নিউজ

শেখ হাসিনা সরকারের কঠোর হুঁশিয়ারী

* দেশবিদেশে সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নামে অপপ্রচারের অভিযোগ
* জেনারেল আজিজ’র টেলি সংলাপ
* সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের টেলি সংলাপের চুম্বক অংশ

।। বিশেষ প্রতিনিধি ।।
লণ্ডন, ১৫ অক্টোবর – সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জনপ্রতিনিধি ও সরকার সম্পর্কে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত মঙ্গলবার এক নির্দেশনা জারি করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনা মোতাবেক দেশ অথবা বিদেশ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাধ্যম ব্যবহার করে অসত্য ও ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশনের কথা বলা হলেও নির্দিষ্ট করে দাবি করা হয়নি কোন কোন সংবাদকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অসত্য অথবা ভিত্তিহীন মনে করছে। 
এছাড়া, এসব সংবাদ দেশের স্থিতিশীলতা ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা উপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করছে জনমনে উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।মঙ্গলবার এই কঠোর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে দেশ ও বিদেশ হতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকার, জনপ্রতিনিধি, সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সম্পর্কে অসত্য বানোয়াট বিভ্রান্তিকর ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে বিভ্রান্ত করার জন্য অসত্য ও ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করছে।‌ এতে করে দেশের বিদ্যমান শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা , জনমনে উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। সরকার ধৈর্যের সাথে এসমস্ত অপপ্রচারকারী ও তার সহযোগীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে , দেশের স্থিতিশীলতা এবং অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সমস্ত অপকর্ম সৃষ্টিকারী অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এমতাবস্থায় সরকার সংশ্লিষ্ট সকলকে দেশ ও বিদেশ হতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সকল প্রকার অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।‌‌‌‌”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিনিয়র তথ্য অফিসার মো: শরীফ মাহমুদ অপু স্বাক্ষরিত এই প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে  কোন কোন আইনে এই ধরনের প্রচার অথবা অপপ্রচার শাস্তিযোগ্য অপরাধ সে সম্পর্কে কোন কিছু উল্লেখ করা হয়নি । এছাড়া সেনা কর্মকর্তা পুলিশ কর্মকর্তা অথবা অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের কার সম্পর্কে কি ধরনের অপপ্রচার হচ্ছে সে সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য অথবা বক্তব্য প্রকাশ করেিন।

সেনাপ্রধান আজিজ

সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের টেলি সংলাপের চুম্বক অংশ:
“দোস্ত আমি যখন কথা বলতে চাই, ওইখানে (প্রধানমন্ত্রীর) কিন্তু তোর অবস্থা খুব একটা ভাল না। তোর সম্পর্কে ইম্প্রেশনটা ভাল না। আমি আর এটা নিয়ে ডিটেইলস কথা বলতে চাই না। বুঝছিস দোস্ত। আমাকে তো কথা বলতে হবে নট এজ এ কোর্সমেট। নিরপেক্ষ হিসাবে, এখানে সেনাপ্রধান হিসাবে। আমি কিন্তু ওই কথাটা বলেছি, কিন্তু খুব একটা, তোর ব্যাপারে ভাল ইম্প্রেশন পাইনি। সেজন্য ওইদিন থেকে হল যে, ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড। এজন্য হইছে কি, এ গুলো সবাই জানেন, কে কি করতেছে না করতেছে, ওয়াইফ (তারেক সিদ্দিকীর স্ত্রী) কি করতেছে না করতেছে। কিন্তু তারপরও তোরে যাদের কথা বলছি, ওরা সবাই তাঁর অনুগত। এরা ভাবে যে ‘ও’ (তারেক সিদ্দিকী) যদি বিগরাই যায় তো কেউ থাকতে পারবে না (অর্থাৎ চাকুরীতে থাকতে পারবে না)। জিনিসটা যেহেতু হইয়াই গেছেগা, এটা নিয়াই মানে এটা নিয়াই থাকতে হবে। এটা মাথায় রাখতে হবে। ঠিক আছে না দোস্ত। এখন যেই জিনিসটা হল, তার যে কিছু কিছু জিনিস আছে, এইটা হল খুব স্ট্রং। আমাদের এই টুলস গুলো নাই। যেমন হল যে, তাঁর জিয়া (জেনারেল জিয়াউল আহসান)। জিয়া হল যে যত কুকীর্তি আছে, জিয়া আর জোবায়ের, এই দুইজনকে দিয়া তাঁর (তারেক সিদ্দিকীর) যত কুকীর্তি আছে করায়। জিনিসটা বুঝছোস তো। আমি এতটুকুই বলব। আর বেশি কিছু বলব না।”

