নিউজ

নিউ ইয়র্কে নানা অনিয়মে ৩৩তম ফোবানা অনুষ্ঠিত

।। নিউ ইয়র্ক থেকে জুয়েল সাদত ।।
যুক্তরাজ‍্য, ৪ সেপ্টেম্বর – ৩৩ম ফোবানা সম্মেলন নানা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খল ঘটনার মধ্যদিয়ে অতিতের ৩২টি ফোবানাকেই প্রশ্নবিদ্ব করেছে । গত ৩০, ৩১ আগস্ট ও ১ লা সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের নাসাউ ক্যালাসিয়ামের ফোাবানা মুলত স্পন্সর ও ব্যাবসায়িক কনভেনশনে রুপ লাভ করেছিল । ফোবানার প্রথম থেকে আয়োজক ড্রামা সার্কেল মিডিয়াকে অবহেলা করার কারনেই মুলত ফোবানার ভরাডুবি । মুল অনুষ্টানের সংবাদ সম্মেলনে নিউ ইয়র্কের  দুটি প্রেস ক্লাব তথা প্রিন্ট ও  ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কোন আগ্রহ ছিল না । ড্রামা সার্কেল নাসাউ ক্যালাসিয়ামে ফোবানা করার ঘোষনা দিয়ে, প্রতি দিন দশ হাজার প্রবাসী উপস্থিত হবার যে প্রত্যাশা করেছিল সেখানে প্রথম দিন  ১০০০ খানেক দর্শক , দ্বিতীয় দিন ১৫০০ ও শেষ দিন ২৫০০ দর্শক  উপস্থিত ছিলেন । ফোবানার মেম্বার সেক্রেটারী আবির আলমগীর ৩০ আগষ্টের সব টিকেট সেল হয়ে গেছে বলে সোস্যাল মিডিয়ায় ঘোষনা দিলে প্রথম দিন মাত্র হাজার খানেক দর্শকের উপস্থিতি প্রমান করে এই ফোবনা একজন মানুষের কারনে প্রশ্ন বিদ্ব । প্রথম দিনের ডিনারেও উপস্থিত হবার জন্য ১০০ ডলারের টিকেট বিক্রি করা হয়েছিল, অথচ সেখানে বসার ও খাবারের মান ছিল নিম্ন মানের । মুলত ৩০০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হলেও ম্যাগাজিনের সম্পাদক ছাড়া কেউ কোন দায়িত্বই পান নি । এলামনাই এসোসিয়েশনের আহবায়ক কবির কিরন তিনি প্রফেসর ও শিক্ষাবিদদের নিয়ে লবিতে বসে ছিলেন , কারন আবির আলমগীর কখন  রুম  চেঞ্জ করে ফেলেছিলেন সকাল বেলা তিনি জানতেন না । ৩৩ তম ফোবানা নিয়ে নিউি ইয়র্কের মিডিয়া পাড়া সহ সাংস্কৃতিক  কর্মিদের কোন উচছাস ছিল না প্রথম থেকেই, কারন যোগ্য নেতৃত্বের ও সমন্বয়হীনতার কারনে । যে সকল সংগঠন ফোবনায় পারফর্ম করার জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন তারাও নানান ক্ষোভ প্রকাশ করেন । ফোবানা মুলত স্থানীয় শিল্পী ও সংগঠন গুলোকেই পেট্রন করে থাকে সেখানে এবার দেশ বিদেশের ভিআইপি শিল্পীদের আনা হয় হাজার ডলার খরচ করে তাও তাদের পারফর্ম করার কোন সুযোগই দেয়া হয়নি । হতাশায় দর্শক যেমন ঠিক তেমনি স্থানীয় শিল্পীরা ও জাতীয় শিল্পীরা । ৩৩তম ফোবানা সম্মেলন-২০১৯ উপলক্ষে বিশ্বের সেরা ভেন্যুগুলির মধ্যে অন্যতম “নিউইয়র্কের নাসাউ কলিসিয়াম” যেন ছিল দায়সারা গোছের এক খন্ড বাংলাদেশ। ইতিহাস সৃষ্টি করে এই প্রথম আমেরিকা তথা বিশ্বের সেরা এবং অত্যান্ত ব্যয়বহুল কোনো ভেন্যুতে গত ৩১ শে আগষ্ট এবং ১লা সেপ্টেম্বর দুদিনের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল মাত্র হাজার খানেক  বাংলাদেশী। এই বিশাল আয়োজনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং সাম্প্রদায়িকতাসহ পুরো বাংলাদেশকেই বিভিন্নভাবে সফলভাবে তুলে ধরা হয়। আমেরিকার বিভিন্ন স্টেট থেকে বাংলাদেশী বিভিন্ন সংগঠন এবারের ফোবানায় অংশগ্রহন করেন নাম মাত্র । এখানে ছিল বাংলাদেশী খাবার এবং পন্যের  ৫০ স্টল। ৮ টি বিষয় ভিত্তিক সেমিনারে অনেক জ্ঞানীগুনীর বক্তব্য দর্শক নজর কাড়ে। আরও ছিল মুক্তিযাদ্ধা সমাবেশ, কাব্য জলসা এবং কবি সমাবেশ। বাংলাদেশের কিংবদন্তী শিল্পী আব্দুল হাদী, তার সুযোগ্য কন্যা তনিমা হাদী, শুভ্রদেব এবং মাইলস সহ অনেকে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।  