কুইন মেরী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পিস ফর বাংলাদেশ’ সেমিনার : নতুন প্রজন্মের রাষ্ট্র মেরামতের ডাকে সকলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন
।। বিশেষ প্রতিবেদক ।।
লণ্ডন, ১২ নভেম্বর – যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশী তরুনদের উদ্দোগে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ‘পিচ ফর বাংলাদেশ’-এর উদ্দোগে কুইন মেরী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত সোমবার অনুষ্ঠিত হল প্রসপেকটিভ বাংলাদেশ বা প্রত্যাশার বাংলাদেশ বিষয়ক প্যানেল ডিসকাশন ধর্মী একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সেমিনার।
সংগঠনটির চেয়ারম্যান মোঃ ডলার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সেমিনারটি পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্য ভিত্তিক জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক, মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক আমিনুল আহসান তানিম। অনুষ্ঠানের কার্যক্রমের শুরুতেই পবিত্র কোরান থেকে তেলাওয়াত করেন জনাব মো: বশির আহমেদ।
প্রধান অতিথি হিসেবে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও নিউহ্যাম কাউন্সিলের ডেপুটি স্পিকার ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বর্তমান বাংলাদেশে গনতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানুষের নৈতিক-চারিত্রিক অবক্ষয়ের কারনে দূরবস্থা বিরাজ করছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি প্রবাসী বাংলাদেশীসহ সকলকে ব্যাপক ভিত্তিক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান। সেমিনারে বক্তারা বলেন, নতুন প্রজন্মের রাষ্ট্র মেরামতের ডাকে সকলের অংশগ্রহন এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা দৈনিক আমার দেশের সাবেক প্রখ্যাত সাংবাদিক ও বর্তমান সরকার কর্তৃক নির্মম নির্যাতনের শিকার ওয়ালী উল্লাহ নোমান বলেন, যখনই সাংবাদিক সমাজ ভাল কিছুর পক্ষে তাদের কলম ধরতে চেষ্টা করছে তখনই ক্ষমতাশীনরা তাদেরকে বাঁধা দিয়ে তাদের উদ্দোগকে বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের উপরে নির্মম নির্যাতন চালান হয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে তাদেরকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। মো: ডলার বিশ্বাসের একটি সর্ম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সরকার কর্তৃক আইন বিভাগকে নিয়ন্ত্রন করার অকাট্য দলিল স্কাইপ কেলেঙ্কারী উদঘাটন ও সেই সম্পর্কে লেখালেখির অপরাধে আমাকে রিমান্ডে নিয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয় এবং তারপর জেলখানায় প্রেরন করা হয়। পরবর্তীতে জেল থেকে জামিনে বের হবার পর সরকারী বাহিনী কর্তৃক গুম ও প্রান নাশের হুমকি থাকায় দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় গ্রহন করতে বাধ্য হতে হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি দফতরের সাবেক প্রেস সেক্রেটারী ও ব্রিটেনের স্বনামধন্য সাংবাদিক সামশুল আলম লিটন বলেন, অনেক হতাশার মাঝেও গত তিন বছর যাবত আমরা লক্ষ্য করে দেখছি যে, বর্তমান নতুন প্রজন্ম নতুন ভাবে দেশের আভ্যন্তরিন সংস্কারের মাধ্যমে একটি উন্নত রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ তৈরীর নিরলস চেষ্টার মাধ্যদিয়ে দেশ ও জাতিকে একটি প্রত্যাশীত সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দিতে তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে তাদেরকে তার জন্য কঠিন মূল্যও পরিশোধ করতে হচ্ছে। বর্তমান সরকারী দলের মদদে পুলিশ ও তাদের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়ে, গুম হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে, দেশান্তরী হতে বাধ্য হওয়ার মাধমে ও খুন হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের রাষ্ট্র মেরামতের ডাকে সকলের অংশগ্রহন এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
প্যানেল বক্তা ওয়েস্ট মিনিস্টার বিশ্ববিদ্যালয় ইউকের ছাত্র আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, সরকারী দলের প্রত্যক্ষ অংশ গ্রহনে এবং পুলিশের সহযোগিতায় সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, বাংলাদেশ প্রোকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবরার হত্যাকাণ্ড ও প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে জোরপূর্বক পদ ছাড়তে ও দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করনের মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও আইন ব্যাবস্থাকে চূড়ান্ত ভাবে ধ্বংশ করে একটি একক দলের ফ্যাসীবাদী সরকার ব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠা করে হয়েছে। যার দায় সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা এড়াতে পারে না।
দেশী-বিদেশী গনমাধ্যমের সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে প্যানেল বক্তা ও পিচ ফর বাংলাদেশের জয়েন্ট সেক্রেটারী মো: মাহিন খান তার বক্তৃতায় অন্যান্য অতিথিদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, বর্তমান সরকার জনগনের ভোটে নির্বাচক নয়, সুতরাং ভবিষ্যতে দেশে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরী হবার আশঙ্কা রয়েছে। সেই সাথে ভবিষ্যতে বর্তমান অনির্বাচিত সরকারকে বিচারের সম্মূখিন করে তাদের করা সকল অন্যায় ও অবিচারের ন্যায় সঙ্গত বিচারের মাধমে দেশে একটি সুষ্ঠ পরিবেশ তৈরী হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। পিচ ফর বাংলাদেশের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে দেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গনতন্ত্রিক পরিবেশকে ফিরিয়ে আনতে প্রচষ্টা অব্যাহত রাখতে উদাত্ত আহবান জানান।
আরেক প্যানেল বক্তা সাবেক ছাত্র নেতা মো: তরিকুল ইসলাম বলেন, একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গনতন্ত্র, মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ফিরিয়ে এনে দেশ ও জনগনের আকাঙ্খিত সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেয়া সম্ভব।
সংগঠনের চেয়ারম্যান মোঃ ডলার বিশ্বাস সভাপতির বক্তব্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, ব্যাঙ্ক লুট, শেয়ার বাজার ধ্বংস, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি, সরকার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ছত্রছায়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টর্চার সেল সংস্কৃতি, ধর্ষণের ও দাগি খুনি আসামীদেরকে রাষ্ট্রীয় ভাবে ক্ষমা করার প্রবণতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক বাঁধা প্রদান নাগরিক অধিকারের অন্তরায় বলে উল্লেখ করেন। পিচ ফর বাংলাদেশ তার গঠন মূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে সকলের প্রত্যাশীত সমৃদ্ধশালী ও উন্নত গণতান্ত্রিক দেশ ও জাতি গঠনে ভূমিকা পালন করে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। পরিশেষে তিনি উপস্থিত দেশি-বিদেশী সাংবাদিক ও অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল অতিথিদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
অন্যান্যের মধ্যে প্যানেল বক্তাদেরকে তাদের বক্তব্যের আলোকে প্রশ্ন করেন ও বক্তব্য রাখেন, সৈয়দ জামাল আহমেদ, মো: তুহিন মোল্লা, সাইফুর রহমান পারভেজ, মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম ভূঁইয়া, মো: বশির আহমেদ, মো: আনিসুজ্জামান, মাহবুবুর রহমান মো:শোয়াইবুর রাহমান প্রমূখ।
সেমিনারে সাংবাদিক শামসুল আলম লিটন’র পুরো বক্তব্য শুনতে ক্লিক করুন:https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2423146614612359&id=1969209393339419&sfnsn=mo