নিউজ

ভারতে দাঙ্গা: হিন্দুবাদীদের তাণ্ডব: নিহত ২৫ ও শত শত আহত, মসজিদে আগুন, ভাঙচুর

সুরমা ডেস্ক
লণ্ডন, ২৭ ফেব্রুয়ারী – নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠেছে গোটা ভারত। রাজধানী দিল্লিতে হিন্দুত্ববাদীদের তাণ্ডব থেকে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। তাদের উন্মুত্ত আক্রমণে আহত শত শত জন। উগ্র-হিন্দুদের আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি উপাসনালয় মসজিদও।

গত ২৪ ফেব্রæয়ারী, সোমবার শুরু হওয়া দাঙ্গায় অন্তত ৭০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। মঙ্গলবার রাতে পরিস্থিতি পর্যালোচনায় উত্তর-পূর্ব দিল্লির ডিসিপি’র সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠক করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। তামিলনাড়ু সফর বাতিল করে দফায় দফায় বৈঠক সারেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে দিল্লীতে চলমান দাঙ্গার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে দায়ী এবং তা সামাল না দিতে পারায় তার পদত্যাগ দাবী করেছেন কংগ্রেস প্রধান সোনিয়া গান্ধী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বা আক্রান্তদের বাঁচাতে পুলিশ তেমন কিছু করছে না বলেও অভিযোগ ওঠেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের কাছে একজন বোরকাপরা তরুণী পুলিশ কিছু করছে না বলে নালিশ করেন।

উল্লেখ্য, মৌলবাদী বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে নানাভাবে ভারতের মুসলমানদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। দ্বিতীয় দফায় বিজেপি ক্ষমতায় এসে নাগরিকত্ব সংশোধনীর নামে ভারত থেকে মুসলিম বিতাড়নের মাস্টার প্লান এগুচ্ছে তারা। আর তা বাস্তবায়নের জন্য সরকার প্রধান মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ নেতৃস্থানীয়রা প্রকাশ্যে নানা হুমকিও দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের আস্কারায় উগ্র হিন্দুরা

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী সভা-সমাবেশে একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে মুসলমানদের হত্যা করছে।?বাড়ি-ঘর, দোকানপাট ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করে যাচ্ছে। তাদের হাত থেকে মসজিদও রক্ষা পাচ্ছে না।

এদিকে, এই দাঙ্গার মধ্যেই ভারত সফরে এসেছেন আরেক মুসলিম বিদ্বেষী, আমেরিকান প্রেসিডেণ্ট ডোনাহŸ ট্রাম। তাকে ঘটা করে সংবর্ধনা জানিয়েছে মৌলবাদী মোদি সরকার। আহমদাবাদের বিশাল সংবর্ধনায় ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করে তাকে সবচেয়ে ভালো বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

বিতর্কিত সিএএ আইনের বিরুদ্ধে দিল্লির শাহিনবাগে অবস্থান নিয়ে টানা দুই মাস ধরে বিক্ষোভ করে আসছেন নারীরা। ওই অবস্থানের কারণে বন্ধ হওয়া সড়ক কর্তৃপক্ষ খুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার পর গত ২২ ফেব্রæয়ারী, শনিবার রাত থেকে জাফরাবাদ মেট্রোস্টেশনে বিক্ষোভ শুরু হয়। এর জবাবে পরদিন ২৩ ফেব্রæয়ারী, রবিবার বেলা ৩টায় প্রায় এক কিলোমিটার দূরের মৌজপুর চকে সিএএ সমর্থকদের জড়ো হওয়ার আহŸান জানিয়ে টুইট করেন দিল্লির বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র।

হিন্দুত্ববাদী কপিলের সেই উসকানির পর সহিংসতা নতুন মাত্রা পায়। তাণ্ডব চালানো হয় মসজিদসহ মুসলিমদের দোকানে। হতাহত হয় বহু মানুষ।