বিশিষ্ট  নজরুল গবেষক কবির কবির কিরনের নেতৃত্বে “শতদল” এর মনজ্ঞ কবিতা আবৃতি এবং দেশাত্বোবোধক সঙ্গীত দর্শকদের মনজয় করে। কবির কিরন  এলামনাই ব এসোসিয়েশন গুলোর সেমিনার সমন্বয় করেন ।  ম্যগাজিন টা নিয়েও অনেক ক্ষোভ সেখানে কমিটি গুলোর নাম ও ছবির  প্রতিফলিত হয়নি । সেখানেও ব্যবসা প্রচারের  ইয়েলো গাইড হিসাবে প্রচার পায় ।৩৩ তম ফোবানায়  মুলত মেম্বার সেক্রেটারী  আবির আলমগীর মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের পেট্রন করার চেষ্টা করেছেন টাকার জন্য । আহবায়ক নাগিস আহমেদ ও ছিলেন সব কিছুর মুলে । তারা ফোবানাকে সফল করার জন্য অতীতের অন্যন্য হোষ্ট কমিটি যা করে থাকে তার বিপরীতে তারা নাসাউ ক্যালাসিয়ামের ৩০০ হাজার ডলারের ভেন্যুর টাকা তুলার ধান্ধায় ছিলেন ব্যাস্থ । নার্গিস আহমেদ ও আবির আলমগীর দীর্ঘ এক বছরে ফোবানার ওয়েব সাইট ও তৈরী করতে পারেন নি ।  নিউ ইয়র্ক এর একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন , সরকারের কেউ উপস্থিত না হওয়াটাই  জরুরী ছিল । এত ফ্লপ অনুষ্টানে কেউ উপস্থিত থাকলে তার রেশ ভাল হত না। আগামীতে সরকারের কেউ উপস্থিত থাকতে হলে ভেবে দেখবেন । নতুন প্রজন্মের  এক ঝাক তরুন তরুনী কয়েক মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করলেও তাদের কোন পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় নি । অনেকটা অনাড়ী মানুষের হাতে পড়ে ৩৩ তম ফোবানাটাই প্রশ্নবিদ্ব । একটি ফোবনা করতে হলে স্থানীয় ও নানান শহরের প্রতিনিধিত্বশীল মানুষের মুল্যায়ন করতে হয় , তাদের পরামর্শ নিতে হয় । যা এবার নার্গিস আহমেদ ও আবীর আলমগীর ব্যার্থ হয়েছেন । তাদেরে দুজনের মুখ্য ভুমিকা ছিল স্পন্সর দের চেক নেয়া ও তাদের খুশি করা  । তারা ফোবানার মুল কনসেপ্টের বাইরে ছিলেন। তপন চৌধুরী, রিজিয়া পারভীন, বেবী নাজনীন, ফাহমিদা নবী, সামিনা চৌধুরী ও শুভ্র দেবসহ জনপ্রিয় শিল্পীদের গান শুনতে ৩০ ডলার থেকে ১০০ ডলার দিয়ে টিকেট কেটে দূর-দূরান্ত থেকে নিউইয়র্কের বিশ্বখ্যাত অডিটরিয়াম নাসাউ কলিসিয়ামে গিয়েছিলেন বাংলাদেশি দর্শকেরা। কিন্তুস্পন্সরদের খুশি রাখতে গিয়ে আয়োজকদের ‘বাড়াবাড়ি’ ও কথিত ‘সাংগঠনিক’ কর্মকাণ্ডেই শেষ হয়েছে অনুষ্ঠানের অধিকাংশ সময়। সময় স্বল্পতার কারণে গান গাইতে না পেরে শিল্পীরা যেমন অখুশি হয়েছেন, তেমনি প্রিয় শিল্পীদের গান শুনতে না পেরে দর্শকেরা বাড়ি ফিরে গেছেন চরমহতাশা নিয়ে।এ ধরণের বিশৃঙ্খল ঘটনার মধ্য দিয়ে স্থানীয় সময় রবিবার নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডে শেষ হয়েছে ৩৩ বছরের ফোবানার ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত তিন দিনের ফোবানা সম্মেলন। দুদিনে অডিটরিয়ামের ভাড়া বাবদ গুনতে হয়েছে তিন লাখ ডলার। ব্যক্তিগত রেষারেষির কারণে একদিকে যেমন একই শহরে আরেকটি ফোবানা হয়েছে, তেমনি বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে শেষ হওয়ায় ভবিষ্যত ফোবানার কার্যক্রমও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।