায় মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জামাতে নামাজ কিংবা সমবেত প্রার্থনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করা না গেলেও ব্যক্তিগত নামাজ পড়া যাবে, চাইল্ড কেয়ার, জরুরী সেবা যেমন রক্ত দানের জন্য খোলা রাখা যাবে। মসজিদ জানাজার জন্য খোলা রাখা যাবে। জানাজায় ৩০ জন অংশ নিতে পারবেন।
তবে দ্বিতীয় দফায় জাতীয় লকডাউনে মসজিদে জামাতে নামাজ তথা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সমবেত প্রার্থনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন ইংল্যা-ের সব ধর্মের শীর্ষ ধর্মীয় নেতারা।
চার্চ অব ইংল্যাণ্ড, ক্যাথলিক চার্চ, জুইশ, মুসলিম, হিন্দু, শিখসহ অন্যান্য ধর্মের শীর্ষ নেতাদের স্বাক্ষরিত এক যৌথ চিঠিতে দ্বিতীয় দফায় লকডাউনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সমবেত প্রার্থনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার জন্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
সরকার বরাবরে ধর্মীয় নেতা লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনা বিস্তার ঠেকাতে দ্বিতীয় দফা লকডাউনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বা সমবেত প্রার্থনা বন্ধ রাখার পক্ষে বিজ্ঞানসম্মত কোনো যুক্তি নেই। প্রথম দফায় লকডাউনের পর করোনা ঝুঁকিমুক্ত এবং নিরাপদ পরিবেশ তৈরী করা হয়েছে প্রতিটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে। এছাড়া চার্চ, সিনেগগ, মসজিদ এবং মন্দিরে সমবেত প্রার্থনা সবার অন্তরে সাহসের সঞ্চার করে এবং করোনা মহামারীতে একের অন্যের পাশে দাঁড়াতেও সহযোগিতা করে আসছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব যুক্তি দেখিয়ে দ্বিতীয় দফা লকডাউনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সমবেত প্রার্থনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে আইনী লড়াইয়ে যাওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে।
ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে প্রার্থনার উপর দ্বিতীয় দফা লকডাউনে নিষেধজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে কনজারভেটিভ পার্টি সমর্থিত ফেইথ গ্রুপ ক্রিশ্চিয়ান কর্নার আইনী লড়াইয়ে যাবার জন্য এরই মধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। অন্যদিকে মুসলিম কাউন্সিল অব বৃটেন জরুরী ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তটি পর্যালোচনার জন্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেবার আগে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পরামর্শ গ্রহণ না করার সমালোচনাও করেছে এমসিবি।