নিউজ

দেশে বিনিয়োগ করে লভ্যাংশ না পাওয়ার অভিযোগ দু’ব্যবসায়ীর, লেদদেন ও পার্টনারশীপ সত্য কিন্তু অন্যান্য বিষয় মিথ্যা: দাবী অভিযুক্ত ব্যক্তির

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ১৬ জানুয়ারী – বাংলাদেশে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যবসায় বিনিয়োগ করে লভ্যাংশ না পাওয়াসহ নানাভাবে হয়রানীর অভিযোগ করেছেন দুই ব্রিটিশ-বাংলাদেশী। দশ বছর আগের করা প্রায় আড়াই কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও এখনো লাভের মুখ দেখেননি বলে অভিযোগ করেন তারা। হবিগঞ্জে প্রায় ৫ কোটি টাকার একটি যৌথ প্রকল্পে বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন এই অভিযোগ এনে এখন এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। তবে উত্থাপিত অভিযোগের আশিংক সত্যতা স্বীকার করে অভিযুক্ত ব্যক্তি বলেছেন, লেদদেন ও পার্টশীপের বিষয়গুলো সত্য কিন্তু অন্যান্য বিষয় মিথ্যা।

গত ১০ জানুয়ারী, শুক্রবার লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগের বিস্তারিত তুলে ধরেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী শামসুল ইসলাম রাজু ও আবুল কালাম। এসময় তারা অভিযোগ করে বলেন, হবিগঞ্জে জি এস ব্রাদার্স সিএনজি ফিলিং স্টেশন প্রকল্পে তাদের অংশীদার লণ্ডন প্রবাসী গাজীউর রহমান গাজী সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রবাসীদের অর্থ আত“সাৎ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেই সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া তথ্য মিথ্যা দাবী করে এর প্রতিবাদ জানাতেই লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান শামসুল ইসলাম রাজু ও আবুল কালাম।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে দেশের অর্থনীতির অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে আমরা দুই প্রবাসী শামসুল ইসলাম রাজু এবং আবুল কালাম “জিএস ব্রাদার্স” নামের একটি কোম্পানিতে ২০০৯ সালে বিনিয়োগ করি। কোম্পানীর অংশীদার, লণ্ডনে বসবাসকারী গাজীউর রহমান (গাজী) সম্প্রতি আমাদের কোম্পানী সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে মিথ্যা তথ্যাদি মিডিয়াতে উপস্থাপন করেছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জ্ঞাপন করছি।
অভিযোগকারীরা তাদের বক্তব্যে বলেন, আমাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তারা জিএস ব্রাদার্স নামের ফিলিং স্টেশনের জমি তাদের নামে রেখে দেন। যৌথ ব্যবসার টাকা দিয়ে নিজেদের নামে বিলাসবহুল গাড়ী ক্রয়সহ আমাদের না জানিয়ে ব্যক্তিগত ব্যয় যেমন বাসার কার্পেট, ড্রাইভারের বেতন, কাজের লোকের বেতন, নিজের আত“ীয়দের বেশী বেতন প্রদান করা ইত্যাদি অনিয়ম নিয়ে ২০০৯ সাল থেকেই আমাদের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত হয়।
তারা আরো বলেন, শুধু তাই নয়, চুক্তি অনুসারে প্রতি বছর লাভক্ষতির হিসাব ও তিন বছর অন্তর পরিচালক বদলানোর কথা থাকলেও বিগত দশ বছরে কোম্পানীর কোন লাভের অংশ আমাদের দেয়া হয়নি। এ নিয়ে তাদের সাথে বিরোধের সৃষ্টি হলে লণ্ডনের বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিদের নিয়ে কয়েক দফা আপোষ মিমাংসার চেষ্টা করেও নি?ত্তি হয়নি। পরে আমরা বাধ্য হয়ে লণ্ডন হাইকমিশনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ পাঠাই এবং বিষয়টি সুরাহার জন্য বাংলাদেশে গিয়ে গাজীউর রহমানের (গাজী) এলাকার সংসদ সদস্য হবিগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ এডভোকেট মো. আবু জাহিরের শরণাপন্ন হই।
শামসুল ইসলাম রাজু এবং আবুল কালাম বলেন, আমরা ২০১৮ সালের ১২ মার্চ ঢাকায় এমপি হোস্টেলে মাননীয় সংসদ সদস্যের বাসভবনে এমপি সাহেবসহ ১৬ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে দীর্ঘ ৪ ঘন্টা উভয়পক্ষের আলোচনা হয়। এতে আমরা বিগত ৮ বছরের লাভের অংশ হিসেবে সাড়ে ৪ কোটি টাকা পাওনা দাবী করি। কিন্তু আমাদের ব্যবসায়িক অংশীদার গাজীর দেয়া হিসেব মতে, লভ্যাংশ হয় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