ভারতের রাজধানীতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গত ২৪ ঘণ্টায় তিনটি বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ছিলেন আইপিএস অফিসার এসএন শ্রীবাচ্চব। পরিস্থিতি মারাম্নক আকার ধারণ করার পর মঙ্গলবার তাকে বিশেষ পুলিশ কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তারপরও সেখান থেকে একের পর এক মৃত্যুর খবর আসে। এক আদেশে গত তিন দিনে রাজধানীর সহিংসতায় আহতদের জরুরি চিকিৎসা ও জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের প্রতি নির্দেশনা জারি করেছেন দিল্লির হাইকোর্ট।

ট্রাম্পের মুখে মৌলবাদী মোদির প্রশংসা:
ভারত সফরে এসে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা পঞ্চমুখ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাহŸ ট্রাম্প। বলেছেন, সন্ত্রাস দমন এবং জঙ্গি মতাদর্শের বিরুদ্ধে এক হয়ে লড়াই করতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। এ কারণেই পাকিস্তান সীমান্তে পরিচালিত বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনায় তার প্রশাসন ইসলামাবাদের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারী, সোমবার ভারতের গুজরাট রাজ্যর আহমেদাবাদে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়োজিত ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রথমবারের মতো দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত রয়েছেন ট্রাম্প। অনুষ্ঠানে ‘নমস্তে’ ‘নমস্তে’ বলেই ভাষণ শুরু করেন তিনি।

বলেন, আট হাজার মাইল পেরিয়ে এখানে এসেছি একটা বার্তা দিতে, তা হল আমেরিকা ভারত ও ভারতবাসীকে ভালোবাসে। এমন সুন্দর একটা স্টেডিয়ামে আপনাদের মাঝে এসে আমি খুব আনন্দিত। ভারতকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন চাওয়ালা। সেই চাওয়ালা বন্ধু নরেন্দ্র মোদির জন্য আমি গর্বিত। মোদিকে সবাই ভালোবাসে। এই অনুষ্ঠানেই স্টেডিয়ামটির উদ্বোধন করেন ট্রাম্প।

নিজের বক্তব্যে অখণ্ড ভারত প্রসঙ্গও তুলে ধরেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বলেন, ভারত এমন একটি দেশ, যেখানে হিন্দু, মুসলিম, শিখ, জৈন এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ পাশাপাশি বাস করে। ভারতকে এক মহান দেশ আখ্যা দেন তিনি।

এ সময় তিনি ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক বাধা দূর করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান। বক্তব্যের এক পর্যায় ট্রাম্প পাকিস্তানের সমালোচনা করে বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ইসলামাবাদকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

স্টেডিয়ামের মঞ্চ থেকেই ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অস্ত্র চুক্তির কথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ভারতের সেনাবাহিনীকে মজবুত করতে সবরকম চেষ্টা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র। সে কারণেই ভারতকে অত্যাধুনিক সেনা হেলিকপ্টার সরবরাহ করা হবে। এতে ভারতীয় সেনা আরও বেশি শক্তিশালী হবে।

স্ত্রী মেলানিয়া, বড় মেয়ে ইভাংকা এবং জামাই জ্যারেড কুশনারসহ একটি প্রতিনিধিদলকে সঙ্গে নিয়ে সোমবার বেলা ১১টা ৪০ নাগাদ ভারতের আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন ডোনাহŸ ট্রাম্প। সেখানে তাকে স্বাগত জানান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিমান থেকে নেমেই মোদিকে আলিঙ্গন করেন ট্রাম্প।

এরপর বিমানবন্দর থেকে সপরিবারে সাবরমতী আশ্রম যান ট্রাম্প। আশ্রম হয়ে নবনির্মিত এবং বিশ্বের বৃহত্তম মোতেরা স্টেডিয়ামে পৌঁছান তারা। সেখানে ফার্স্টলেডি মেলানিয়াকে নিয়ে চরকা কাটেন ট্রাম্প। এ সময় স্টেডিয়ামের ২২ কিলোমিটার পথের দু’পাশে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার লোক ট্রাম্পকে স্বাগত জানান।

