উপচে পরা দর্শক সমাগমে ভাষা প্রেমের এক উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করলো ছান্দসিকের আবৃত্তি উৎসব
বিলেতের আবৃত্তি অঙ্গনের সুপরিচিত মুখ, আবৃত্তিশিল্পী মুনিরা পারভীনের স্বপ্ন থেকে পথচলা শুরু ছান্দসিকের এবং শুরু থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংস্কৃতি অঙ্গনে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়। তম্মধ্যে “হাজার বছরের বাংলা কবিতা: উল্লাসে সংকটে এবং “বীরাঙ্গনাদের অগ্নিভাষ্য” ছিলো ছান্দসিকের এযাবতকালের উল্লেখযোগ্য ও দর্শক নন্দিত উপস্থাপনা।
সুরমা রিপোর্ট
লণ্ডন, ২ সেপ্টম্বর – ‘ছন্দপ্রভা ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বপ্রাণে’ – এমন শ্লোগান নিয়ে লণ্ডনে আন্তর্জাতিক বাংলা আবৃত্তি উৎসব পালন করলো ছান্দসিক।
দীর্ঘ কর্মসূচী নিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর, রোববার পূর্ব লণ্ডনের ব্রাডি আর্ট সেণ্টারে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। নির্ধারিত সময়ের প্রায় ২ ঘণ্টা দেরী করে শুরু হলেও এই উৎসবে দর্শক-শ্রুতার উপস্থিতি ছিলো উপচে পরা। বিলেতের কর্মব্যস্ত জীবনে মাতৃভাষা বাংলায় কবিতা আবৃত্তি শোনার জন্য দর্শক-শ্রোতাদের এই বিশাল সমাগমকে অনেকে ভাষা প্রেমের উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে দেখছেন।
প্রদ্বীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে উদ্বোধনীর পর স্বাগত বক্তব্য রাখেন উৎসবের আহবায়ক আবৃত্তি শিল্পী মুনিরা পারভীন। উৎসব উদ্বোধনের কথা ছিলো বিশিষ্ট সাংবাদিক-সাহিত্যিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর। কিন্তু অসুস্থতার কারনে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। তবে সংক্ষিপ্ত ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তিনি উৎসবের সফলতা কামনা করেন এবং বিলেতে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক আবৃত্তি উৎসব আয়োজনের জন্য প্রশংসা করে আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।
১ সেপ্টেম্বর, রোববার পূর্ব লণ্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় বৃটেনে ছান্দসিকের এই প্রথম আন্তর্জাতিক বাংলা আবৃত্তি উৎসব। প্রথমে হলের বাইরে খোলা আকাশের নিচে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণার পর ব্রাডি সেন্টারের থিয়েটার রুমে শুরু হয় উৎসবের মূল পর্ব। শুরুতে বিলেতের অন্যতম তিন বিশিষ্ট মুক্তিযাদ্ধা ও সংগঠক যথাক্রমে খলিল কাজী, লোকমান হোসেন ও সুলতান শরীফকে মঞ্চ ডেকে নিয়ে সম্মান জানানো হয়। এ পর্বে ছান্দসিক সম্মাননা ২০১৯ প্রদান করা হয়। বিলেতে আবৃত্তিশিল্পে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বিশিষ্ট আবৃত্তিকার উদয় শঙ্কর দাশকে এই সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।
উৎসবে অতিথি আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে যোগদান করেন কোলকাতা থেকে মুনমুন মুখার্জি ও সুজাতা চৌধুরী, ঢাকা থেকে আহকাম উল্লাহ এবং আমেরিকা থেকে নজরুল কবির। তারা বিভিন্ন পর্বে একক আবৃত্তি উপস্থাপন করেন।
ছান্দসিকের দলীয় উপস্থাপনা “জাগরণের পংক্তিমালা” শীর্ষক পরিবেশনায় ৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রামকে বাণীবদ্ধ কথা ও কাব্য ঝংকারের মাধ্যমে তোলে ধরা হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন পর্বে আবৃত্তি অনুষ্ঠিত। এতে আগত অতিথি আবৃত্তি শিল্পী ছাড়াও বিলেতের খ্যাতিমান আবৃত্তি শিল্পীরা অংশ নেন। ছিলো আমন্ত্রিত অতিথিদের অনুভূতি প্রকাশ, ছান্দসিক সম্মাননা প্রদান ২০১৯, শিশুদের আবৃত্তি প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণ, বিলেতে বাঙালির চতুর্থ প্রজন্মের আবৃত্তি। এই ছোট্টমনিদের আবৃত্তি শুনে গোটা হল ভর্ত্তি দর্শক-শ্রুতা বিস্ময়ে করতালি মুখর হয়ে ওঠেন।
এই পর্বের আবৃত্তিতে অংশ নেয় তাজরিয়ান রহমান, নাশিতা নূর, আফরা খন্দকার। ছান্দসিকের এই আন্তর্জাতিক আবৃত্তি উদসবে বিভিন্ন পর্বে যারা অংশ গ্রহণ করেন তারা হলেন যথাক্রমে- উদয় শঙ্কর দাশ, তানজীনা নূর ই সিদ্দিকী, সৈয়দ রুম্মান, সোমা দাশ, মিছবাহ জামাল, মহুয়া চৌধুরী, মঈনুল ইসলাম মুকুল, সুস্মিতা সাবরিনা এনি, জেবতিক রাজীব, ড. আনোয়ারুল হক, কাজী রাহনুমা নূর, বুলবুল হাসান, সৈয়দা সায়মা আহমদ, জিয়াউর রহমান সাকলাইন, শহীদুল ইসলাম সাগর, সমর সাহা, আরফুমান চৌধুরী, শতরূপা চৌধুরী প্রমুখ।
উপস্থাপনায় ছিলেন ছড়াকার রেজওয়ান মারুফ। অনুষ্ঠানের শেষ কথায় ছিলেন আহবায়ক মুনিরা পারভীন।
উল্লেখ্য, বিলেতের আবৃত্তি অঙ্গনের সুপরিচিত মুখ, আবৃত্তিশিল্পী মুনিরা পারভীনের স্বপ্ন থেকে পথচলা শুরু ছান্দসিকের এবং শুরু থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংস্কৃতি অঙ্গনে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়। তম্মধ্যে “হাজার বছরের বাংলা কবিতা: উল্লাসে সংকটে এবং “বীরাঙ্গনাদের অগ্নিভাষ্য” ছিলো ছান্দসিকের এযাবতকালের উল্লেখযোগ্য ও দর্শক নন্দিত উপস্থাপনা।