ফারলো শেষে অবশ্যম্ভাবীভাবে বেকারত্ব বাড়ার আশঙ্কা, তরুণদের জন্য ‘কিকস্টার্ট স্কিম’ চালু, বেতন এবং নিয়োগদাতাদের বাড়তি অর্থ সহায়তা দেবে সরকার
।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ৭ সেপ্টেম্বর : পুরো বিশ্বের ন্যায় করোনা ভাইরাস লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে বৃটেনের অর্থনীতি। দিন দিন বাড়ছে বেকারত্বের সংখ্যা। চাকুরী ক্ষেত্র ধরে রাখার পাশাপাশি বেকারত্বের লাগাম ধরে রাখার লক্ষ্যে ব্রিটিশ নানা রকম পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু তারপরও অর্থনীতিবিদরা বেকারত্ব বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। বিশেষ করে অক্টোবরে সরকার ঘোষিত ফারলো স্কিম শেষ হওয়ার পর অবশ্যম্ভাবীভাবে বেকারত্ব বাড়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন তারা। এদিকে, তরুণ তথা অনুর্ধ-২৫ বছর বয়সীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বেকারত্বের লাগাম ধরে রাখার উদ্দেশ্যে ২ বিলিয়ন পাউণ্ডের ‘কিকস্টার্ট স্কিম’ চালু করেছে ব্রিটিশ সরকার।
এই প্রকল্পের আওতায় ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের ৬ মাসের নূন্যতম বেতন প্রদান করবে সরকার। একই সাথে তাদের নিয়োগদাতাদের বাড়তি আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হবে। প্রকল্পটি শুরু হবে নভেম্বরের শুরুতে। তরুণরা তাদের স্থানীয় জবসেন্টারের মাধ্যমে এর জন্য আবেদন করতে পারবে। প্রদত্ত সুযোগটি গ্রহণ করতে সরকারের পক্ষ থেকে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়েছে।
প্রকল্পটি কমপক্ষে ১ বছর চালু থাকবে এবং ভালোভাবে চললে মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে। যে কোনো ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের যতোগুলো প্রয়োজন ততগুলো তহবিলের জন্য আবেদন করতে পারবে।
২ সেপ্টেম্বর, বুধবার তরুণদের কর্মসংস্থানে সহায়তার উদ্দেশ্যে ‘কিক স্টার্ট’ স্কিমের ঘোষণা দিয়েছেন চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক এবং ওইদিন থেকে প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ২ বিলিয়ন পাউণ্ডের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন থেকে বেকার থাকা ইউনিভার্সেল ক্রেডিট নির্ভর ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের কর্মসংস্থানে সহায়তা করা হবে।
প্রকল্পটির মাধ্যমে একজন তরুণ কর্মচারীর সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২৫ ঘন্টা নূন্যতম মজুরী, জাতীয় বীমা ও পেনসন শতভাগ পুষিয়ে দেবে। একই সাথে নিয়াগকারী প্রতিষ্ঠান চাইলে মজুরী শীর্ষে রাখতে সক্ষম হবে।
বর্তমানে একজন তরুণ ঘন্টায় নূন্যতম ৮.২০ পাউ- আয় করে থাকেন। সেই হিসেবে ২৫ ঘন্টার মজুরী হয় ২০৫ পাউণ্ড। একই সাথে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা ও কর্মচারীদের ট্রেইনিং বাবদ আরো ১,৫০০ পাউণ্ড করে প্রদান করা হবে।
সরকারের আহবানে ইতোমধ্যে সাড়া দিয়েছে জায়ান্ট চেইন সুপারস্টোর টেসকো। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ১ হাজার কর্মসংস্থানের আবেদেনর পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে। এছাড়া নেটওয়ার্ক রেলও এই প্রকল্পে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। রেজুলেশন ফাউণ্ডেশনের আভাস অনুযায়ী এই প্রকল্প প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ তরুণকে চাকুরী খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পটি তরুণদের দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস তৈরীতে সহায়তা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং আরো কর্মসংস্থানের পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করাই এটির উদ্দেশ্য।
চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক বলেছেন, করোনা ভাইরাস থেকে বৃটেনকে ফিরিয়ে আনতে তিনি তাঁর গ্রীষ্মকালীন মিনি বাজেটে এই প্রকল্পটির ঘোষণা করেছিলেন।
তিনি বলেন, এটি হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর কেরিয়ার শুরু করার সুযোগ, অন্যথায় মহামারির তাদেরকে পেছনে ফেলে রাখতো।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, তিনি তরুণদের বেকারত্ব মোকাবেলাকে সরকারের পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার শীর্ষে স্থান দিয়েছেন।
এতদ্বসত্ত্বেও এবছর এক মিলিয়নেরও বেশী তরুণ কাজের বাইরে থাকবে বলে ভয়ানক পূর্বাভাস প্রদান করেছেন।
এবছর প্রায় ৭ লক্ষ তরুণ-যুবা তাদের শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি টেনে চাকুরী বাজারে প্রবেশ করছে। একই সাথে মার্চ থেকে সাথে ১ মিলিয়নের চতুর্থাশেরও বেশী অনুর্ধ ২৫ বয়সীরা বেকারত্ব ভাতার আবেদন করেছে। এছাড়া করোনা ভাইরাসের কারণে বেশীরভাগ তরুণ চাকুরী হারা হয়েছেন কিংবা কাজে থাকাবস্থায় ফারলোভূক্ত হয়েছেন।
চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক অর্থনীতিকে ফিরিয়ে আনতে তার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে শিক্ষানবিশ নিয়োগের জন্য ফার্মগুলিকে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ারও পরিকল্পনা করেছেন। আর এজন্য ক্রিসমাসের পরেও নিয়োগকৃত কর্মচারীদের ধরে রাখলে তাদেরকে নগদ ১ হাজার পাউ- অনুদান দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, পর্যায়ক্রমিক লকডাউন শিথিলের প্রথমদিকে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বৃটেনের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখারতে অবকাঠামো খাতে ৫ বিলিয়ন পাউণ্ডের বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক হাউজিং, হসপিটালিটি, পরিবেশ ও চাকুরী খাতে বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা প্রদানের ঘোষণা দেন। বেকারত্ব সঙ্কট কাটাতে চ্যান্সেলর ৩০ বিলিয়ন পাউণ্ড বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। চ্যান্সেলরের ঘোষণায় বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে রাজস্ব মওকুফ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিএটি হ্রাসসহ হসপিটালিটি খাতকে চাঙ্গা করতে রেস্টুরেন্ট, পাব ও ক্যাফেতে ৫০% ছাড়ে খাবার গ্রহণের সুযোগ প্রদানের কথা জানানো হয়েছিলো। রেস্টুরেন্ট ব্যবসাকে প্রতিনিধিত্বকারী বৃটেনের হসপিটালিটি এণ্ড ট্রেড প্রতিনিধিরা সরকারের এমন পরিকল্পনাকে উষ্ণ স্বাগত জানিয়েছিলেন। বাস্তবেও দেখা গেছে যে, সাময়িক হলেও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা বেশ চাঙ্গাভাব এবং সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে সক্ষম হয়েছে। ৫০% ছাড়ে একসাসে রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে ও পাবে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।