সম্পাদকীয়

ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ভারতের বর্ণবাদী নাগরিক আইন

সম্পদকীয় ।। সুরমা-ইস‍্যু ২১৪২
ভারতবর্ষের প্রতি নানা কারণে বাংলাদেশের মানুষের পক্ষপাতিত্ব রয়েছে। বহু অনিয়ম ও অনাকাঙ্খিত ঘটনার পরও ভারতের বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষের মধ্যে সখ্যতা বজায় রাখা এবং তাকে আরো উন্নত করার জন্যে ভারতের বিদগ্ধ সুধিমহলের পক্ষ থেকে আন্তরিক প্রচেষ্টা আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু আমরা উদ্বেগের সাথে দেখছি ক্ষমতাসীন সরকার ভারতবর্ষের সে ভাবমুর্তি ধ্বংস করার জন্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হচ্ছে ভারতবর্ষের সাম্প্রতিক বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইন। মুসলিম বিদ্বেষী এবং বর্ণবাদী নাগরিকত্ব আইন’র নাম সিটিজেনশিপ এমেন্ডমেন্ট এক্ট, সংক্ষেপে সিএএ। তা ভারতের দুই কক্ষের সংসদে তা পাশ হয়েছে এবং দেশের প্রেসিডেন্ট সেটাতে স্বাক্ষর করার পর তা এখন আইনে পরিণত হয়েছে।
নতুন নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার আগেই বাংলাদেশ সংলগ্ন ভারতের আসাম প্রদেশে এর উত্তাপ লেগেছে। বিতর্কিত আইনের দোহাই দিয়ে সেখানে বসবাসকারী হাজার হাজার বাংলাভাষী মানুষকে রাষ্ট্রহীন করা হয়েছে। আসামসহ ভারবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ এ আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ভারতের বাইরেও এ আইনের বিরুদ্ধ কথা বলা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয়টি গ্রুপের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণের জন্যে আলোচনা শুরু করেছে। কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বৈষম্যমূলক নাগরিক অধিকার আইনের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাশ হলে বিশ্বসমাজে ভারতের মুখে চুনকালি পড়বে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৭৫১ জন সদস্যের মধ্যে ৬২৬ জন সদস্য ভারতের সিএএ’র বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছেন।
কাশ্মীর এবং নাগরিক অধিকার ইস্যু নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে আলোচনা শুরু হলে বিশ্ববাজারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে এবং পরবর্তীতে সেটা বানিজ্য অবরোধের পর্যায়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
কোনো দেশের অনিয়ম বা মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে বাইরের কেউ কথা বললে এর জবাবে সংশ্লিষ্ট দেশের পক্ষ থেকে এ বলে উড়িয়ে দেয়া হয় যে এটা তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু পৃথিবীর যে কোনো অন্যায়, অবিচার এবং মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার গ্লোবাল ভিলেজের প্রতিটি নাগরিকের রয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে এর বিরুদ্ধে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে সোচ্চার হওয়া বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব ছিল। এ আইনের বিরূপ প্রভাবে সর্বাধিক চাপের মুখে বাংলাদেশ থাকলেও সরকারের কেউ কেউ ইতোপুর্বে এটাকে ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে দাবি করেছেন। সরকারের নতজানু পরারাষ্ট্র নীতি বা ভারত তোষণ নীতির কারণেই তারা এমনটি করেছেন। তবে খুশির কথা, সম্প্রতি একটি বিদেশী টেলিভিশন সাক্ষাতকারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাগরিক আইনের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায় শক্তির জোরে দুর্বল দেশের বিরুদ্ধে মাস্তানী করা গেলেও নিজ দেশের জনগণের সাথে মাস্তানী করে কেউ বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না। হিটলার এবং মুসোলিনীর যুগ আমরা অনেক আগেই পার হয়ে এসেছি। ভারতের মতো সাগরিক সচেতনতার দেশে মানুষের মৌলিক অধিকার দাবিয়ে রেখে কোনো সরকারের পক্ষেই দীর্ঘদিন টিকে থাকা সম্ভব নয়। নিছক ধর্মের দোহাই এবং ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্বের ফাঁকা বুলি দিয়ে ১৩৬ কোটি মানুষের দেশ ভারতবর্ষের অধিকার বঞ্চিত মানুষকে দমিয়ে রাখার হীনপ্রচেষ্টাকে ভারতবর্ষের মানুষ অবশ্যই প্রতিহত করবে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close