নিউজ

এক্সেলসিয়র সিলেট: বিড়ম্বনার শিকার বিনিয়োগকারীদের সংবাদ সম্মেলন, প্রতারিত হওয়ার পাশাপাশি মিথ্যা মামলায় হয়রানির অভিযোগ

সুরমা প্রতিবেদন
লণ্ডন, ১8 সেপ্টেম্বর – এক্সেলসিয়র সিলেট লিমিটেড কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে নানা বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন ব্রিটিশ-বাংলাদেশী বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়ার পরিবর্তে তাদেরকে প্রতারিত হওয়ার পাপাশি মিথ্যা মামলাসহ নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিনিয়োগকারীদের একাংশ। তবে এক্সেলসিয়রের বর্তমান ম্যানেজমেন্ট কমিটির পক্ষ থেকে প্রদত্ত ইমেইল বার্তায় সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত অভিযোগসমূহকে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রসূত বলে দাবী করা হয়েছে। এক্সেলসিয়রের প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী ও অভিযুক্ত ব্যক্তি সাইদ চৌধুরীর বক্তব্য জানতে চেয়ে সুরমার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি পুরো বিষয়টি বাংলাদেশে ও বৃটেনের আদালতে বিচারাধীন থাকায় তিনি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজী হননি।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার লণ্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে এক্সেলসিয়র সিলেট লিমিটেডের নিয়ন্ত্রণকারী সাইদ চৌধুরী (সাবেক এমডি) এবং শাহ জামাল নুরুল হুদা (সাবেক চেয়ারম্যান) সহ তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এবং পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা। এক্সেলসিয়র সিলেট লিমিটেড সিলেটের স্বনামধন্য জাকারিয়া সিটির মালিক। সাইদ চৌধুরী ও শাহ জামাল বিনিয়োগকারী অর্থ ফেরত দেয়ার চাপ এড়ানোর কৌশল হিসেবে দায়িত্ব থেকে সরে দাড়ালেও প্রকৃতপক্ষে তারাই কোম্পানি পরিচালনা করছেন।

লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা বলেন, ২০১৪ সাল থেকে নানা চেষ্টা ও সমঝোতার মাধ্যমে তারা নিজেদের অর্থ ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কমিউনিটির গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্ততায় কয়েকদফা লিখিত অঙ্গীকার করার পরও সাইদ চৌধুরী তাদের অর্থ ফেরত দেননি। বাধ্য হয়ে ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল লণ্ডনের হাইকোর্টে সাইদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে মামলা করেন বিনিয়োগকারী আব্দুল বারী।

এই মামলার পরপরই সাইদ চৌধুরীর সহযোগী শাহ জামাল নুরুল হুদা বিনিয়োগকারী সিরাজ হক, আব্দুল বারী, কয়সর খান, আনিস রহমান ও মাসুক রহমানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। ২০১৮ সালের ২১ জুন সিলেট জালালাবাদ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর ৯০১) করে এসব প্রবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে বলা হয় যে, তাঁরা লোক পাঠিয়ে শাহ জামালের বাড়িতে হামলা করিয়েছেন এবং ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। এর চারদিন পর ২৫ জুন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুানালে  ৫৭(২) ধারায় ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধে আরও একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন শাহ জামাল। এ মামলায়ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হয় যে, এসব প্রবাসী অনলাইনে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শাহ জামালের নামে মিথ্যা ও করুচিপূর্ণ অপপ্রচার চালিয়েছেন। দুটি মামলাতেই সাক্ষী হিসেবে আছেন সাইদ চৌধুরী ও তাঁর সহযোগী এক্সেলসিয়র সিলেটের বর্তমান এমডি আহমদ আলী। তাঁরা বলেন, মামলাকারী শাহ জামাল নুরুল হুদা এবং তাঁর স্ত্রী ভিসাপ্রড এবং হিউম্যান ট্রাফিকিংয়ের অপরাধে ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যের আদালতে দণ্ডিত হন। এই দণ্ডিত আসামী তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। 

