যুক্তরাজ্য গণফোরামের কমিটি ঘোষণাকালে ড. রেজা কিবরিয়া: এই সরকার বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বঘৃণিত সরকার

ভোট ছাড়া নির্বাচন হয় ।। অপরাধ ছাড়া মামলা হয় ।। পেয়াজ ছাড়া রান্না হয়!!
।। সুরমা প্রতিবেদন ।।
লণ্ডন, ১০ ডিসেম্বর – বর্তমান সরকারের নানা অসহায়ত্ব ও স্বেচ্ছারিতার বর্ণনা তুলে ধরে গণফোরামের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া বলেছেন, এই সরকার জানে তারা একটি ঘৃণিত সরকার। তিনি আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বলে, হয়তো তারা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব ঘৃণিত সরকার এবং জনগণ তাদের সাথে নেই।
গত ৬ ডিসেম্বর, শুক্রবার লণ্ডনে গণফোরাম, যুক্তরাজ্য শাখার নতুন আহবায়ক কমিটির নাম ঘোষণার প্রারম্ভিক বক্তব্যে ড. রেজা কিবরিয়া এসব কথা বলেন। এছাড়াও দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
সরকারকে আরেক নির্বাচন পর্যন্ত সময় দেয়া হবে নাকি তার আগেই আন্দোলনে যাবেন? সাপ্তহিক সুরমার পক্ষ থেকে করা এমন প্রশ্নের জবাবে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, না, নট রিয়েলে, আগামী চার বছর পর নির্বাচনের অপেক্ষা করছি না। আমরা মনে করি, তার আগেই এর একটি ব্যবস্থা হবে, সুষ্ঠু একটি নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, আমার ধারণা দেশের যে অবস্থা যে কোনো সময় যে কোনকিছু ঘটে যেতে পারে। এমনকি ওদের (আওয়ামী লীগ) সাথে আলাপ করে দেখেছি তাদের মধ্যেও কনফিডেন্সটা কম। অনেকে পরিবারকে বিদেশে পাঠিয়ে রেখেছে। তিনি আরো বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হলে সেই কনফিডেন্সটা হয় না।
তিনি বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অতীতের বর্ণনা দিয়ে বলেন, এই দল এককালে একটি বড় দল ছিলো, মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতাও ছিলো, নানা অগণতান্ত্রিক কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা সেটিও হারিয়েছে। তিনি রাস্তায় দুর্ঘটনা, চালের দাম, পেয়াজের দাম ও রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বিভিন্ন সমস্যায় সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে বলেন, যে কোনো সমস্যা মোকাবেলার জন্য আত্মবিশ্বাস থাকতে হয় যে, আমাদের পেছনে জনগণ আছে। কিন্তু এই সরকারের সেটা নেই। তাদের কিছু শক্তি আছে, তাদের অনেক টাকা আছে কিন্তু জনগণ তাদের সাথে নেই, তাদের প্রতি জনগণের আস্থা নেই। তিনি আরো বলেন, গণফোরামসহ ঐক্যফ্রন্টের দলগুলোর উপর বভিন্ন ধরণের নির্যাতন হচ্ছে, তাদেরকে ভাঙ্গার জন্যে সরকারের পক্ষ থেকে জোর চেষ্টা চলছে। তবে এসবকে তিনি ন্যাচরাল বা একধরণের পলিটিক্স মন্তব্য করে বলেন, এর জন্যে আমি কোনো নালিশ দিচ্ছি না। কিন্তু নির্যাতন, মিথ্যা মামলায় হয়রানি আর পাবলিক মিটিংয়ের অনুমতি না দেয়া এসব আপত্তিকর। এজন্য দেশে মুক্ত পরিবেশ নেই বলেও মন্তব্য করেন এই বিশিষ্ট রাজনীতিক ও অর্থনীতিবিদ।

তিনি ৩০ ডিসেম্বরের বিতর্কিত নির্বাচন এবং সেটির আগের ও পরের বিভিন্ন হালহকিত তুলে ধরে বলেন, তাঁর এলাকার ভোট দিতে না পারা আওয়ামী লীগেরই লোকজন যারা তাঁর মরহুম পিতা সাবেক অর্থমন্ত্রী এ এম এস কিবরিয়ার সাথে ঘনিষ্টভাবে কাজ করেছিলেন, তারা তাঁর কাছে এসে নালিশ করেছেন, এটা কী হলো ভাতিচা, আমাদেরতো ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি। প্রশাসনের লোকেরা বলেছে যে তাদের আর ভোট দিতে হবে না। প্রশ্ন করেছেন Ñ এতো এতো উন্নয়ন এবং প্রায় প্রতিদিন প্রবৃদ্ধির জোয়ারে ভাসছে দেশ তারপরও অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে যেতে এতো ভয় কেন? তার মানে মানুষ আমাদের ভালো পায় না? আমি তাদের বলেছি, না পায় না।
