ইণ্ডিয়ায় মানবাধিকার ও এমনেস্টির বিদায়

সুরমার সম্পাদকীয় ।। ইস্যু ২১৭০
এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ায় তার কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণার খবর আন্তর্জাতিক মিডিয়া গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করেছে। অ্যামনেস্টি বলেছে এটা তাদের কোনো বিচ্ছিন্ন সিদ্ধান্ত নয়, গত দু’বছর সরকারের অব্যাহত নিবর্তনমূলক কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইন্ডিয়াতে এখন মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ অব্যাহত রইল না।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে গত দুই বছর ভারতের মোদি সরকার একের পর এক নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সর্বশেষ তাদের ব্যাংক একাউন্ট স্থগিত করে দেয়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে মানবাধিকার রক্ষায় বিশ্বব্যাপী চ্যাম্পিয়ন সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ভারতে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্ত সংগঠন হিসেবে অ্যামনেস্টির জন্য দুঃখজনক। তার চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, ভারতের ক্রম অবনতিশীল মানবাধিকার পরিস্থিতির শিকার লক্ষ কোটি মানুষের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও সার্বিক নিরাপত্তা প্রসঙ্গ।
ইণ্ডিয়ার মোদি সরকার কেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে হজম করতে পারছে না, তা বুঝতে হলে মানবাধিকারের একটা পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাবে। সরকারি হিসাব মতে ২০১৯ সালে প্রতিদিন ৮৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং এক বছরে ৪০ লাখেরও বেশি নারী সহিংসতার শিকার হয়েছেন। সেখানে মোদি সরকার মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি কে এতদিন কিভাবে হজম পড়েছে সেটাই এখন মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন!! আর কাশ্মীরের প্রসঙ্গত গত সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে মানবাধিকার লঙ্ঘনে বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ রেকর্ড সৃষ্টিকারী এজেন্ডা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বিদেশি সাংবাদিক তো দূরের কথা ইন্ডিয়া তার দেশে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদেরও কাশ্মীরে যেতে অনুমতি দেয়না। কাশ্মীর ভূস্বর্গ হিসেবে পরিচিত। বিশ্বের লক্ষ লক্ষ পর্যটক কাশ্মীরে ভ্রমণের জন্য দশকের পর দশক ধরে অপেক্ষমান। কিন্তু কাশ্মীরের লোমহর্ষক মানবাধিকার লংঘন, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কাশ্মীরি নারীদের ধর্ষণ, গুম ও স্বাধীনতাকামীদের নির্বিচারে হত্যাকাণ্ডের চিত্র বিশ্ববাসী থেকে আড়াল করে রাখার জন্যই এই ঢাক ঢাক গুড় গুড় অবস্থা। সর্বশেষ সংবিধান থেকে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়ার পর উদ্ভূত পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ ছিল তার প্রমাণ মোদি সরকার সেখানে ইন্টারনেট সহ সকল টেলিযোগাযোগ বিছিন্ন করে দেয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে।
মানবাধিকারের ক্ষেত্রে ভারত এখন একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বিশ্বব্যাপী পরিগণিত হবে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা দেশগুলোর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া খুবই হতাশাব্যঞ্জক। একমাত্র ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কয়েক লাইনের একটা উদ্বেগের বিবৃতি প্রকাশ করেছে এবং মোদি সরকারকে তার দেশে অ্যামনেস্টির কার্যক্রম পরিচালনায় হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকা এবং পুনঃরায় কার্যক্রম শুরু ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তিকে মানবাধিকারের প্রতি তাদের অঙ্গীকারের অংশ হিসেবেই ইন্ডিয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের প্রতি জাতিসংঘ ও বিশ্বসভার অন্যান্য অংশীদারদের কার্যকর প্রতিশ্রুতি এবং তার বাস্তবায়ন দেখার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহল অপেক্ষমান থাকবে।