ভুক্তভোগীরা বলেন, অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য তাঁরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। প্রতারিত হওয়ার তথ্য প্রকাশ করেছেন। কিন্তু মিথ্যা কিছু কখনো প্রচার করেননি। যদি তাদের কোনো প্রচার- প্রকাশের কারণে বাদী শাহ জামাল সংক্ষুব্ধ হয়ে থাকেন, তবে সেটি বাংলাদেশের আইনে বিবেচনাধীন হওয়ার কথা নয়। কেননা মামলার বাদী-বিবাদী এবং প্রচার-প্রকাশনা সবকিছুই যুক্তরাজ্যে হয়েছে। অন্যায় ও অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে হয়রানির উদ্দেশে এসব মিথ্যা মামলা করা হয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা। তাই স্বাভাবিক কারণে এসব মামলার ন্যায়বিচার নিয়েও তাঁরা সন্দিহান।   মামলার হয়রানির ভয়ে বিনিয়োগকারীরা যাতে অর্থের দাবি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন এবং অন্যান্য সাধারণ বিনিয়োগকারীও যাতে অর্থের হিসাব চাইতে সাহস না পায় সেজন্য এসব মামলা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তাঁরা।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জন্মভূমি বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়বে, নিজেদের এলাকা সিলেটের উন্নয়ন হবে, প্রজেক্টটি সফল হবে- এমন প্রত্যাশা নিয়েই তাঁরা সাইদ চৌধুরী ও শাহ জামালের কথায় বিশ্বাস করে বিনিয়োগ করেছিলেন। তাদের পাঁচজনের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি টাকা বলে জানান। 

এসব বিনিয়োগকারী বলেন, তাঁরা প্রত্যেকে যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং কমিউনিটিতে ভালভাবেই পরিচিত। বাংলাদেশে অন্যান্য ব্যবসায়ও তাদের বিনিয়োগ এবং সহযোগিতা রয়েছে বলে জানান। তাঁরা বলেন, সাইদ চৌধুরী ও এক্সেলসিয়র সিলেট লিমিটেডের এ প্রতারণামূলক কাণ্ড বাংলাদেশের বিনিয়োগের পরিস্থিতি নিয়ে প্রবাসীদের মনে আস্থার সংকট তৈরি করবে। বাংলাদেশে প্রবাসী বিনিয়োগের ধারা অব্যাহত রাখতে এই প্রতারণা কাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হওয়া উচিত। তাই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে সাইদ চৌধুরী, শাহ জামাল, এক্সেলসিয়র সিলেট ও জাকারিয়া সিটির বর্তমান এমডি আহমদ আলীর বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোরালো আহবান জানান তাঁরা।

কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষন করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাইদ চৌধুরী এবং শাহ জামাল আবারও যুক্তরাজ্যে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তারা যেন আর কারো কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে না পারেন সে বিষয়ে সকলকে সজাগ থাকার আহবান জানানো হয়। ভুক্তভোগীরা বলেন, সাইদ চৌধুরী সুযোগ পেলেই গণ্যমান্য লোকজনের সঙ্গে ছবি তুলে ফেলেন। পরবর্তীতে সেই ছবি ব্যবহার করে নিজেকে বিক্রি করেন। তাই কমিউনিটির দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের উচিত- সাইদ চৌধুরী গংদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া থেকে বিরত থাকা। সামাজিকভাবে বয়কট করা। অন্যথায় এই চক্র সাধারণ মানুষকে আবারও ফাঁদে ফেলতে পারে।

সাইদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টে দায়ের করা মামলার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই মামলা চলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সাইদ চৌধুরী একটি আবেদন করেছিলেন। আদালত তার সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। একইসঙ্গে ওই আবেদন মোকাবেলায় আব্দুল বারীর খরচ হওয়া সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করতে সাইদ চৌধুরীর প্রতি আদেশ জারি করে আদালত। কিন্তু কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা সাইদ চৌধুরী নিজেকে বেশ অসহায় ও দরিদ্র দাবি করেন এবং ওই খরচ পরিশোধে অপারগতা জানান।  মাসে মাত্র ১৪০ পাউন্ড দেয়ার অনুমতি চেয়ে আবারও আদালতে আবেদন করেন। সাইদ চৌধুরী দাবি করেন, স্ত্রীর সঙ্গে যৌথ মালিকানায় তার যে ঘর রয়েছে, সেটি তাঁর স্ত্রীর। ঘরে তাঁর অংশ মাত্র ১ শতাংশ। আদালত তার ১৪০ পাউন্ড করে দেয়ার আবেদনও গ্রহণ করেনি। দুটি আবেদনে হেরে আব্দুল বারীর মামলার খরচ বাবদ সাইদ চৌধুরীর মোট দেনা গিয়ে দাড়ায় প্রায় ১৪ হাজার পাউন্ড। ফলে আইনীভাবে সাইদ চৌধুরীর ওই ঘরের ওপর চার্জ এনেছেন আব্দুল বারী।  মূল মামলাটি এখনও শুনানীর অপেক্ষায়। 

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সাইদ চৌধুরী বিনিয়োগের নামে প্রবাসীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ কিভাবে আত্মসাৎ করেছেন, তা ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেছিলেন এসব বিনিয়োগকারী। একই বছরের ২৫ জুন লন্ডনে এক্সেলসিয়র সিলেটের বোর্ড অব ডাইরেক্টরদের এক সভায় সাইদ চৌধুরী ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে নানা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠে। ওই সভায় ডাইরেক্টরা কোম্পানির মুলধনের ৯ কোটি টাকার হদিস মিলছে না বলে অভিযোগ করেন। সভায় স্বতন্ত্র অডিটের মাধ্যমে প্রকৃত হিসাব উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হতে দেননি সাইদ চৌধুরী ও শাহ জামাল।
সংবাদ সম্মেলনে কোম্পানির ডাইরেক্টর আনিস রহমান ও মাসুক রহমান জানান, ২০১৪ সালে কোম্পানির কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই তারা আয়-ব্যায়ের কোনো হিসাব পাননি। গত ৬ বছরে অন্তত ১৯ কোটি টাকা টার্নওভার হয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা। কিন্তু কোনো লাভের মুখ দেখেননি তাঁরা। 

সংবাদ সম্মেলনে মামলা নথি উপস্থাপন করে বলা হয় যে, আরও অন্তত পাঁচজন বিনিযোগকারী চেক ডিসঅনারের অভিযোগে সাইদ চৌধুরীকে বাংলাদেশের আদালতে তুলেছেন। এর মধ্যে একটি মামলায় সাজা এড়াতে সাইদ চৌধুরী ব্যরিস্টার মোস্তাকিম চৌধুরীকে ৪০ লাখ টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগকারী অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিরাজ হক ও কয়সর খান।

এক্সেলসিয়র সিলেট লি. এর এমডির বক্তব্য:
এক্সেলসিয়র সিলেট লিমিটেডের এমডি আহমদ আলী ইমেইল বার্তায় প্রেরিত বিবৃতিতে সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ প্রত্যাখান করে বলেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর তারিখে লন্ডন প্রেস ক্লাবে আব্দুল বারি গং কর্তৃক এক্সেলসিয়র সিলেটের বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্ধেশ্য প্রনোদিত বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানচ্ছি।এক্সেলসিয়র সিলেটে বিনিয়োগের আগে ১৪ মার্চ ২০১৪ ইংরেজি তারিখে আব্দুল বারি তার অফিসে আমাদের (সাঈদ চৌধুরী ও আহমদ আলী) দাওয়াত দিয়ে নিয়ে বিস্তারিত অবহিত হয়েছেন। সেদিন কোম্পানীর শুরু থেকে ফেব্রুয়ারী ২০১৪ পর্যন্ত সকল হিসাব-নিকাশ তাকে দেখানো হয়। জাকারিয়া সিটি ক্রয়ের প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করে ডা. জাকারিয়ার সাথে এক্সেলসিয়র সিলেটের ক্রয় চুক্তি পড়ে শুনানো হয়্।ডা. জাকারিয়ার বাকি টাকা ও সাউথ ইস্ট ব্যাংকের কিস্তি মাসিক ১৮ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রদানের বিষয়টি বিনিয়োগ সংগ্রহের মাধ্যমে দিতে হবে এবং ব্যাংক ঋণ নিয়ে বর্তমান ৫০টি কক্ষ সংস্কার ও নতুন ১০০টি কক্ষ তৈরীর মাধ্যমে পরিপূর্ণ হোটেল ও রিসোর্ট ঢেলে সাজাতে হবে বলে তাকে জানানো হয়। আব্দুল বারি তখন আমাদের বললেন, এটা তার জানা আছে। তার একজন আত্বীয় এক্সেলসিয়র তথা জাকারিয়া সিটি পরিদর্শন করেছেন।

