বৃটিশ স্বারাষ্ট্রমন্ত্রীর অশোভন আচরণের নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার
এ সপ্তাহের সম্পদকীয়
বৃটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেছে, তিনি তাঁর মন্ত্রণালয়ের অফিসারদের সাথে দুর্ব্যাবহার ও গালাগালি করেন। এ কারণে হোম অফিসের ৩৩ বছরের পুরানো কর্মকর্তা স্যার ফিলিপ রুটনাম চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন। ফিলিপ রুটনাম বিষয়টি নিয়ে আইনী লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সংকল্পও ঘোষণা করেছেন। যার রাজনৈতিক হিরো আইরন লেডি মার্গারেট থ্যাচার তার ব্যাপারে এ রকম অভিযোগ বিস্ময়কর নয়। বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে, অভিযোগের কোনো তদন্ত ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নিজের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে সাফাই দিয়ে বলেছেন, প্রীতি প্যাটেল একজন চমৎকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রীতি প্যাটেল এর আগেও বিবিসি-সহ বিভিন্ন মিডিয়ার শিরোনাম হয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েই প্রীতি প্যাটেল ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি এমন ব্যবস্থা নিবেন যে ক্রিমিনালরা আইন ভঙ্গ করতে ভীত হয়ে ওঠবে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা, বিশেষ করে নাইফ-ক্রাইমের ব্যাপারে যারা খবর রাখেন তারা জানেন, দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দম্ভভরে যে কথা বলেছেন এর কোনো বাস্তব আলামত দেখা যাচ্ছে না। টেরিজা মে’র মন্ত্রীসভায়ও প্রীতি প্যাটেল ছিলেন এবং সে আমলে তিনি দুটো মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে মন্ত্রীসভা থেকে প্রীতি প্যাটেলকে অসম্মানজনক ভাবে বিদায় নিতে হয়।
২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে বিবিসি খবর দেয়, আগস্ট মাসে ইসরাইলে ছুটি কাটাতে গিয়ে প্রীতি প্যাটেল সে দেশের রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক ব্যক্তিদের সাথে বৈঠক করেন। উদ্দেশ্য ছিল, অধিকৃত গোলান মালভূমিতে পরিচালিত ইসরাইলের মানবিক অভিযানে বৃটেনের আর্থিক সহায়তা প্রদানের সম্ভাব্যতা যাচাই করা। সরকারের অজান্তে কোনো বৃটিশ মন্ত্রী এ রকম বৈঠকে যোগ দিতে পারে না। তা ছাড়া বৃটেন গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের জবর দখলকে স্বীকৃতি দেয় না। মন্ত্রী হিসেবে প্রীতি প্যাটেলের এ কাজটি ছিল মারত্মক প্রফেশনাল অসদাচরণ। পরে মন্ত্রীসভার বৈঠকে উপস্থিত হলে টেরিজা মে তাঁকে কঠোর ভাষায় ভর্ৎসনা করলে প্রীতি প্যাটেল তাঁর কাজের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরে জানা যায়, প্রীতি প্যাটেলের বাড়াবাড়ি নিছক এখানেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি এর আগে সরকারের অজ্ঞাতসারে বৃটিশ পার্লামেন্ট ভবনে ইসরাইলের এক মন্ত্রীর সাথে এবং নিউ ইয়র্কে গিয়ে ইসরাইলী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে বৈঠক করেছেন। তাই ক্ষমা চাওয়ার পরও তাঁকে সে সময় মন্ত্রীসভা থেকে বিদায় নিতে হয়।
এবার হোমঅফিসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা প্রীতি প্যাটেলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে যে অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেছেন তাও কম গুরুতর নয়। প্রীতি প্যাটেল নিছক মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করে চলে যাওয়া আমরা চাই না। উচ্চপদে কর্মরত একজন সিনিয়র সিভিল সার্ভেন্ট চাকরি থেকে কোন অবস্থার প্রেক্ষিতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন তা তদন্তের মাধ্যমে উদঘাটন করতে হবে এবং তদন্ত পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে এমন কাউকে যিনি হোম অফিস বা সরকারের কেউ নয়। নতুবা সরকার বিষয়টা ধামাচাপা দিয়ে শেষ করে দিবে। দেশের জন্যে তা মোটেই কল্যাণকর নয়।