তাদের কারও হাতে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা, কারও হাতে ভারতের পতাকা ছিল। রাস্তায় পাশে বিলবোর্ডে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ লেখা ও বিভিন্ন ৗোগানসহ দুই নেতার ছবি শোভা পাচ্ছিল। ট্রাম্প স্টেডিয়ামে প্রবেশের সময় স্পিকারে সঙ্গীতশিল্পী এব্বন জনের গান বাজছিল। জনের গান ট্রাম্পের বিশেষ পছন্দ, সেটা ভারতীয় কর্তৃপক্ষেরও জানা ছিল।

মোতেরা স্টেডিয়ামের ‘নমস্তে ট্রাম্প’ মঞ্চে একসঙ্গে হাজির হন ট্রাম্প-মোদি। উপস্থিত এক লাখেরও বেশি লোক ‘মোদি, মোদি’ ধ্বনিতে স্টেডিয়াম মুখর করে তোলে।

ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ১৩০ কোটি ভারতীয়র পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে স্বাগত জানালাম। মেলানিয়া ট্রাম্পের ভারতে আসা আমাদের জন্য বড় সম্মানের বিষয়।

ইভাংকা ও জ্যারেডের উপস্থিতিও আমাদের কাছে বড় সম্মানের বিষয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আপনি যে দেশ থেকে এসেছেন সেই দেশে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য রয়েছে। আপনার আসার মধ্য দিয়ে দু’দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হল। আপনাকে স্বাগত জানাতে পুরো দেশ উন্মুখ হয়েছিল।

আহমেদাবাদ থেকে ট্রাম্প ও তার পরিবার তাজমহল দেখতে আগ্রার উদ্দেশে রওনা হন। সন্ধ্যায় তারা বিমানে ভারতের রাজধানী দিল্লি যান। সেখানে আজ দু’পক্ষের মধ্যে শীর্ষপর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ষষ্ঠ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভারত সফর করেন ট্রাম্প। এর আগে ২০১৬ সালে বারাক ওবামা ভারত সফর করেছিলেন। তখনও ক্ষমতায় ছিল নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার।

অমিত শাহ’র পদত্যাগ দাবী সোনিয়ার:
দিল্লিতে চলমান এমন সহিংসতার জন্য দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেই দায়ী করেছেন কংগ্রেসপ্রধান সোনিয়া গান্ধী। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারায় অমিত শাহর পদত্যাগ দাবি করেছেন সোনিয়া।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লিতে কংগ্রেসের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ২৬ ফেব্রæয়ারী, বুধবার অমিত শাহর পদত্যাগ দাবি করেন সোনিয়া গান্ধী। কংগ্রেসপ্রধান বলেন, গত সপ্তাহ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী করছেন? এই সপ্তাহেই বা কী করেছেন? পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে দেখেও কেন আগেই প্যারামিলিটারি মোতায়েন করেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়? এমন পরিস্থিতির জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ গোটা কেন্দ্রীয় সরকার দায়ী। কংগ্রেস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবী করছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের প্রশাসনকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন সোনিয়া গান্ধী। কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সভাপতি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার পর তিনি বলেন, দুই প্রশাসনই সময়মতো যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। সোনিয়া বলেন, রাজধানীতে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার ও অরবিন্দ কেজরিওয়াল সমানভাবে দায়ী। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রচ্চ এলাকার মানুষদের পাশে দাঁড়াতে এবং মানুষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতেও কেজরিওয়ালের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন কংগ্রেসপ্রধান।

দিল্লির মসজিদে আগুন দেয়ার যে ঘটনা বিতর্কের তুঙ্গে:
ভারতের রাজধানীতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরুর পর থেকেই নানা স্পর্শকাতর ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ছে টুইটারসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে। কিছু টিভিতেও সেসব ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে। দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হচ্ছে ‘অনেক ফুটেজই ভুয়া’। ২৫ ফেব্রুয়ারী, মঙ্গলবার সরকারের পক্ষ থেকে টিভি চ্যানেলগুলোকে স্পর্শকাতর ফুটেজের ব্যবহার নিয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