তারা বলেন, মাননীয় সাংসদ এডভোকেট মো. আবু জাহির বৈঠকের সভাপতি হিসেবে আমাদেরকে গাজীর উপস্থাপিত হিসাব অনুসারে আমাদের লভ্যাংশ ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মেনে নেয়ার অনুরোধ করেন। আমরা বিচারকদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এমপি সাহেবের প্রস্তাব মেনে নিয়ে আপোষনামায় উভয়পক্ষ স্বাক্ষর করি। কিন্তু গাজী পরে এই টাকা দিতে টালবাহানা শুরু করেন। তিনি বলেন, টাকা আমাদের কাছে দেবেন না, এমপি সাহেবের কাছে দিয়ে তাঁর কাছ থেকে আপোষনামা নিয়ে যাবেন। পরবর্তীতে তিনি এমপি সাহেবের কাছে পুরো টাকা না দিয়ে প্রথমে ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে আসেন এবং বাকী টাকা দু-এক মাসের মধ্যে পরিশোধ করবেন বলে জানান। এমপি সাহেব তখন আমাদেরকে উক্ত টাকা গ্রহণ কারার জন্য বললে আমরা এই টাকা না নিয়ে সমঝোতা অনুযায়ী পুরো টাকা একসাথে দিতে এমপি সাহেবকে অনুরোধ করি। এর ৫ মাস পর এমপি সাহেব লণ্ডন সফরে এলে বাকি টাকা না দিয়ে গাজী, এমপি সাহেবের কাছ থেকে আপোষনামা নিয়ে যাওয়ার জন্য আবারও কৌশল শুরু করে। তখন আমরা এমপি সাহেবকে বলি, যেহেতু গাজী এক দুই মাসের কথা বলে ৯ মাস পার করেছেন, সেহেতু আপনি তার কাছ থেকে বাকী টাকার একটি চেক নিয়ে নেন। পরবর্তীতে এমপি সাহেব বাকী ৭০ লক্ষ টাকার চেক ব্যাংকে জমা রাখলে তা-ও (চেক) ব্যাংক কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়। এর পরবর্তীতে মাননীয় সাংসদ বাধ্য হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন।
প্রবাসী শামসুল ইসলাম রাজু ও আবুল কালাম লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলেন, আমাদের পাওনা ১ কোটি ২০ লাখ টাকা আত“সাৎ করার হীন উদ্দেশ্যে গাজী তার নিজ এলাকার সংসদ সদস্য এবং তার পরিবারের সদস্যসহ আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা এবং বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। এ ব্যাপারে আমরা দেশে গিয়ে বিভিন্ন সংস্থায় আবেদন করি। শুধু তাই নয় ২০১৩ সালে আমাদের অজান্তে অধিক মুনাফার জন্য ফিলিং স্টেশনে মিটার টেম্পারিং করে ৫৮ লাখ টাকা জরিমানা দিয়েছেন তিনি। এ হীন কর্মকাণ্ডের কথা সরকারী দপ্তরে অঙ্গীকার নামায় স্বীকারও করেছেন তারা।
শামসুল ইসলাম রাজু ও আবুল কালাম এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে, বিষয়টি সম্পর্কে অভিযুক্ত ব্যক্তি লণ্ডনে বসবাসকারী গাজীউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি উত্থাপিত অভিযোগগুলো মিথ্যা দাবী করলেও লেনদেন ও পার্টশীপের বিষয়গুলো আংশিক সত্য বলে স্বীকার করেছেন।
তিনি সুরমাকে বলেন, অভিযোগকারী দুই ব্যক্তি সিৗপিং পার্টনার ছিলেন এবং তারা উভয়ে ৯৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। গাজীউর রহমান বলেন, যৌথ বিনিয়োগের বিষয়টি সঠিক এবং পরে সমস্যা দেখা দিলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মাধ্যমে মধ্যস্থতাও হয়েছে। সে হিসেবে তিনি ৫৫ লাখ টাকা হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি এডভোকেট আবু জাহিরের কাছে হস্তান্তরও করেছেন। এরপর আরো ৬৯,৫৪,৩৬৫ টাকার চেকও এমপি আবু জাহিরের ছেলে মেয়ের নামে প্রদান করলেও বিষয়টি পুরোপুরি মিমাংসা না হওয়া পর্যন্ত চেক জমা না দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। তিনি চেক ডিসঅনারড বা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, চেকটি প্রত্যাখ্যাত হয়নি বরং আমিই তা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কারণ বিষয়টি মিমাংসা হয়নি এবং অভিযোগকারী ব্যক্তিবর্গ তার উপর থেকে লণ্ডনস্থ বাংলাদেশের হাইকমিশনের মাধ্যমে দুদকসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দায়েরকৃত অভিযোগ প্রত্যহার করেননি। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের ৪৫ শতাংশ দেওয়ার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৫৫ লক্ষ টাকা এমপি সাহেবের কাছে দেওয়ার আগে আরো ৩০ লক্ষ টাকা তিনি প্রদান করেছেন বলেও দাবী করেন।
তিনি সংবাদ সম্মেলন আহবানকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পাব্বা অভিযোগ তুলেন যে, তারা দুদকসহ বিভিন্ন জায়গায় তারা তাকে একজন মানিলণ্ডারিকারী, মাদকব্যবসায়ী, চোরাকারবারীসহ নানা মিথ্যা নালিশ প্রদান করেছেন। দুদক তা অনুসন্ধান করছে। গাজিউর রহমান আরো অভিযোগ করেন, দেশে যাওয়ার পর শামসুল ইসলাম রাজু ও আবুল কালাম তার পাসপোর্ট আটকে দেন এবং বিভিন্ন তাকে হুমকি প্রদান করেন। তবে তিনি পাসপোর্ট উদ্ধার করে লণ্ডনে আসতে সক্ষম হন।
সংবাদ সম্মেরনে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত ফিলিং স্টেশনের মিটার টেম্পারিং এর অভিযোগটি মিথ্যা উল্লেখ্য করে গাজীউর রহমান বলেন, গত মাসের ১১ ডিসেম্বর জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ মিটার চেক করে দেখেছে এবং তারা তাতে টেম্পারিং এর কোনো প্রমাণ পায়নি।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close