আব্দুল বারি বিনিয়োগের নিমিত্বে প্রদত্ব চুক্তিপত্র সহ বিনিয়োগকারীদের তারিকা, প্রকল্পের শুরু থেকে আগের মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত আয়-ব্যয়, ডা. জাকারিয়ার ব্যাংক ঋণের ডকুমেন্ট, ব্যাংকের অডি ও টার্ম লোন সহ সাধারণ হিসাবের স্টেইটম্যান্ট, কোম্পানির মেমোরেন্ডাম, ইনকর্পোরেট সার্টিফিকেট, ডাইরেক্টরস রেসপন্সিবিলিটি ইত্যাদির ফটো কপি রাখেন। এরপর ২০ মার্চ ২০১৪ তারিখে বিস্থারিত লাইন বাই লাইন ব্যাখ্যা অবহিত হয়ে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন। এই দিন প্রকল্প দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানালে তিনি বাংলাদেশে আসেন।  ২ মে ২০১৪ তারিখে এক্সেলসিয়রের অফিসে এসে লন্ডনে তাকে দেয়া সকল ডকুমেন্ট মিলিয়েছেন। তিনি এক্সেলসিয়র সিলেটের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম ও অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন। পরের দিন ৩ মে ২০১৪ তারিখে বোর্ড সভায় অংশ নিয়ে উপস্থাপিত আয়-ব্যয় সহ সামগ্রীক বিষয়ে আরো বিস্থারিত অবহিত হন। সভার শুরুতে পূর্ববর্তী সভার সিদ্ধান্ত পঠিত ও ঐকমতে গৃহিত হয়। সভায় এক্সেলসিয়রের শুরু থেকে সেদিন পর্যন্ত সকল কার্যক্রম তুলে ধরা হয় এবং সকলের ঐক্যমতে ভবিষ্যত পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়। যা সভার কার্যবিবরণীতে লিপিবদ্ধ আছে এবং যথানিয়মে পরবর্তী সভায় পঠিত ও সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়েছে।

সব কিছু দেখে শুনে খুশি হয়ে বোর্ড সভার পরের দিন বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তৎকালীন ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সাঈদ চৌধুরী ও অমাকে (মার্কেটিং ডাইরেক্টর আহমদ আলী) শহরের চাইনিজ হুটেলে দাওয়াত খাইয়েছেন। এছাড়া পরের দিন মামারবাড়ি ও শশুর বাড়ির লোকজন নিয়ে এক্সেলসিয়রে কয়সর খানের জন্মদিনও পালন করে ছিলেন। লন্ডন ফিরে ২৮ মে  ২০১৪  তারিখে প্রেসকন্ফারেন্সে এসব তুলে ধরে প্রকল্প ও কতৃপক্ষের প্রশংসা করে বক্তব্য রেখেছেন। এখানে আরো উল্লেখ্য যে, আব্দুল বারি ২৫ মার্চ তারিখ থেকে ১৬ জুন ২০১৪ তারিখ পর্যন্ত সময়ে ১১ দফায় ৫৩ লাখ টাকা এক্সেলসিয়র সিলেটের একাউন্টে প্রদান করেছেন। বাংলাদেশে বোর্ড সভা হয়েছে ৩ মে ২০১৪ তারিখে। প্রেরিত অর্থের মধ্যে দুই দফায় ১০ লাখ টাকা বোর্ড সভার পরে প্রদান করেছেন। যার ব্যাংক স্টেইটমেন্ট সহ অন্যান্য ডকুমেন্টে সংরক্ষিত আছে। অথচ এখন বলছেন, বোর্ড সভায় এসেই নাকি হতাশ হয়েছেন এবং তার টাকা ফেরত চেয়েছেন। সেদিন প্রেস কন্ফারেন্সে বিলেতের উল্লেখযোগ্য সাংবাদিক ও বিশিষ্ট জন উপস্থিত ছিলেন। তারা নিশ্চয়ই এটা তুলে যাবার কথা নয়। টেলিভিশন সাংবাদিকেরা সেদিনের ক্যাসেট রিপ্লে করলেই সকল সত্য বেরিয়ে আসবে।

