সকল বিচার বহির্ভূত হত্যা ও গুমের দায় প্রধান প্রধামন্ত্রীকেই বহন করতে হবে
সম্পাদকীয় ।। ইসু্য ২১৬৬
দেশে দেশে যারা গুমের শিকার হয়েছেন তাদের স্মরণ করার জন্য জাতিসংঘ ঘোষিত দিবস ছিল গত ৩০ আগস্ট। গুমের শিকার স্বজনদের কান্নার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশেও গুম হওয়া পরিবারের স্বজনদের সংগঠন ‘মেয়েদের ডাক’র উদ্যোগে সমাবেশ করে দিনটি পালিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘ নখ-দন্তহীন হলেও এটা সুখের বিষয় যে তারা গুমসহ অন্যান্য অনিয়ম ও অনাচারের বিরুদ্ধে কাগুজে বিবৃতি প্রদান করে। কিন্তু মিসরের স্বৈরশাসক সিসি থেকে নিয়ে বাংলাশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত কেউই তাদের দেশে চলমান গুমের রাজনীতি নিয়ে চিন্তিত নয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশের ভয়াবহ অবস্থা বর্ণনা করে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব হিউম্যান রাইটস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ , এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন ও অধিকারসহ ১২টি আন্তর্জাতিক এবং বাংলাদেশি মানবাধিকার সংগঠন আলোচ্য দিবস উপলক্ষে এক যৌথ বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে, ২০০৯ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ৩১ শে জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে অন্তত ৫৭২ জন বিভিন্ন পেশার মানুষ নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুম হয়েছেন।
যারা গুমের শিকার হয়েছেন তাদের মধ্যে বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীরা সংখ্যা গরিষ্ঠ। পুলিশের গুম ও গ্রেফতার বানিজ্য ওসি প্রদীপের গুম বানিজ্য ফাঁস হওয়ার পূর্বেই দেশবাসীর তা জানা ছিল। দেশবাসী যেটা জানে না তা হচ্ছে পুলিশের গুম ও গ্রেফতার বানিজ্যে সরকারী দলের কারা অংশীদার। প্রদীপের কাছ থেকে সে তথ্য পাওয়া গেলে দেশের উপকার হবে।
সম্প্রতি গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘গুম-খুন শুরু করেছেন জিয়াউর রহমান।’ তার এ বক্তব্য কি বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে? তা ছাড়া কারো শুরু করা খারাপ দৃষ্টান্ত প্রধানমন্ত্রী কেনো অনুসরণ করবেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। আসলে এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি সিরাজ শিকদার এবং জাসদসহ বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর কথা দেশের মানুষের স্মরণে এনে দিয়েছেন। এ জন্যে আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।
বাংলাদেশে গুমের তালিকায় সাবেক সংসদ সদস্য থেকে নিয়ে অসংখ্য সাধারণ মানুষ রয়েছেন। এ তালিকায় সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম, সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, ব্রিগেডিয়ার (অবসরপ্রাপ্ত) আমান আযমী, ব্যরিস্টার আরমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদ ছাড়াও বহু রাজনৈতিক কর্মী ও নানা পেশার মানুষ রয়েছেন।
গুম হওয়া পরিবারের স্বজনদের সংগঠন ‘মেয়েদের ডাক’র উদ্যোগে ঢাকায় আয়োজিত সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুম হওয়া লোকদের উদ্ধার করতে পারছে না, পরিবারের পক্ষ থেকে দেয়া মামলা অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ নিচ্ছে না, কোনো মামলা নিলেও এর তদন্ত হয় না। সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকার পরও উত্তর পাওয়া যায় না, কারণ হচ্ছে রাষ্ট্র এর সাথে সম্পৃক্ত। যে দেশে প্রধানমন্ত্রীর হুকুম ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না সে দেশে সকল বিচার বহির্ভূত হত্যা ও গুমের দায় শেষ পর্যন্ত প্রধান মন্ত্রীকেই বহন করতে হবে।