তিনি নিজের দল গণফোরাম প্রসঙ্গে বলেন, গণফোরাম মনে হয় একটা ছোট দল। কিন্তু আমরা জনগণের কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্য সেটা আমার একটা আন্দাজ আছে। আমাদের বড় যে একটা ঘাটতি ছিলো সেটা পুরণ করার জন্য আমি চেষ্টা করছি। দলের মধ্যে কিছু দল আছে তারা আগের মতো চলতে চায়। আমার উদ্দেশ্য হলো ড. কামাল হোসেনের হাতটাকে শক্তিশালী করা Ñ সেই লক্ষ্যে পুরনো ও নতুনদের নিয়ে কাজ করছি। তিনি তাদের দলকে একটি ট্রু ন্যাশনালিস্ট পার্টি বলে দাবী করেন বলেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন রাজনীতিতে গুণগত মান পরিবর্তন এবং সেই লক্ষ্যে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
দেশের নানা আজগুবি প্রসঙ্গের উল্লেখ করে রেজা কিবরিয়া বলেন, দেশের পলিটিক্স থেকে এখন আমরা অনেককিছু শিখছি। যেমনÑ ভোট ছাড়া নির্বাচন হয়, অপরাধ ছাড়া মামলা হয় এবং পেয়াজ ছাড়া রান্না হয়! আমাদেরকে শোনানো হয়, গণভবনে নাকি পেয়াজ ছাড়া ২২ ধরণের রান্না করা হয়েছে। চালের দাম বেড়ে গেলে সরকারের মন্ত্রীকে বলতে শুনিÑ আলু থাকতে মানুষকে ভাত খেতে হবে কেন? বিভিন্ন দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিকে তিনি সরকারী দলের সিণ্ডিকেটের কারসাজি উল্লেখ করে বলেন, অথচ এগুলো নাকি বিরোধী দল তথা বিএনপি, জামাতের ষড়যন্ত্র, তাদের উপর সব দোষ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের যে ক্রেডিবেলিটি সেটা কমে গেছে, তাই যা-ই বলা হয় মানুষ তা শুনে হাসাহাসি করে। এমনকি মানুষ এখন সূর্য ওঠে গেছে বা চাঁদ ডুবে গেছে এগুলো শুনেও বিশ্বাস করতে চায় না।
ড. রেজা কিবরিয়া ৩৫টি দেশে কাজ করার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, একটি সরকার বিভিন্নভাবে তাদের ক্ষমতার প্রয়োগ করতে পারে, যেমন অস্ত্র দিয়ে, পুলিশ দিয়ে মিডলইস্টের সাদ্দাম হোসেন, গাদ্দাফিরা করেছে। তাদের সময় লোকেরা রাস্তায় নামতে ভয় পেতো। কিন্তু অনেক দেশের সরকা প্রধানের একটা মরাল অথোরিটি বা নৈতিক ক্ষমতা থাকে যে ক্ষমতায় সে আঙ্গুল নাড়ালে দেশের মানুষ তা বুঝে নেয় এবং যেটা করার করার তারা তা করে। এজন্য কোনো হুমকি দিতে হয় না, ভয় দেখাতে হয় না। এক্ষেত্রে তিনি সাউথ আফ্রিকার উদাহরণ তুলে ধরেন। বাংলাদেশের বড় সমস্যা হলো যে, এই সরকারের সেই মরাল অথোরিটি একেবারে জিরো।
ল-ন বাংলা প্রেসক্লাব কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি ব্যবসায়ী ও লেখক আবুল কালাম ছোটনকে আহবায়ক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট যুক্তরাজ্য গণফোরামের কমিটি ঘোষণা করেন। আহবায়ক কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন মুকাব্বির খান এমপি, আইয়ূব করম আলী, এনামুল হক, গোলাম হোসেন (আবাব), সৈয়দ আহমেদ ইকবাল, মোফাজ্জল চৌধুরী ইমরান, আলতাব, সায়েদ, আবুল কাশেম, এডভোকেট নূও উদ্দিন, মো. ফেরদৌস মিয়া, মো. সুফি মিয়া, আব্দুল আজিজ ও মো. মতি চৌধুরী।
কমিটি ঘোষণা করে ড. রেজা কিবরিয়া আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবি, বাংলাদেশের অন্যতম সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনর নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিতে সবার সহযোগিতা কামনা করে যুক্তরাজ্যে গণফোরামের শক্ত ঘাটি হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।