আসল কথা হল, অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত সতের একর জায়গা জুড়ে হাজার হাজার বৃক্ষরাজি শোভিত জাকারিয়া সিটি দেখে ভিন্নপথে মালিক হবার মতলত শুরু করেন তারা। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এক্সেলসিয়রকে বেকায়দায় ফেলার জন্য আব্দুল বারি ও কয়সর খান বিনিয়োগের টাকা ফেরত চান। এদিকে আবার বিনিয়োগকারিদের স্বার্থরক্ষার নামে ফেইসবুকে “এক্সেলসিয়র ইনভেস্টারস ফোরাম” গড়ার আহবান জানাতে থাকেন। এছাড়া কয়সর খান তার ফেইসবুকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ না করার জন্য জনগনের প্রতি আহবান জানান। আব্দুল বারি, আনিস ও মাসুক তা শেয়ার করে প্রচার করেন। তারা  অব্যাহত ভাবে বাংলাদেশে প্রবাসী বিনিয়োগের বিরুদ্ধে বিদ্ধেষ ছড়াতে থাকেন। এবিষয়ে সামাজিক আলোচনায় বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের ডাইরেক্টর জেনারেল সহ কমিউনিটি নেতাদের মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতা সভা হয়। সভার মুখ্য বিষয় ছিল, তাদের অপ-প্রচার অব্যাহত থাকলে নতুন বিনিয়োগ আসবেনা এবং তাদের টাকা ফেরত দেয়া বা প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হবেনা। এতে সকল বিনিয়োগকারি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আব্দুল বারি ও কয়সর খান আর কোন প্রকার অপতৎপরতা না চালানোর প্রতিশ্রতি দিলে একটি লিখিত সমঝোতা স্বাক্ষর হয়। তাতে এক্সেলসিয়র সিলেট কর্তৃক তাদের টাকা যথাক্রমে পাঁচ ও সাত মাসের মধ্যে ফেরত প্রদান এবং এই টাকা সংগ্রহ সহ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ প্রাপ্তিতে কোন প্রকার অপপ্রচার না করার জন্য তাদের প্রতি শর্ত প্রদান করা হয়।