টেলি সংলাপের এক পর্যায়ে কর্নেল শহীদ তার বাড়িতে তল্লাশি’র প্রসঙ্গে বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা কাউন্টার টেরর  ইউনিটের মনিরুল ইসলামের প্রসঙ্গ আসে সেনাপ্রধানের মুখ থেকে। কর্নেল শহীদ তাকে চিনতে না পেরে জানতে চান “মুনির কি ফৌজ না সিভিলিয়ান ?” জেনারেল আজিজ বলেন, ফৌজ না পুলিশ-পুলিশ.  সে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের চিফ. কে যে কার বিরুদ্ধে কি করতেসে, সেটা বুঝা যাইতেছে না.  তুই জাস্ট চিন্তা করে দেখিস হোয়ার ইজ মাই পজিশন।  কর্নেল শহীদ বলেন- তুই তো যানতি যে ইটা হইতে যাইতেছে। জবাবে জেনারেল আজিজ বলেন- রোজা রাইখা মিথ্যা কথা বলবো না. হি রেং মি  ফ্রম হিজ অফিস থ্রু’ রেড টেলিফোন ;এডভাইজর (জেনারেল তারেক ) জানায়- কেন্টনমেন্ট এক্ট’ আগের কিছুই আর  নাই।
অপরপ্রান্ত থেকে কর্নেল (অব) শহিদ খান  কথোপকথনে বলেন, “জিয়াকে দিয়া তো এগুলো আগে থেকেই করছে।” সেনা প্রধান আজিজ তখন বলেন, “এখনো করায়। দোস্ত এখনো করায়। এই যে গুম থেকে শুরু করে এ গুলা আসলে, আমাকে কিন্তু আমাকে আবেদীন অনেকবার বলছে, স্যার এগুলো জিয়া করে। সব জিয়াকে দিয়ে করায়। আমি কিন্তু জিয়াকে চেইঞ্জ করার জন্য প্রপোজাল নিয়া গেছিলাম একদম ওপরে। কিন্তু রাজি হয় নাই। করে নাই। দোস্ত বুঝছিস চাইলেই কিন্তু অনেক কিছু হয় না।”

সেনাপ্রধানের কাছে তার বন্ধু কর্নেল অব শহিদ “এনটিএমসি কি” জানতে চাইলে সেনাপ্রধান তখন বলেন, “এনটিএমসি হল, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন সেল। এইটা হল যত রকমের টেলিফোন, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার রয়েছে যা দিয়ে সরকারেরবিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা করা হয়, কি করতেছে, না করতেছে, কাকে ব্লক করা, সব করে এনটিএমসি।”

অপরপ্রান্ত থেকে তখন আরো জানতে চাওয়া হয়, “এই সংস্থাটি কার আন্ডারে।” সেনাপ্রধান তখন জানান, “এটা হোমমিনিস্টারের আন্ডারে। তবে হোম মিনিস্টারের আন্ডারে হলেও জিটি (জেনারেল তারেক সিদ্দিকী) কন্ট্রোল করে। একেবারে হান্ড্রেড পার্সেন্ট।”

তারেক সিদ্দিকীর স্ত্রী মূলধন ছাড়াই প্রভাব খাটিয়ে অন্যের ব্যবসায় অর্ধেক মালিকানা নেন। বন্ধু কর্নেল (অবঃ) শহিদ খানের টেলি–কথোপকথনে সেনাপ্রধানকে জানান যে, তিনি কোন পুঁজি ছাড়াই ব্যবসার অর্ধেক মালিকানা তারেক সিদ্দিকীর স্ত্রীকে দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর পুরো ব্যবসাই দখলে নিয়ে নেন এই মহিলা। বিরোধের জের ধরে এক সময়ে তারেক সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠ শহিদ খান ব্যবসা হারিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে হয়। বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ মহলের মদদে পরিবারসহ কর্নেল শহিদকে ইন্টারপোলের রেড এলার্ট দেয়া হয়েছিল এটাও উঠে আসে তাদের কথোপকথনে। এমনকি শহিদ খান অভিযোগ করছেন, অস্তিত্বহীন জমি দখলের অভিযোগ এনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। যে জমির কোন অস্তিত্ব বাস্তবে নেই। সেই বানোয়াট মামলায় তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডও দেয়া হয়েছে।

আরেকটি গুরুতর প্রশ্ন :
এদিকে কর্নেল শহীদকে কথিত জমি দখলের অভিযোগে বাংলাদেশের আদালত ৫ বছরের সাজা প্রদান করে এবং তাকে পলাতক দেখিয়ে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ইতিমধ্যে সরকার আন্তর্জাতিক ওয়ারেন্ট ইস্যু করে।  যদিও কর্নেল শহীদ এই মামলাকে অস্তিত্বহীন জমির বিষয়ে তারেক সিদ্দিকীর প্রভাব খাটিয়ে ভুয়া মামলা বলে প্রত্যাখ্যান করেন। রাষ্ট্রের গদিনশীন সেনা প্রধান  রাষ্ট্রের আদালত কতৃক সাজাপ্রাপ্ত একজন কথিত ‘পলাতক’ আসামির সঙ্গে আর্মির স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে এই টেলি সংলাপ নিয়ে পর্যবেক্ষক মহলে দেখা দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

মনিটরিং ও সংকলনে: মাহবুব আলী খান সুর

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close