তবে মসজিদে আগুন দিয়ে সেটির মিনারে গেরুয়া রংয়ের পতাকা উড়িয়ে দেয়ার যে ভিডিও ফুটেজটিকে দিল্লি পুলিশ ‘ভুয়া’ প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে, বিভিন্ন সূত্র থেকে যাচাই করে তার সত্যতা নিশ্চিত করেছে অল্ড নিউজ নামে অনলাইন-ভিত্তিক একটি নিউজ সাইট। সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশিত বিভিন্ন খবর, ছবি এবং ফুটেজের যথার্থতা যাচাই করা অল্ড নিউজের অন্যতম প্রধান একটি কাজ।

মসজিদে হামলার যে ফুটেজেটি মঙ্গলবার তার টুইটার পেজে শেয়ার করেন সাংবাদিক রানা আইয়ুব, তাতে দেখা যায় — ‘জয় শ্রীরাম’ এবং ‘হিন্দুস্তান হিন্দুদের’ সৌাগান দিয়ে একদল লোক একটি মসজিদে ভাঙচুর করে কট্টর হিন্দুত্ববাদের প্রতীক একটি গেরুয়া পতাকা মসজিদটির মিনারে উড়িয়ে দিচ্ছে।

এই ভিডিও শেয়ার করার পরপরই চরম সমালোচনা এবং ট্রলের মুখে পড়ে যান সাংবাদিক রানা আইয়ুব। অনেকে লিখতে থাকেন – ফুটেজটি ভুয়া এবং মুসলিম এই সাংবাদিক সাম্প্রদায়িক এবং তিনি দাঙ্গা ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। অনেকে টুইট করেন যে ভিডিওটি দু বছর আগে বিহারের সমস্তিপুর এলাকার একটি ঘটনার ফুটেজ।

রমেশ সোলংকি নামে একজন টুইটারে লেখেন- তিনি রানা আইয়ুবের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন। দিল্লি পুলিশও দাবি করে অশোকবিহারে মসজিদে হামলার ফুটেজটি ভুয়া, এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। চাপে পড়ে টুইটটি মুছে দেন রানা আইয়ুব।

কিন্তু অব্ব নিউজের অনুসন্ধানে এখন দেখা যাচ্ছে মঙ্গলবার দিল্লির অশোকনগর এলাকায় মসজিদে হামলা, আগুন দেয়া এবং গেরুয়া পতাকা ওড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। অব্ব নিউজ ’দি ওয়্যার’ নামে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের দুজন সাংবাদিকের সাথে কথা বলেছেন যারা ঐ হামলার প্রত্যক্ষদর্শী এবং তাদের একজন ঐ হামলার ভিডিও তুলেছেন। ফুটেজের ইলেকট্রনিক ডেটা থেকে দেখা গেছে, এটি তোলা হয়েছে ২৫ ফেব্রæয়ারি বেলা ৩টা ৫৭ মিনিটে।

ওয়্যারের তোলা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে মসজিদের আগুন নেভানোর জন্য দমকল বাহিনী হোস ব্যবহার করছে। মসজিদ ভবনটি থেকে ধোঁয়া উঠছে এবং মসজিদের সেই মিনারটি দেখা যাচ্ছে যেটি সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজেও দেখা গেছে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে কেউ কেউ অবশ্য বলছিলেন- ঘটনা ঘটেছে অশোক বিহার নামক এলাকায়। অব্ব নিউজ বলছে – অশোক বিহারে নয় অশোক নগর এলাকার ’বড় মসজিদে’ আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। নিশ্চিত হওয়ার পরপরই সাংবাদিক রানা আইয়ুব আবারও মসজিদে হামলার ফুটেজটি শেয়ার করেছেন।

’আর আজাদি চাইবি?’
সোশ্যাল মিডিয়াতে পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কিত আরেকটি ভিডিও ফুটেজ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক চলছে। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে – পাঁচজন আহত তরুণ-যুবক মাটিতে পড়ে আছেন এবং কয়েকজন পুলিশ তাদের ঘিরে ধরে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে। এরই মধ্যে তাদেরকে দিয়ে জোর করে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ানো হচ্ছে।

পাশাপাশি, একজন পুলিশকে চিৎকার করে বলতে শোনা যাচ্ছে — ‘আর আজাদি চাইবি?’

