সম্পাদকীয়

কোভিড-১৯: সতর্কতা উপেক্ষা করলে চলবে না

সুরমা সম্পদকীয় ।। ইসু‍্য ২১৬৭
লণ্ডনের রাস্তায় বের হলে মনে হয় কোভিড-৯ বৃটেন থেকে চলে গেছে। নার্সারি স্কুলের শিশুরা মা-বাবার সাথে স্কুলে যাচ্ছে। সেকেণ্ডারি স্কুলের ছেলেমেয়েরা স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে বন্ধুদের সাথে গল্প করতে করতে হাঁটছে। বিপনী কেন্দ্রে দোকানগুলো খোলা। রেস্টুরেন্টে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড় না হলেও ক্রেতাদের উপস্থিতি কম নয়। রাস্তায় যারা চলাফেরা করছে তাদের কারো কারো মাস্ক আছে। অনেকে মাস্ক ছাড়া নিরুদ্বেগে চলাফেরা করছে।
যাদের কাজের জন্য রোজ বাইরে যেতে হয় তারা পুরো লক-ডাউনের সময় অনেক কষ্টের মধ্যে দিন কেটেছে। তারা লক-ডাউন শিথিল হওয়ার পর এখন বেঁচে থাকার প্রয়োজনে বাইরে যাচ্ছেন। কিন্তু বিনা প্রয়োজনে যারা ঘুরাফেরা করছেন বা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্যে বন্ধুদের সাথে বাইরে গিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন তাদের চলাফেরা কোভিড-১৯ সংক্রমণে কোনো ভূমিকা রাখছে কি না তা বিবেচনা করার প্রয়োজন আছে।

বৃটিশ সরকার গ্রীষ্মের ছুটির পূর্বেই সকল স্কুল খুলে দেয়ার কথা বলেিেছল। কিন্তু সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং অভিভাবকদের আপত্তির মুখে সরকার সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। ছুটির পর কোনো আপত্তি ছাড়াই অভিভাবকগণ ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন। অভিভাবকগণ দেখছেন, বাড়িতে বন্দি জীবন যাপন করে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত থাকার সাথে সাথে অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ছে। তা ছাড়া সপ্তাহে সাতদিন চব্বিশ ঘন্টা উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করাও কম চ্যালেঞ্জিং নয়। স্কুলে গেলে শিশু এবং টিনএইজের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার সাথে সাথে জীবন-যাপনের জন্যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সোশ্যাল স্কিল অর্জনের সুযোগ পায়। কিন্তু আমাদের ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক প্রয়োজন এবং সন্তানদের উন্নয়নকে বিবেচনা করার সাথে সাথে কোভিড-১৯ এর ভয়াবহতাকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। স্বাস্থ্য বিভাগের রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে বৃটেনে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যদিও করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর হার সীমিত পর্যায়ে রয়েছে। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ের তুলনায় বর্তমান সংক্রমণ গড়ে চারগুণ বেশি।
বিবিসি প্রচারিত খবর অনুসারে আজ (৯ সেপ্টেম্বর ২০২০) বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এক ঘোষণায় করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত চলমান আইন পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ সোমবার থেকে প্রকাশ্যে এক স্থানে ৬ জনের বেশি জড়ো হতে পারবেন না। বৃটেনে একদিনে ৩ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন। যারা এ আইন অমান্য করবে তাদের সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২ পউ- জরিমানা প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে। তবে স্কুল, কর্মক্ষেত্র, বিয়ে-শাদী বা জানাজা এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবে না।
আমাদের বুঝতে হবে, কোভিড-১৯ এখনো শুধু বৃটেন নয়, ইউরোপ থেকে নির্মূল হয়নি। স্বাস্থ্যসেবার মান ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি হয়েছে ঠিক, কিন্তু সংক্রমণের সংখ্যা উদ্বেগজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছেলেমেয়েদের সংক্রমণ কম হলেও তাদের কারণে মা-বাবা এবং বয়স্কদের সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। এ জন্যে সকল নাগরিককে নিয়ন্ত্রিত চলাফেরা এবং সর্বত্র কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। স্কুল, কেনাকাটা এবং কর্মক্ষেত্রে নিজে যেমন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে তেমনি অন্যান্য সহকর্মী ও কর্মচারীরা যাতে তা মেনে চলেন সে ব্যাপারে প্রত্যেক নাগরিককে সতর্ক থাকতে হবে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close