এবারের ৩৩তম ফোবানার আয়োজক ছিল নিউইয়র্কের নাট্য সংগঠন ড্রামা সার্কল। সবার সেরা হতে সংগঠনটি ভেন্যু হিসাবে বেঁছে নেয় নাসাউ কলিসিয়ামকে। এজন্য দুদিন অর্থাৎ দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনের ভাড়া বাবদ আয়োজকদের গুনতে হয় ৩ লাখ ডলার। নাট্য সংগঠন ড্রামা সার্কলের অনভিজ্ঞতা এবং দুর্বল প্রচারের কারণে প্রায় ১৫ হাজার আসন ক্ষমতার মিলনায়তনে দ্বিতীয় দিনে দুই হাজার দর্শক অতিক্রম করেনি। তৃতীয় দিনে তপন চৌধুরী, রিজিয়া পারভীন, বেবী নাজনীন, ফাহমিদা নবী, সামিনা চৌধুরী ও শুভ্র দেবসহ জনপ্রিয় শিল্পীদের কথা প্রচার করায় হাজার তিনেক দর্শকের উপস্থিতি দেখা গেছে। কিন্তু তাদেরও হতাশ করেছেন আয়োজকরা। একটি দেশাত্মবোধক গান গাইবার পর জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী বেবী নাজনীনকে মঞ্চ ছাড়তে বলায় তিনি ক্ষুব্ধ হন। বেবী নাজনীন মঞ্চ ছাড়ার আগেই মাইক হাতে নেন তপন চৌধুরী। তার একটি গান শেষ না হতেই মঞ্চে এসে তার সঙ্গে গলা মেলান আরেক জনপ্রিয় শিল্পী রিজিয়া পারভীন। এর আগে মঞ্চে একটি গান গেয়ে বিদায় নেন শুভ্র দেব। প্রয়াত শিল্পী মাহমুদুন্নবীকে সম্মাননা জানায় ড্রামা সার্কল। তার দুই মেয়ে জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ফাহমিদা নবী ও সামিনা চৌধুরী সময় স্বল্পতার কারণে খালি গলায় দুই লাইন গেয়ে মঞ্চ থেকে বিদায় নেন। অথচ ফোবানা সম্মেলনের টাইটেল স্পন্সর হওয়ায় টাউন এমডি পক্ষের কর্ণধার রাহাত আল মুক্তাদিরের কবিতা এবং তার ছোট ভাই ফুয়াদ ও বন্ধুরা ব্যান্ডের গান গেয়ে পার করেছেন পুরো একটি ঘণ্টা। এসব নিয়ে দর্শকেরা ক্ষুব্ধ হন। শুরু করেন চেঁচামেচি।এদিকে, কলকাতার জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তীকে একটি এবং পরে অর্ধেক বাংলা গান গেয়ে মঞ্চ থেকে বিদায় নেন তিনি। অথচ কলকাতার এই নারী শিল্পীকে সম্মানী দিতে হয়েছে আট হাজার ডলার। বাংলাদেশের জনপ্রিয় দুইজন শিল্পী অভিযোগ করেছেন, তাদের বেলায় প্রাপ্য সম্মানী দেওয়া হয়নি। অনুষ্ঠানের সময় যখন শেষের পথে, দর্শকেরা যখন প্রিয় শিল্পীদের গান শোনার জন্য অধীর অপেক্ষায় তখনই মঞ্চে আসেন ফোবানা কর্মকর্তারা। তারা নতুন কমিটি এবং পরবর্তী ফোবানা সম্মেলনের কথা ঘোষণা করেন।পরবর্তি ফোবানার হোষ্ট বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব র্নথ টেক্সাস , তাদের উচিত হবে ৩৩ তম ফোবানার ভুল গুলি ফেলে অতীতের ২০১৮ আটলান্টা ও ২০১৭ মায়ামী ফোবানার আলোকে সাজানো । বড় ভেনু হলেই অনুষ্টান সফল হয় না । সফল ও দক্ষ টিম গ্রহন করতে হয় , নানান মত মানুষিকতা ও প্রফেশনালদের সম্পৃক্ত করতে হয় । মিডিয়া টিম হতে হয়ে অরিজিনাল মিডিয়া সংশ্লিষ্টদের নিয়ে । ৩৩ তম ফোবানার মিডিয়া কমিটি ছিল মিডিয়ার লোকজন ছাড়া । যে সকল কাগজ মিডিয়া পাটনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করে তাদের রাখতে হয় । মনে রাখতে হবে,ফোবানা কোন বিজনেস কনেভেনশন নয় । বিজনেসম্যান দের অধিক প্রাধান্য ফোবানার মুল থিমকে্ই নষ্ট করে । এবারের অদ্ক্ষ আবীর আলমগীর যে দশটি নতুন কনসেপ্ট ফোবানায় যোগ করেছিলেন তা বাস্তবায়নে তার যোগ্যতা ছিল না। ২০২১ সালের ওয়াশিংটনের বাগদিস সংগঠকেও এখন থেকেই কাজে নেমে পড়তে হবে । নিউ ইয়র্ক এর ৩৩ তম ফোবানা ফোবানার ইতিহাসে নিউ ইয়কের জন্য বিরাট ক্ষত হিসাবে দাগ কাটবে ।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close