শাহিনবাগ অফিসিয়াল নামে একটি টুইটার অ্যাকাউন্টে এই ফুটেজটি পোস্ট করে লেখা হয় – ‘যখন রক্ষক ভক্ষক হয়, তখন আমরা কোথায় যাবো?’

এই ভিডিওটিরও সত্যতা যাচাই করেছে অব্ব নিউজ। অব্ব নিউজ একই ঘটনার অন্য একটি ভিডিও ফুটেজ জোগাড় করতে সমর্থ হয়। সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজটির সাথে তাদের জোগাড় করা ফুটেজটির মধ্যে মিল খুঁজে পেয়েছে তারা। দুটো ফুটেজের স্ত্রিনশটে একই চিত্র দেখা গেছে, যেমনÐ ১. পড়ে থাকা একজন তরুণের মাথা আরেকজনের ওপর ২. অন্য দুজনের গায়ে কালো রংয়ের টি-শার্ট। নির্যাতনের শিকার ঐ যুবকদের একজনের সাথে অব্ব নিউজ কথা বলতেও সমর্থ হয়েছে।

তিনি তার বক্তব্য ভিডিও করে সেটি অব্ব নিউজকে পাঠিয়েছেন। যেটিতে তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে এভাবে – ‘পুলিশ ৫-৬ জনকে বেধড়ক পিটিয়েছে। একজনের হাত ভেঙ্গে দিয়েছে। আরেকজনের পা ভেঙ্গে দিয়েছে। আমার হাত ও পা দুটোই ভেঙ্গেছে। আমার মাথায় আট থেকে দশটি সেলাই দিতে হয়েছে। পুলিশগুলো আমাদের বলছিলো – আর আজাদি চাইবি?’

অব্ব নিউজ বলছেÐ গত ২৪ ফেব্রæয়ারি সোমবার দিল্লির জাফরাবাদ এলাকার কাছে পুলিশি নির্যাতনের এই ভিডিও ফুটেজটি যথার্থ। ঘটনা ঘটেছে কারাদামপুরি এলাকার কৃষ্ণ মার্গ বাস স্টপের কাছে বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে। সূত্র : বিবিসি।

‘আতঙ্কে আছি; পুলিশ কিছু করছে না’:
৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের পর কাশ্মিরের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে বিরিয়ানি খেতে দেখা গিয়েছিল তাকে। দিল্লির সংঘর্ষে ফের ময়দানে সেই অজিত দোভাল। বুধবার দিল্লির সংঘর্ষ উপদ্রæত এলাকা ঘুরে দেখলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। তবে সেখানে গিয়েও অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে দোভালকে। তার সামনেই বোরখা পরা এক তরুণী নালিশ করেন,‘আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। পুলিশ কিছু করছে না।’ তবে সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়ে দোভাল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশেই তিনি পরিদর্শনে এসেছেন।

তিন দিন ধরে কার্যত জ্বলছে উত্তর-পূর্ব দিল্লি। পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, আগে থেকে সক্রিয় না হওয়ায় পরিস্থিতি কার্যত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে। বুধবারও বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ, ইট-পাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার দুপুরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার অনুরোধ জানান। তারপর বিকেলেই পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে সংঘর্ষে বিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে দেখলেন অজিত দোভাল।

এ দিন উত্তর-পূর্ব দিল্লির জাফরাবাদ, মৌজগঞ্জের গলি-মহল্লায় ঢুকে কথা বলেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। কোথাও কোনও জটলা দেখলেই কাছে এগিয়ে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আশ্বস্ত করে বলেছেন, পর্যাপ্ত পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন রয়েছে। আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। একটি জটলায় এক মহিলাকে তিনি বলেন,‘সম্প্রীতির ভাব বজায় রাখুন। আমাদের একটাই দেশ। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে থাকব। সবাই মিলেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’

এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এলাকার এক তরুণী ছাত্রী অভিযোগ করেন,‘আমরা প্রচণ্ড আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। পড়াশোনা করতে পারছি না। রাতে ঘুমোতে পারছি না।’ দোভাল বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। চিন্তার কোনও কারণ নেই।’ কিন্তু তরুণী তাকে কার্যত থামিয়ে দিয়েই বলেন, ‘পুলিশ কিছুই করছে না।’ তখন এনএসএ দোভাল বলেন, বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।
দোভাল আরো বলেন, সাধারণ মানুষ কেউ অশান্তি চান না। তারা শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশেই থাকেন। কিছু দুষ্কৃতী সেটা নষ্ট করার চেষ্টা করে। তাদের চি?িত করার কাজ চলছে।’

ভারতের ২০ কোটি মুসলিম এখন লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে : ইমরান খান
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে দিল্লিতে টানা তিনদিন ধরে সংঘর্ষ চলার পর বুধবার মুখ খুলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দিল্লিতে সংঘর্ষ ছেড়ে ‘শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার’ আহŸান জানান মোদি। তবে এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দিল্লির চলমান সংঘর্ষ নিয়ে মুখ খুলেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

টুইটারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, গত বছর জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেই এমন ধরনের ঘটনার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন তিনি। তার অভিযোগ, দিল্লির চলমান সংঘর্ষের ঘটনা ও এর প্রেক্ষাপটের সূত্রপাত হয়েছিল গত বছর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করার মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ করার পর। টুইটে অবশ্য সরাসরি দিল্লির নাম উল্লেখ করেননি ইমরান খান।

বুধবার টুইটে ইমরান লিখেছেন,‘ভারত-অধিকৃত কাশ্মিরের ঘটনার পরেই আমি গত বছর জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বলেছিলাম, বোতল থেকে দৈত্যটা বেরিয়ে পড়ল। এ বার রক্তপাত আরো বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিলাম। যার সূত্রপাত হয়েছিল কাশ্মিরে। ভারতে থাকা ২০ কোটি মুসলিম এখন লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। এটা রুখতে গোটা বিশ্বকে এবার এগিয়ে আসতে হবে।’

সিএএ-বিরোধী ও সিএএ-পন্থীদের সংঘর্ষে গত চার দিন ধরে অগ্নিগর্ভ দিল্লি। অন্তত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এখন পর্যন্ত।

এমন ঘটনা যাতে পাকিস্তানে না ঘটে, টুইটে সেই আহবানও জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তিনি লিখেছেন,‘আমি সকলকে সতর্ক করে দিতে চাই, পাকিস্তানে যারা অ-মুসলিম ও তাদের ধর্মস্থানের উপর হামলা করতে উদ্যত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশে সংখ্যালঘুরা অন্য সবার মতোই নাগরিকত্বের সমান অধিকারই পান।’

উল্লেখ্য, ১৪৪ ধারা, কারফিউ জারি করেও দিল্লিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে দিল্লি পুলিশের ভূমিকায়। দিল্লির আইনশৃঙ্খলার ভার ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের উপর। আর সেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে অমিত শাহ। সংঘর্ষ এত বড় আকার নেয়ার জন্য অমিত শাহকেই নিশানা করে সোনিয়া গান্ধী বুধবার বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-সহ গোটা কেন্দ্রীয় সরকারই এর জন্য দায়ী। অমিত শাহের পদত্যাগও দাবি করেছে কংগ্রেস।

পাশাপাশি দিল্লির সংঘর্ষের জন্য বিজেপিকেই দায়ী করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। তিনি বলেন,‘এই সংঘর্ষের পিছনে পরিকত্তিত ষড়যন্ত্র রয়েছে। দিল্লির ভোটের সময় দেশবাসী সেটা দেখেছে। অনেক বিজেপি নেতা উস্কানিমূলক মন্তব্য করে ভয় ও হিংসার পরিবেশ তৈরি করেছে। এমনকি, গত রোববারও এক বিজেপি নেতা একই রকম মন্তব্য করেছেন।’

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close