মহানবী (স.) কে অবমাননা করায় ভারতে বিক্ষোভ, পুলিশের গুলিতে ৩ জন নিহত

সুরমা ডেস্ক
লণ্ডন, ১৩ আগষ্ট – মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) কে নিয়ে ফেইসবুকে অবমাননাকর পোস্ট প্রদান করায় ভারতের ব্যাঙ্গালোরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। উত্তেজিত জনতা বিপুলসংখ্যক গাড়িতে আগুন দেয় ও ভাঙচুর করে। এসময় পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে গুলি ছুড়েছে বলে দাবী করেছে পুলিশ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা, এনডিটিভি। এতে বলা হয়েছে, ওই সহিংসতায় পুলিশের ৬০ সদস্য আহত হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলা হয়েছে, ফেইসবুকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) কে নিয়ে অবমাননাকার পোস্ট দিয়েছিলেন স্থানীয় কংগ্রেস দলীয় এমএলএ শ্রীনিবাস মূর্তির ভাইপো নবীন।
এ নিয়ে মানুষ উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তারা বিক্ষোভ শুরু করে। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। পরে নবীনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উত্তেজিত জনতার হাত থেকে রক্ষা করতে মুসলমানরা সেখানকার একটি মন্দিরের বাইরে হাতে হাত ধরে নিরাপত্তা বেষ্টনি গড়ে তোলেন। কাউকে ওই মন্দিরের কোনো ক্ষতি করতে দেননি তারা। টুইটারে এমন ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়েছে, এটাই হলো ভারতের সৌন্দর্য্য।
এনডিটিভি খবরে বলা হয়েছে, কংগ্রেস দলীয় একজন এমএলএ’র এক আত্মীয় ফেইসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। তা নিয়ে ১১ আগস্ট, মঙ্গলবার রাতে শহরের পূর্বাংশে সহিংসতা শুরু হয়। বহু গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এমএলএ শ্রীনিবাস মূর্তির বাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলে তারা। ওই পোস্টটি ফেইসবুকে দিয়েছিলেন শ্রীনিবাস মূর্তির ভাইপো নবীন। সহিংসতা ভয়াবহ আকার ধারণ করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি করে। এতে তিনজন নিহত হন। পরে ১১০ জনকে গেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে নবীনকেও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে ও গুলি করে। ব্যাঙ্গালোর পুলিশ টুইটারে বলেছে, ডিজি হালি ও কেজি হালি পুলিশ স্টেশনে সহিংস হামলা হয়। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। গুলি করে। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন পুলিশ কমিশনার। যারা অপরাধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিক্ষোভের সময় বিক্ষুদ্ধ লোকজন ২৪টি ফোর-হুইলারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় পুলিশ স্টেশনে রাখা ২০০ মোটর সাইকেলেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। একটি পুলিশ স্টেশন খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যাঙ্গালোর পুলিশ কমিশনার কমল পান্ট বলেছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। এ সময় সেখানে আহত হয়েছেন একজন সাংবাদিক। ১২ আগস্ট, বুধবার সকালে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পা হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। বলেছেন, সহিংসতার নেপথ্যে যারা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কংগ্রেস দলের ওই এমএলএ জনগণকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। কর্নাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাইও একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন। তাতে তিনি জনগণকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি অগ্নিসংযোগ ও লুটপাতের নিন্দা জানিয়েছেন। জমিয়তে হিন্দের মুফতি পিএম মুজাম্মিল সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মহানবী (স.)কে নিয়ে যারা উস্কানি সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। পুলিশ কমিশনার কমল পান্ট বলেছেন, নবীনকে ওই অবমাননাকারী পোস্টের কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বসবরাজ বোম্মাই। ওদিকে মুসলিম বন্ধুদের প্রতি শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন শ্রীনিবাস মূর্তি। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমার মুসলিম বন্ধুদের কাছে অনুরোধ কিছু দুর্বৃত্তের ভুলের জন্য আমাদের লড়াই করা উচিত নয়। যা নিয়েই লড়াই হোক, আমরা ভাই-ভাই। তাই আমার মুসলিম বন্ধুদের প্রতি অনুরোধ শান্ত থাকুন। আমি আপনাদের পাশে দাঁড়াব।