সামাজিক সমঝোতায় তারা লিখিতভাবে কথা দিয়েছিলেন এক্সেলসিয়র সিলেটের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা থেকে বিরত থাকবেন। কিন্তু তারা তা লংঘন করেছেন এবং অনাকাঙ্খিতভাবে এক্সেলসিয়র কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে চলেছেন। এতে বিনিয়োগকারী, সার্ভিস গ্রহণকারিসহ সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন। নিজেদের দ্বায়িত্ববোধ এবং ব্যবসায়িক ক্ষতি ও ভাবমূর্তির কথা বিবেচনায় রেখে এক্সেলসিয়রের পক্ষ থেকে ব্যাংকঋণ নিয়ে তাদের টাকা ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যা তাদেরকে অবহিত করা হয়। ব্যাংকের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবার পর যখন টাকা রিলিজ হবে ঠিক তখন (২৩ মার্চ ২০১৫ তারিখে) তারা সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডির কাছে টাকা রিলিজ না কারার জন্য ইমেইল করেন এবং টেলিফোনেও কথা বলেন। ফলে ব্যাংক আর এগুয়নি। এভাবেই সামাজিক সমঝোতার আলোকে এক্সেলসিয়রের প্রানান্ত প্রয়াস বিফল হয়ে যা। এরপর আরো বিভিন্নজনের মাধ্যমে সমঝোতার চেষ্টা হয়, সেখানে তাদের এগুয়েমি ও অপতৎপরতার কারনে। এরপর সিরাজ হকের সমন্বয়ে আরেকটি সমঝোতার চেষ্টা হয়। অতঃপর সিরাজ হক নিজে বিনিয়োগকারী হিসেবে এক্সেলসিয়র সিলেটের সাথে যুক্ত হন। তারপরও অবস্থা বেগতিক দেখে আব্দুল বারি গং সিরাজ হককে নিয়ে নতুন জোট গঠন করেছেন। তারা প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়েছেন যে, এক্সেলসিয়র সিলেটকে  ব্যাংক ক্রাফট করতে আমাদের বাধ্য করবেন এবং তারা ব্যাংক থেকে নামমাত্র মূল্যে এটি নিয়ে নেবেন। এ লক্ষ্যে নিজেরা প্রেস কন্ফারেন্স করে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে প্রবাসীদের বার বার বিভ্রান্ত করছেন।অন্যান্য বিনিয়োগকারীকে তাদের দলে যোগ দেয়ার জন্যও প্রেস কন্ফারেন্সে তারা আহবান জানিয়েছেন।
প্রতিবেদনে মিথ্যাচারের সকল মাত্রা অতিক্রম করে বলা হয়েছে, জাকারিয়া সিটির সতের একর জায়গা অন্যের নামে দেয়া হয়েছে। অথচ এই জায়গা এক্সেলসিয়র সিলেটের নামে রেজিট্রি ও নামজারি হয়েছে। এমনকি জেলা প্রশাসন থেকে জায়গা ক্রয়ের পূর্ব অনুমতিও নেয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারিদের প্রসঙ্গেও অনেক মিথ্যাচার করা হয়েছে। এক্সেলসিয়র সিলেটে বিনিয়োগের আগে সকল বিনিয়োগকারির সাথে লিখিত চুক্তি হয়েছে। প্রদত্ব চুক্তিপত্র লাইন বাই লাইন ব্যাখ্যা অবহিত হয়ে তারা স্বাক্ষর করেছেন। এরপর বাংলাদেশের প্রথম ইকোপার্ক বেইজ্ড হোটেল এন্ড রিসোর্ট জাকারিয়া সিটি ক্রয় করা হয়। প্রকল্প দেখার জন্য বিনিয়োগকারী/পরিচালকগণ বাংলাদেশে আসেন। দেশে এসে এক্সেলসিয়র সিলেটের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন। বোর্ড সভায় অংশ নিয়ে উপস্থাপিত আয়-ব্যয় সহ সামগ্রীক বিষয়ে আরো বিস্থারিত অবহিত হন। সভায় জাকারিয়া সিটি ক্রয় চুক্তি সহ এক্সেলসিয়রের শুরু থেকে সকল কার্যক্রম তুলে ধরা হয় এবং সকলের ঐক্যমতে ভবিষ্যত পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়। যা সভার কার্যবিবরণীতে লিপিবদ্ধ আছে এবং যথানিয়মে পরবর্তী সভায় পঠিত ও সর্ব সম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। এভাবে পরিচালনা পরিষদের মাধ্যমে এটি পরিচালিত হয়ে আসছে।
আসলে এরা এক্সেলসিয়রের অগ্রগতি রুখতে বিভ্রান্তিকর ও বিদ্বেষ প্রসুত প্রপাগান্ডা শুরু করেন। এক্সেলসিয়রকে ধ্বংস করা এবং বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে নবদিগন্তের উন্মোচনকারি উদ্যোক্তাদের অপমানিত করাই তাদের মূল উদ্ধেশ্য। ফেসবুকে ও সংবাদ মাধ্যমে এক্সেলসিয়র সিলেটের বিরুদ্ধে জঘন্য মিথ্যাচার এবং কোম্পানী ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন সহ মানহানির জন্য ২০ আগস্ট ২০১৮ তারিখে বিজ্ঞ সাইবার ট্রাইবুনাল (বাংলদেশ) ঢাকা’য় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ (সংশোধনী ২০১৩) এর ৫৭ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলার আসামী আব্দুল বারী বাংলাদেশী কোম্পানীর মামলা দেশে মোকাবেলা না করে বিলেতের আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেনে।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close